দুর্ভাগ্যজনক বললেন জ্যোতিপ্রিয়
খাদ্য দফতরে দুর্নীতি, সিবিআই চান কল্যাণই
হাইকোর্ট গুড়াপ-কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দিয়ে রাজ্যের অস্বস্তি বাড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খাদ্য দফতরের দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চাইলেন তৃণমূলেরই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাইকোর্টে একটি মামলার সওয়াল করতে গিয়ে ওই আইনজীবী-সাংসদ বলেন, “খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দফতরের কয়েক জন অফিসারের জন্য নৈরাজ্য চলছে। অবিলম্বে সিবিআই-এর মতো কোনও স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে ওই বিভাগের কাজকর্মের তদন্ত করা উচিত। ওই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করা উচিত।”
তবে কল্যাণবাবু পরে দাবি করেছেন, তিনি সমগ্র খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের কথা বলেননি। বলেছেন খাদ্য দফতরের এক বিশেষ বিভাগের দুর্নীতির বিষয়ে। ঘটনা হল, এর আগেও কল্যাণবাবু রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আলিপুর আদালতে একটি মামলাকে কেন্দ্র করে কল্যাণবাবুর সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে বিচারককে এজলাস ছেড়ে চলে যেতে হয়। নগরোন্নয়ন দফতরের একটি মামলা নিয়েও কলকাতা হাইকোর্টে সওয়াল করেছিলেন কল্যাণবাবু। কিন্তু এ দিন তিনি যে ভাবে খাদ্য দফতরের মামলার বিষয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে সরব হলেন তা নজিরবিহীন বলেই মন্তব্য করেছেন সরকারি আইনজীবীরা।
কেবল আইনজীবীরাই নয়, তৃণমূলের ভিতরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীকে জানানোর জন্য খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ দিন আদালতে তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থ কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “কল্যাণবাবু যদি ওই কথা বলে থাকেন, তবে তা দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক।” তাঁর আরও দাবি, “আমিও চাই খাদ্য দফতরে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে যে কাণ্ডকারখানা হয়েছে, তার তদন্ত হোক। সেই তদন্ত আমরা করব। প্রয়োজনে বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রীদেরও টেনে আনব। আমরা সব বিষয়েই আইন মেনে চলব। যেখানে বিচারপতিরা কোনও নির্দেশ দেবেন তা-ও আমরা মেনে চলব। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে সব বিষয়েই আমাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।” কল্যাণবাবু পাল্টা বলেন, “উনি মন্ত্রী হিসাবে যে ভাবে ইচ্ছে বিষয়টি দেখতে পারেন। কিন্তু আমি পেশাদার হিসেবে মামলা লড়ছি। সামনে-পিছনে দেখছি না।”
খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কেন? সজল সাহা-সহ ৪১ জন আবেদনকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে জানান, দাজিলিং জেলার চা বাগান এলাকায় ২০০৬ সালে নতুন রেশন দোকান খোলার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। অনেক প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদন খতিয়ে দেখে তৎকালীন রাজ্য সরকার ৪১ জনের তালিকা তৈরি করে। কিন্তু সফল প্রার্থীরা লাইসেন্স পাওয়ার আগেই সরকার বদল হয়। নতুন সরকার এই সফল প্রার্থীদের লাইসেন্স দেয় না। আবেদনকারীরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট সফল প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনা করে লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর রাজ্য খাদ্য দফতর জানায়, বিবেচনা করে দেখা গিয়েছে, ওই এলাকায় ৪১টি রেশন দোকানের প্রয়োজন নেই। তা কমিয়ে ২১টি করা হচ্ছে। এর পরেই আবেদনকারীরা কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমানার মামলা করেন।
এ দিন সেই মামলার শুনানির সময় জানা যায়, দার্জিলিং জেলার সাব কন্ট্রোলারকে কলকাতায় খাদ্য দফতরের প্রধান কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়ছিল। তাঁকে ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে ভয় দেখিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়। আবেদনকারীদের অন্য আইনজীবী দেবব্রত সাহারায় আদালতে বলেন, সাব কন্ট্রোলার নিজেই জানিয়েছেন তাঁকে জোর করে লেখানো হয়েছে, ৪১টি রেশন দোকানের প্রয়োজন নেই। ২১টির বেশি দোকান খোলা হলে তা লাভজনক হবে না। দেবব্রতবাবু আদালতে বলেন, আদালতের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য এই ‘অপরাধমূলক কাজ’ করা হয়েছে। কল্যাণবাবু এই বিষয়টিকেই অপরাধমূলক কাজ বলে ব্যাখ্যা করে অভিযোগ করেন, গোটা খাদ্য দফতরে অরাজকতা চলছে। অবিলম্বে এই বিষয়ে স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, খাদ্য দফতরের প্রধান অফিসে যে ঘটনা ঘটেছে তা ফৌজদারি মামলার যোগ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.