আনন্দবাজারের হাওড়া-হুগলি পাতাটিতে প্রায় এমনই সব সংবাদ পড়ি, যাতে হুগলি জেলাকে একটি শিক্ষা সহায়তাবিহীন অনাথ-আতুর জেলা বলে মনে হয়। যেমন, হুগলি জেলায় ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য বই নিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত হাহাকার (১১-১) দূরদূরান্তের অনেক স্থানেই। কিন্তু সরকারি ঘোষণামাফিক ২ জানুয়ারি বই-দিবসে বেশির ভাগ এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই সমস্ত বই দেওয়া নাকি সমাপ্ত। এ দিকে আশপাশের দোকানে দিব্যি বিকোচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বই। ছাত্ররা গণিত বই পেল জানুয়ারির একেবারে শেষে। যে বই অগস্ট ২০১২-তে মুদ্রিত।
আবার পত্রিকা মাধ্যমে জানলাম, (৪-৩) হুগলি জেলায় মিড ডে মিলের বরাদ্দ টাকা অমিল। সত্যিই বিদ্যালয়ে অবশ্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের টানাটানি দেখলে মনে হয়, সংসার সামলাতে হিমশিম গৃহকর্তার মতো খাবি খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। গুনে গুনে দুটো করে চক, প্রায় সমস্ত ডাস্টার ছাত্রীদের নিজের টাকায় নিজের বাড়িতে কাপড়ের ভেতর স্পঞ্জ ভরে ‘হাতের কাজ’ হিসেবে তৈরি। বস্তুত আমরা যখন ভাঙা টালির চালবিশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এবড়োখেবড়ো মেঝেতে আসন পেতে পড়াশোনা করেছি, তখনও বিদ্যালয়ের এমন হাঘরে দশা দেখিনি। রামমোহন-রামকৃষ্ণ-শরৎচন্দ্রের জেলার এই হাঁড়ির হাল দেখে বেদনা বোধ করি।
কোন্নগর কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘এস এস সি-র সুপারিশ সত্ত্বেও নিয়োগপত্র হাতে পাচ্ছেন না যুবক’ (২১-১)। বই পেতে পেতে শিক্ষার্থীর পেরিয়ে যাচ্ছে জানুয়ারি মাস। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি নতুন বই কিনে স্টকে রেখেও ছাত্রকে তা দেওয়া হচ্ছে না। বেশ কিছু বিদ্যার্থীর কপালে জুটছে তিন বছরের পুরনো পাতাহীন বই। সরকারি বই ব্যতীতও যে বই কেনার টাকা সরকার ছাত্রকে দেয়, তা অভিভাবকের হাতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, দুই সেট পোশাকের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, কার্যত দেওয়া হচ্ছে বছরে মাত্র এক সেট। কখনও এক সেট জুতো দেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে যত্রতত্র শিক্ষার্থীকে দিয়ে, অভিভাবককে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক বিশ্বাসবশত তাঁরা বয়ান যাচাই করে সই করছেন না। প্রতি বছর প্রতি শ্রেণিতে প্রতি শিক্ষার্থীর ভর্তি বাবদ স্কুল নিচ্ছে কোথাও পাঁচশো, কোথাও সাড়ে ছশো টাকা, যা কিনা সম্পূর্ণ বেআইনি (৮-১-২০১৩ এবং ১০-৩-২০১৩)। অথচ প্রতিটি ইউনিট টেস্টে প্রতিটি ছাত্রী বিগত বছরগুলিতে বাড়ি থেকে নিজের পাতা নিজেই নিয়ে এসে এত দিন পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে এল দেখলাম স্বচক্ষে। এবং সেই সব স্ট্যাম্পবিহীন ব্যক্তিগত পাতাতেই নম্বর দেখে এলাম।
ন্যায়পরায়ণ শিক্ষককে এগুলি দেখেও লাঞ্ছনার ভয়ে চুপ করে থাকতে হবে। নয়তো প্রমাণ সংগ্রহের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে। যা আদৌ তাঁর কাজ নয়। কেন সরকারি দফতরগুলি এতটাই স্থবির? কেন তারা দেখবে না যে, জানুয়ারির শেষেও ছাত্র বই পেল না! পাশ-ফেল না-থাকা সত্ত্বেও ছাত্র ক্লাসে রয়ে গেল! ঝাড়া এক মাস পুরনো ক্লাসে থাকার পর তারা অতর্কিতে নতুন ক্লাসে উঠে গেল আর ভুলভাল হয়ে গেল বইয়ের পরিসংখ্যান!
