সম্পাদকীয় ২...
গণতন্ত্রের দাবি
ণিপুর রাজ্যে অগণিত ‘সংঘর্ষ-মৃত্যু’র ঘটনার মধ্য হইতে নমুনা হিসাবে ছয়টি ঘটনাকে বাছিয়া লইয়া সুপ্রিম কোর্ট তাহার নিযুক্ত তিন সদস্যের এক কমিটিকে তদন্ত করিয়া রিপোর্ট পেশের যে দায়িত্ব দেয়, সেই রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে জমা পড়িয়াছে। দেখা যাইতেছে, ছয়টিই ছিল ‘ভুয়া সংঘর্ষ’। আগে হত্যা করিয়া পরে সংঘর্ষের গল্প সাজানো হইয়াছে। নিহতেরা ছিলেন নিরীহ মানুষ, কোনও জঙ্গি সংগঠনের সহিত তাঁহাদের কোনও সংস্রব ছিল না। বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন শুধু মণিপুরেই ভুয়া সংঘর্ষে গত ৩৩ বছরে দেড় হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ করিয়াছে। দোষী নিরাপত্তা কর্মীদের শাস্তির দাবিতে নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা আন্দোলনও করিয়া আসিতেছেন। সুপ্রিম কোর্টের তৎপরতা সেই সূত্রেই। স্পষ্টতই, পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীদের সংঘর্ষের গল্প সম্পর্কে জনমনে যে সংশয় ব্যাপ্ত ছিল, তাহা ভিত্তিহীন নয়।
এই রিপোর্ট ভারতরাষ্ট্রের পক্ষে এক গভীর কলঙ্কস্বরূপ। সত্য, মণিপুরে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য কিছু রাজ্যেও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সশস্ত্র হামলা, নাশকতা ও অন্তর্ঘাতে লিপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠীও একাধিক। এই জঙ্গিরা প্রায়শ ‘জলের মধ্যে মাছের মতো’ জনসাধারণের মধ্যে আত্মগোপন করিয়াও থাকে। কিন্তু তাই বলিয়া জঙ্গিদের ধরপাকড় করিতে গিয়া নিরীহ জনসাধারণের উপর অত্যাচার চালানো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক নির্যাতনে সন্দেহভাজনদের পঙ্গু করিয়া দেওয়া কিংবা ‘সংঘর্ষে মৃত্যু’র গল্প সাজাইয়া ঘাতক পুলিশদের আড়াল করার প্রয়াস সরাসরি মারাত্মক অপরাধ। এমনিতেই পুলিশ, আধা-সেনা এ দেশে ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের জের বহন করিয়া দমননীতি অনুসরণে সিদ্ধহস্ত। তাহার উপর যদি জঙ্গি দমনের অজুহাতে তাহাদের যথেচ্ছাচারকে আইনের নজরদারির ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়, তবে অসহায় জনসাধারণের পক্ষে প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা সুদূর হইয়া ওঠে। আর এখানেই সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগের বিষয়টি বিতর্কিত হইয়া ওঠে।
এই আইন অনুসারে জঙ্গি দমনে মোতায়েন বাহিনীর বিরুদ্ধে জনসাধারণকে নির্যাতন বা হত্যার অভিযোগ উঠিলেও দেশের প্রচলিত আইনে সাধারণ আদালতে তাহাদের বিচার হইবে না। অভিযোগ আদৌ বিচারযোগ্য কি না, তাহা খতাইয়া দেখা এবং বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার দায়ও সামরিক বাহিনীর। রাজ্যের পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করারও অধিকারী নয়। রাষ্ট্রের কাছে এই অতিরিক্ত খাতির পাওয়ার সুবাদেই জঙ্গি দমনে মোতায়েন আধা-সেনা বা নিরাপত্তা রক্ষীরা স্বেচ্ছাচারী হইয়া উঠিবার আশঙ্কা প্রবল। রাষ্ট্র বা তাহার প্রতিভূ সেনা, আধা-সেনা, নিরাপত্তা রক্ষীরা যে সন্ত্রাসবাদীদের দমন করিতে গিয়া নিজেরা সন্ত্রাসবাদীর মতো আচরণ করিতে পারে না, এই গণতান্ত্রিক সত্যটি বিস্মৃত হয়। ফলে জনসাধারণ বিরূপ হইয়া ওঠেন, রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার পাইবেন, এই আশা-ভরসা লুপ্ত হয়, রাষ্ট্রও কল্যাণকামী, দায়বদ্ধ ব্যবস্থা হিসাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়া ফেলে। ইহা বিপজ্জনক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.