পাভলভ মানসিক হাসপাতাল
শৌচাগারের জলে তেষ্টা মেটাচ্ছেন মনোরোগীরা
মোট ৩৯০ জন রোগীর জন্য বরাদ্দ মাত্র দু’টি পানীয় জলের ফিল্টার! তার মধ্যে একটি ফিল্টার আবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের একতলায় নার্সদের ঘরে, আর একটি রাখা হয়েছে মহিলা ওয়ার্ডে। সেই ফিল্টারে অবশ্য অধিকাংশ সময়ে জল থাকে না। কারণ, জল ভরার কোনও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নেই। চৈত্রের দারুণ তাপে তেতে থাকা শৌচাগারের কল থেকে যে ফুটন্ত, অপরিশুদ্ধ জল বার হয়, সারাদিন সেই জলই পাভলভ মানসিক হাসপাতালের রোগীরা পান করেন!
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বুধবার হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এই ঘটনা দেখে স্তম্ভিত কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের উপদেষ্টা দামোদর সারেঙ্গী। তার সামনেই জল আর খাবার নিয়ে অভিযোগ জানান রোগীদের অনেকে। বেশ কিছু রোগীকে আঁজলা করে কল থেকে জল খেতে দেখেন তিনি নিজেও। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে জানতে চান দামোদর।
কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ, এই পাভলভেই ২০১২ সালে রাজ্যের সব মানসিক হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৪। বিগত ৫-৬ বছরে রাজ্যের কোনও মানসিক হাসপাতালে এক বছরে এত রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ ব্যাপারে আলাদা কমিটি তৈরি করে প্রত্যেকের মৃত্যুর কারণ জানার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই তদন্ত এখন চলছে। প্রাথমিক ভাবে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪ জনের অনেকেরই মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি ও পেটের রোগ। দূষিত জলের সঙ্গে পেটের রোগ ও অপুষ্টির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ফলে শৌচাগারের কল থেকে রোগীদের জল খাওয়ার বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনের গোচরে এসে যাওয়ার প্রমাদ গুনেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
পাভলভের চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, হাসপাতালে পুরুষ রোগীর সংখ্যা এই মুহূর্তে ১৯৮ জন। অথচ তাঁদের ওয়ার্ডে কোনও ফিল্টার রাখা নেই। একটা ফিল্টার রয়েছে মহিলা ওয়ার্ডে। রোগিণীর সংখ্যা এই মুহূর্তে ১৯২। ফলে এই গরমে ফিল্টারে একবার জল রাখা মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। অনেক সময়ে মানসিক রোগিণীদের কেউ ফিল্টারের কল খুলে রেখে দেয়। তাতেও জল পড়ে শেষ হয়ে যায়। সেই ফিল্টারে যে কেউ জল ভরবে, এমন লোক নেই। নীচে নার্সদের ঘর থেকে বারবার জল খেয়ে আসা সম্ভব নয়, রোগীরা সাহসও পান না।
তাঁদের কথায়, “কর্তৃপক্ষও ভ্রূক্ষেপহীন। ফলে অত রোগীর প্রত্যেকে শৌচাগারের কল থেকে জল খেয়ে আসে। সেই জল যে ট্যাঙ্ক থেকে আসে, তা নিয়মিত সাফ করার কোনও বালাই নেই। সেই জল কতটা দূষিত, সেই পরীক্ষাও কেউ কখনও করে দেখেননি। তবে হাসপাতালের রোগীরা বারবার আন্ত্রিকে আক্রান্ত হন।
পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারাও। এক শীর্ষকর্তার কথায়, “গত বছর থেকেই রাজ্যের প্রত্যেক মানসিক হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির তহবিলে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। পাভলভকে অসংখ্য বার সেই টাকা থেকে ফিল্টার কিনতে বলা হয়েছে। কিন্তু সুপারের কোনও হেলদোল নেই। বললেই বলেন, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নেই। ফিল্টার ধুয়ে-মুছে কেউ রোজ জল ভরতে পারবে না!”
সুপার রাঘবেশ মজুমদার কি সত্যিই এ রকম কথা বলেছেন? কেন রোগীদের পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করায় তাঁর অনীহা? সুপারের জবাব, “আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না। আমার বলার অধিকার নেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জিজ্ঞাসা করুন।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কী বক্তব্য? তাঁর কথায়, “অভিযোগটা দফতরের কর্তারা আমাকে জানিয়েছেন। হাসপাতালকে টাকা দেওয়া হয়েছে, অথচ সেই টাকায় তারা ফিল্টার কিনছেন না, এটা তো হতে পারে না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা কিন্তু জানিয়েছেন, পাভলভে রোগীদের প্রতি অমানবিকতার নজির আগেও রয়েছে। গত শীতেই পরিদর্শনে গিয়ে অফিসারদের নজরে এসেছিল রোগিণীদের ঘরে উত্তর দিকের সব জানলা হাট করে খোলা। হুহু করে ঠান্ডা বাতাস দিবারাত্র ঘরে ঢুকছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। রোগীদের উলঙ্গ করে রাখা, মাটিতে শোয়ানো, ঠান্ডায় চটি না-দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল পাভলভ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.