জাঁকজমক করে উদ্বোধনই সার! এক মাসে একটি রুগ্ণ শিশুও ভর্তি হতে পারল না ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)-এ। কী ভাবে ভর্তি হবে? এখনও ওই ইউনিটটিকে জীবাণুমুক্তই করা হয়নি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসেনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রয়োজনীয় সংখ্যায় নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পাঠায়নি স্বাস্থ্য দফতর। আর তার চেয়েও বড় কথা হল, যে চিকিৎসকদের উপরে এসএনসিইউ-টি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শন উপলক্ষে তাঁদেরও বদলি করে দেওয়া হয়েছে অন্য মেডিক্যাল কলেজে। ফলে বোধনেই বিসর্জনের বাজনা ন্যাশনালের এসএনসিইউ-এ।
এক মাস আগে বড়সড় ঘটা করে ন্যাশনালের এই ৪০ শয্যার এসএনসিইউ-এর উদ্বোধন হয়েছিল। কিন্তু গত এক মাসে সেখানে শিশু ভর্তির কোনও পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। খাঁ খাঁ করছে গোটা চত্বর। শুধু জ্বলজ্বল করছে ফলক।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পয়লা বৈশাখ উদ্বোধন হবে, এমনটাই ঠিক ছিল। স্বাস্থ্যকর্তারা তড়িঘড়ি তারিখটা এক মাস এগিয়ে আনেন। তাতেই বিপত্তি ঘটেছে। সুপার পার্থ প্রধান অবশ্য বিষয়টি মানতে চাননি। তিনি বলেন, “আমরা মানের সঙ্গে কোনও আপস করছি না বলেই সামান্য সময় লাগছে।
পূর্ত দফতরের সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। ওয়ার্ডটি জীবাণুমুক্ত করার কাজ অবিলম্বে শুরু হবে। বাদবাকি সব কিছু মোটামুটি প্রস্তুত।” |
হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা কিন্তু সুপারের কথায় কোনও সারবত্তা খুঁজে পাননি। তাঁদের প্রশ্ন, এসএনসিইউ-টি চালাবেন কারা? এমসিআই পরিদর্শনের জন্য চিকিৎসকদের কুমীরছানার মতো বিভিন্ন হাসপাতালে দেখানোর ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। যখন যে হাসপাতালে এমসিআই-এর পরিদর্শন থাকে, সেখানে উপচে পড়ে চিকিৎসক। আর যেখান থেকে তাঁদের তুলে আনা হয়, সেখানে চিকিৎসা শিকেয় ওঠার জোগাড়। ন্যাশনালের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগে ৭ জন সিনিয়র চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকেই অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কোথায় গিয়েছেন তাঁরা? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল এবং চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে এমসিআই পরিদর্শন উপলক্ষে তাঁদের সরানো হয়েছ। মজার ব্যাপার শিশু বিভাগের প্রধান যিনি, তিনিও বাদ পড়েননি। আর এসএনসিইউ-এর ইনচার্জ হিসেবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকেও।
রাজ্যে মা ও নবজাতকের মৃত্যু হার কমাতে টাস্ক ফোর্স গড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ন্যাশনাল সম্পর্কে টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পূর্ত দফতরের কিছু কাজ বাকি ছিল। তা হয়ে গিয়েছে। যে কোনও সময়ে ভর্তি শুরু হয়ে যাবে। এত দিন রাজ্যে তো কিছুই ছিল না। এখন তো তবু ধাপে ধাপে হচ্ছে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এসএনসিইউ-এর জন্য প্রয়োজনীয় অধিকাংশ সরঞ্জামই এখনও কেনা বাকি। কর্মীর ঘাটতিও কবে মিটবে কেউ জানে না। প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামো যদি না-ই থাকে, তা হলে তাড়াহুড়ো করে সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এসএনসইউ খোলা হল কেন? সরকারের ঘোষণা ছিল, এক বছরে ৪০টি এসএনসিইউ খোলা হবে। শুধু কি কাগজে-কলমে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য? এর কোনও উত্তর স্বাস্থ্যকর্তারা দিতে পারেননি। |