ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চোখ মেলে রয়েছে গোপন ক্যামেরা। নিজের ঘরে বসে মনিটরে চোখ রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন স্বয়ং সুপার। ডাক্তার, নার্স থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সবাই তাই এখন তটস্থ কাটোয়া হাসপাতালে।
সম্প্রতি এই হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। জেলায় এখনও পর্যন্ত কাটোয়া হাসপাতালেই সিসিটিভি লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে হাসপাতাল পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ভাবে কাজ সামলানোর জন্য তাই প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়েছে।” |
মহিলা বিভাগের বাইরে সিসিটিভি।—নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় সময়েই রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে ডাক্তার-নার্সদের বচসা বেধে যায়। তার জেরে বেশ কয়েক বার হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু অভিযুক্তেরা অধরাই থেকে গিয়েছে। সেই কারণেই জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার সঙ্গে একটি বৈঠকে সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় হাসপাতালের সুরক্ষার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব দেয়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছিল। জেলা স্বাস্থ্য সমিতি থেকে তা অনুমোদন করা হয়েছে।” ১৪টি ক্যামেরা বসাতে খরচ হয়েছে এক লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। এখনও ১২টি ক্যামেরা লাগানো হয়ে গিয়েছে।
হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর পর থেকে চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রতিটি ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছেন। কর্মীরাও বেশ তটস্থ। রোগীর আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে নার্সদের ব্যবহারও আগের থেকে ভাল হয়েছে। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের ওয়ার্ডগুলি ছাড়াও ক্যামেরা লাগানো হয়েছে জরুরি বিভাগ, রোগী সহায়তা কেন্দ্রের সামনে। কাটোয়ার খাজুরডিহি গ্রামের বাসিন্দা সরমা রায় বলেন, “আমি প্রায়শয়ই হাসপাতালে আসি। ওই ক্যামেরা লাগানোর পর থেকে ডাক্তারেরা বেশ ভয়ে ভয়ে রয়েছেন।” হাসপাতালের এক চিকিৎসকের অবশ্য বক্তব্য, “ক্যামেরা লাগানোয় আমাদের সুবিধাই বেশি হয়েছে। আমাদের নামে অনেক মিথ্যা অভিযোগ জমা পড়ে। সেগুলির সুরাহা হবে।”
হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে দালালদের উৎপাতে ব্যতিব্যস্ত হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের। সুপার বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনেও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর চিন্তাভাবনা চলছে।” |