|
|
|
|
আইনি শিবির |
হিন্দু বিবাহ আইনে তাঁরা কেন, প্রশ্ন তুললেন আদিবাসীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
তাঁরা আদিবাসী-মূলবাসী। তবে কেন তাঁদের হিন্দু বিবাহ আইন মেনে চলতে হবে? রবিবার ঝাড়গ্রামের এক আইনি সচেতনতা শিবিরে হাইকোর্টের বিচারপতিকে কাছে পেয়ে এমন প্রশ্ন তুললেন সাঁওতালরা।
ঝাড়গ্রাম শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকার একটি আদিবাসী ক্লাবের উদ্যোগে স্থানীয় বিরসা ফুটবল ময়দানে এ দিন ওই শিবিরের আয়োজন করা হয়। হাইকোর্টে যাঁর এজলাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা মামলা চলছে, সেই বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ছাড়াও ছিলেন হাইকোর্টের আর এক বিচারপতি অসীমকুমার রায়, রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য-সচিব মির দারাশিকো প্রমুখ। ঝাড়গ্রামের কুঁয়ার হেমব্রম নামে এক ব্যক্তি বিচারকদের প্রশ্ন করেন, “সাঁওতাল সমাজের সালিশি সভাকে অবৈধ বলছেন। কিন্তু আপনারা তো জানেন সাঁওতালরা হিন্দু নয়, তবু কেন হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী আদালতে আমাদের বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়?” |
 |
মঞ্চে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
জবাবে বিচারপতি অসীমকুমার রায় বলেন, “এই নিয়ে আপনারা বিভিন্ন স্তরে তর্ক-বিতর্ক করতে পারেন। আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকসভা ও বিধানসভায় আইন পরিবর্তনের দাবি করতে পারেন। আমি বিচারপতি হিসেবে আইনের সীমার মধ্যেই কথা বলব।” তারপর বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার আরও বলেন, “রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজ সংক্রান্ত মামলায় শেষ পর্যন্ত সত্তরের দশকে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ব্রাহ্মরা হিন্দু। বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনরা ব্যাপক অর্থে হিন্দুদের মধ্যেই পড়েন।”
সাঁওতাল সমাজের সর্বোচ্চ সামাজিক প্রধান ‘দিশম মাঝি’ নিত্যানন্দ হেমব্রম পাল্টা বলেন, “সাত হাজার বছর আগে থেকে সাঁওতালদের সামাজিক রীতিনীতি চলে আসছে। তার অনেক পরে হিন্দু আইন প্রণয়ন হয়েছে। যুক্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার। বিবাহ সংক্রান্ত সালিশিতে আমাদের সমাজে এখনও পর্যন্ত কোনও বধূ নির্যাতন বা বধূ হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ঐতিহ্য পরম্পরা আমাদের ভাল করছে, নাকি ক্ষতি করছে সেটা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।” নিত্যানন্দ হেমব্রম অবশ্য মেনে নেন, “কুসংস্কারের সমস্যা হটাতে গেলে অশিক্ষাকে আগে দূর করতে হবে।” তিনি জানান, অশিক্ষার ফলে ডাইনির মতো কুপ্রথা রয়েছে। তাঁর পিতামহ ডাইন ভুতের জেরে চার বার ঠাঁই-নাড়া হয়েছিলেন। নিত্যানন্দবাবুর কথায়, “বাবা ও কাকা শিক্ষিত হওয়ার পর আর ঠাঁই-নাড়া হননি।” বিচারপতি অসীমকুমার রায় আদিবাসী সমাজের ডাইনি প্রথা, সালিশি সভা ও বাল্য বিবাহের মতো কুপ্রথাগুলি আইন বিরুদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে সতর্ক করেন। গ্রামে গ্রামে ‘আইনি পরিষেবা কেন্দ্র’ খোলা হচ্ছে বলে জানান অসীমবাবু। |
|
|
 |
|
|