রেকর্ড বইয়ের কিছু শুকনো তথ্য, দেশজ মিডিয়ার তীব্র শ্লেষ, নাইট সংসারে ব্যক্তির সঙ্গে সমষ্টির লক্ষ্যকে যে এমন অদৃশ্য বন্ধনে বেঁধে দেবে, কে জানত!
টেক ওয়ান: বিকেল সাড়ে চারটে। সাড়ে তিন ঘণ্টার নেটে প্রবল রগড়ানি পর্বের পর সাংবাদিক সম্মেলন করতে ঢুকেছেন জাক কালিস। দরদরিয়ে ঘামছেন। ‘পিচ কেমন’, ‘বিপক্ষ কতটা ভাল’ জাতীয় রুটিন প্রশ্নের প্রথাগত উত্তর দিতে দিতে কোথায় নিজেকে একটু গুছিয়ে নেবেন, তার বদলে শুরুতেই বেয়াড়া সাংবাদিকের বেমক্কা বাউন্সার।
জয়পুরে কেকেআর আসে আর হারে। আইপিএল ফাইভে চ্যাম্পিয়ন হলেন, কিন্তু দ্রাবিড়ের রাজস্থানকে এখানে হারাতে পারেননি। দ্রাবিড় সোমবারও থাকবেন, পারবেন এ বার?
উত্তরে কয়েক সেকেন্ড চুপ। তার পর কাঁধ ঝাঁকিয়ে কালিস, “জানি। আইপিএল ফাইভেও পারিনি। কিন্তু গত বার আমরা প্রথম ম্যাচটা হেরেছিলাম। এ বার উল্টোটা হয়েছে। জয়পুরের রেকর্ড তাই পাল্টাবে না, কী ভাবে বলছেন? আমাদের কনফিডেন্স এ বার অন্য রকম। ওটাই আসল।” |
সারমর্ম: দেশের মাঠে চারটে আইপিএলের তিনটেতে জয়পুরে হার। নাইটদের লক্ষ্য তাই ভাগ্যবদল।
টেক টু: কানফাটানো আওয়াজ। বলটা করে ফলো থ্রু শেষ করার সময় পেলেন না সামি আহমেদ। বলটা মুহূর্তে আরসিএ-র সুইমিং পুলে তলিয়ে গেল। দেখে সংস্থার এক কর্তার রসিকতা, ‘যাক, বিয়ের পর ব্যাটিংটা ফিরেছে!’ ইউসুফ পাঠান নির্বিকার। যাঁর জার্সির নম্বর নিয়ে জল্পনা ততক্ষণে ফুলকি নয়, দাবানলের পর্যায়ে। ম্যাচে পিঠে লেখা থাকছে ‘৯৯৯’। ব্যাপার কী? সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী, ‘৯’ নম্বরটা শুভ। তা হলে...
সারমর্ম: আন্দাজ ঠিক। জাতীয় ক্রিকেটের মঞ্চে ফেরার মরিয়া চেষ্টা। তাই পুরনো ‘২৮’ নম্বর ছেড়ে নতুন ‘নাম্বার কম্বিনেশন’। লক্ষ্যভাগ্যবদল।
প্রেক্ষাপট এক, সোমবারের রাজস্থান ম্যাচ। ‘দেশ’ এক, কেকেআর। দুই কাহিনির শিরোনামও এক, ভাগ্যবদল। তফাতের মধ্যে কালিস শুধু সমষ্টির প্রতিভূ। ইউসুফ ব্যক্তির।
আজ পর্যন্ত চেন্নাই সুপার কিংস ছাড়া নিজের পাড়ায় নাইটদের বিরুদ্ধে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ‘মস্তানি’ দেখিয়ে থাকে, সেটা রাজস্থান রয়্যালস। অধিনায়কের নাম শেন ওয়ার্ন হোক বা রাহুল দ্রাবিড় কেকেআর ম্যাচে ‘হাল্লা বোল’ গর্জন শুনেই তাঁরা মাঠ ছাড়তে অভ্যস্ত। জয়ের সংখ্যাটা তো রাজস্থানের দিকে চারে তিন। কেকেআরের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরেও অজ্ঞাতকুলশীল অঙ্কিত চহ্বান আর অমিত সিংহ মিলে