|
|
|
|
আর্থিক বছর শেষে অস্বস্তি |
বিল পড়েই, পশ্চিমে ফেরত গেল ২ কোটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করার পর অর্থ বরাদ্দ হতেই বেশ কিছুটা সময় গড়িয়ে যায়। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র জমা পড়ার পর তা খতিয়ে দেখে অর্থ মঞ্জুর হয়। কাজ শুরুর সবুজ সঙ্কেত মেলে। তারপর কাজ শুরু হয়। এই যখন পরিস্থিতি, তখন বরাদ্দ অর্থ ফেরত চলে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের অন্দরে। গত আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২ কোটি টাকা ফেরত চলে গিয়েছে বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। ৩১ মার্চের মধ্যে বিল পাশ হয়নি। তার জেরেই এই পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে ট্রেজারি অফিসের একাংশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ করছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, আধিকারিকেরা তৎপর হলে এমনটা হত না। বরাদ্দ অর্থ জেলা থেকে ফেরত চলে যেত না। এরমধ্যে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পের। যে বিল পাশ হওয়ারই কথা ছিল।
ওই সূত্রে খবর, এ ভাবে বরাদ্দ অর্থ ফেরত চলে যাওয়ার ঘটনায় নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়েছেন। কেন এমন ঘটনা ঘটল, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে তা জানতেও চান। বুঝিয়ে দেন, ঘটনাটি তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত। সময়ের কাজ সময় মতোই শেষ করা উচিত ছিল। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জেলাশাসক। চেষ্টা করেও বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারন) রজতকুমার সাইনিও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁর বক্তব্য, “তেমন কিছু হয়নি।” অন্যদিকে, ট্রেজারি অফিসার রাজীবলোচন দাস অধিকারীর বক্তব্য, “হিসেব চলছে। ঠিক কত টাকা ফেরত গিয়েছে, এখনই বলা যাবে না।” তাঁর দফতর এবং একাংশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ওঠা গড়িমসির অভিযোগ অবশ্য এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “যে সব কাজের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা রয়েছে, তার জন্য বরাদ্দ অর্থ কেন ফেরত গেল বুঝতে পারছি না। আগে থেকে তৎপর হলে এমনটা হত না।” তাঁর আক্ষেপ, “যে সব কাজের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়নি, তার বিল পাশ হল। অথচ, পরিকল্পনা করা রয়েছে, এমন বিল পাশ না- হয়ে পড়ে থাকল! বরাদ্দ অর্থ ফেরত চলে গেল। আমাদের সকলেরই উচিত, সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করা। না- হলে এমন ঘটনা আগামী দিনেও ঘটবে।”
বস্তুত, প্রায় ২ কোটি টাকা ফেরত চলে যাওয়ার ঘটনা ঘিরে গত ক’দিন ধরেই আলোচনা চলছে কালেক্টরেটে। প্রশাসনের এক সূত্রে দাবি, প্রতি আর্থিক বছর শেষেই এ ভাবে কিছু অর্থ ফেরত চলে যায়। বিশেষ করে, শেষ মুহুর্তে যে সব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয় এবং বিল জমা পড়ে, সেই সব প্রকল্পের অর্থ। তবে তা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও ২ কোটির টাকার আশেপাশে পৌঁছয়নি। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৭৬ লক্ষ টাকা ফেরত যাওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। এ নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন। কো- অর্ডিনেশন কমিটির জেলা সম্পাদক গঙ্গাধর বর্মণের বক্তব্য, “বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। প্রশাসনের তৎপরতার অভাব ছিল। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এটা হত না।” তাঁর কথায়, “কিছু বিল শেষ সময় এসে পৌঁছয়। কিন্তু, সব বিল তো নয়? এ ক্ষেত্রে সতর্ক এবং তৎপর হওয়া উচিত ছিল।” স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (পশ্চিমবঙ্গ) জেলা সম্পাদক সুব্রত সরকারের বক্তব্য, “ট্রেজারি অফিসের একাংশ আধিকারিক আগে থেকে সতর্ক হলে এ ভাবে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যেত না। এ ক্ষেত্রে তো কর্মীদের কোনও দোষ নেই।” তিনি মানছেন, “সরকার উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। স্বাভাবিক ভাবে বরাদ্দ অর্থ ফেরত গেলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না।” প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, যে অর্থ ফেরত গিয়েছে, তারমধ্যে আইটিআইয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ রয়েছে। কলেজের জন্য বরাদ্দ অর্থ রয়েছে। কিন্তু, কেন এমনটা হল, এ ক্ষেত্রে কী আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যেত না? প্রশ্নটা ঘুরছে প্রশাসনের অন্দরেই। |
|
|
|
|
|