নাইটদের সাড়ে বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিলেন। এর পর কাটা রেকর্ড বাজা স্বাভাবিক। কালিস-গম্ভীরের ঝাঁকুনি দিয়ে সেটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার বাড়তি চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়াও স্বাভাবিক। আর নাইট অধিনায়ক যে ভাবে এ নেট-ও নেট দৌড়ে বালাজিদের ক্লাস বসালেন, দেখে মনে হল সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামের যন্ত্রণার ইতিহাস টানার কোনও ইচ্ছে নেই।
ইউসুফেরও তাই। গত তিন বছরে সিনিয়র পাঠানকে নিয়ে কম ঝড় ওঠেনি আইপিএলে। গম্ভীরকে প্রায় প্রত্যেকটা সাংবাদিক সম্মেলনে শুনতে হয়েছে, ‘ওর ফর্ম নেই, একটা ম্যাচ জেতায় না, তবু কেন?’ ইউসুফ এ বার কেকেআর শিবিরে ঢুকেই পুরনো পাল্টে নতুন নম্বর সমেত জার্সির ‘অর্ডার’ দিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন ‘৯’ নম্বর, যা শুভ। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ওটা তত দিনে মনোজ তিওয়ারির সম্পত্তি। পরে ভেবেচিন্তে ‘৯৯’ চাইলেন, কিন্তু সেটাও নেই। মালিক আর এক সতীর্থ। ভাগ্যবদলের চেষ্টায় ইউসুফ এরপর এতটাই মরিয়া হয়ে পড়েন যে, নিজেই শেষ পর্যন্ত বেছে ফেলেন এই অদ্ভুত কম্বিনেশন। ‘৯’ হয়নি, ‘৯৯৯’ তো হল। ভাগ্য বদলালে, বদলাবে তিন গুণ!
ইউসুফের কী হবে, জানতে অপেক্ষা দু’মাস। নাইটদের অশ্বমেধের ঘোড়া মরু-শহরে ছুটবে কি না, জানতে অপেক্ষা চব্বিশ ঘণ্টার। তবে রাজস্থান ম্যাচে সাফল্যের বীজমন্ত্রের জন্য অপেক্ষার দরকার নেই, ওটা বাছা শেষ। পাঁচ অক্ষরের শব্দ, ‘কনফিডেন্স’। যার সামনে দিল্লির বিরুদ্ধে রাজস্থানে দুর্ধর্ষ জয়, রয়্যালসদের ঝাড়বাতির শৌর্য বাড়িয়ে শেন ওয়াটসনের প্র্যাকটিসে নেমে পড়া বিশেষ পাত্তা পাচ্ছে না। বরং ‘ওয়াটো’-র ওষুধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুনীল নারিন তো বটেই, সম্ভব হলে সঙ্গে সচিত্র সেনানায়কেকেও লেলিয়ে দেওয়া। সেক্ষেত্রে হয়তো লি বসবেন। উইকেট থেকে ইডেনের মতো টার্ন পাওয়া যাবে না জেনেও এই ব্যবস্থা ভাবা হচ্ছে, কারণ নারিন-সেনানায়কে নাকি যে কোনও উইকেটে বিপক্ষের ‘ফিয়ার-ফ্যাক্টর’।
খুব সহজে, আজ সোমবার টুকরো-টুকরো বেশ কয়েকটা যুদ্ধ দেখতে চলেছে রাজস্থান। নির্বাক যোদ্ধা গম্ভীর বনাম দ্রাবিড়ীয় সঙ্কল্প। আগুনে ওয়াটসন বনাম ধূর্ত নারিন। বিবাহ-উত্তর ইউসুফ বনাম ভাগ্যদেবতা। শাহরুখ বনাম শিল্পা। মরু-শহরের পরিচিত ললাটলিখন বনাম কেকেআর।
জয়পুর জমজমাট। |