মার্চের চোদ্দো তারিখেও নতুন রুটিন করে উঠতে পারেননি বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশ (৯-৩) সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার সঙ্গে পুরোদমে চলছে প্রতিটি ক্লাস। শিক্ষা দফতরের নতুন সুস্পষ্ট নির্দেশিকা বছরের শুরুতেই হস্তগত হওয়া সত্ত্বেও পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিরও সাড়ে চারটে পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে। চার পাঁচ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয়ে দু’জন অঙ্ক শিক্ষিকা থাকা সত্ত্বেও নবম শ্রেণিতে অঙ্ক করাচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষিকা। আর গণিতের শিক্ষিকাকে দেওয়া হচ্ছে বাধ্যতামূলক কম্পিউটার ক্লাস।
কলকাতার খুব কাছে বলেই হয়তো প্রদীপের নীচে এত অন্ধকার।
রঞ্জিতা ঘোষ। উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ ফর গার্লস, উত্তরপাড়া, হুগলি
|
পুলিশকে আর একটু শিক্ষিত করা জরুরি |
রাতের প্ল্যাটফর্মে সন্দেহের বশে রেল পুলিশের মার, হত যাত্রী’ (১৩-৩) সংবাদ থেকে জানা গেল যে, স্বামীর পদবি ‘ঘোষ’ এবং স্ত্রী তাঁর পদবি বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস’। অভিযোগ এই যে, দু’জনের দুটি ভিন্ন পদবি শুনে আর পি এফ পরিতোষ বিশ্বাস ‘ঘোষের বউয়ের পদবি কী করে বিশ্বাস হয়’ এমন উক্তি করেন এবং তাঁর মারধরের ফলে রেললাইনে পড়ে গিয়ে দিলীপ ঘোষ প্রাণ হারান।
স্বামী-স্ত্রী দু’জনের একই পদবি হতে হবে এমন আইন বর্তমানে নেই। (থাকা অনুচিত, অযৌক্তিক, মধ্যযুগীয় মানসিকতার প্রকাশ)। স্ত্রী ইচ্ছা করলে নিজের পদবি অপরিবর্তিত রাখতে পারেন। কিন্তু এই বিষয়টি বহু সরকারি কর্মচারী, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য স্থানের কর্মীরা জানেন না অথবা মানতে চান না।
বহু বিদ্যালয়ে বাবা বর্তমান থাকলে মাকে অভিভাবক হিসেবে মানতেও আপত্তি করে। বহু অফিসের স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন পদবি নিয়ে অনেকে (বিশেষত পুরুষ কর্মীরা) নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন। মনে হয়, সর্বস্তরের কর্মীদের এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার। ওই পুলিশ কর্মী (পরিতোষ বিশ্বাস) যদি জানতেন ভিন্ন পদবি আইনসিদ্ধ, তা হলে এমন আচরণ তিনি হয়তো করতেন না। অশিক্ষার ফলে তাঁর জানা ধারণায় আঘাত লাগাতে তিনি ‘নীতির রক্ষক’ হতে গিয়ে এমন অপকর্ম করেছেন।
স্বপন মজুমদার। হিন্দমোটর, হুগলি
|
বাঁকুড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী সৌধ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল দীর্ঘ দিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে ছিল। ওই হলে উৎপল দত্ত নাট্যচর্চা কেন্দ্র ছিল। শহরের কিছু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের দীর্ঘ ও ইতিবাচক লড়াইয়ের ফলে প্রশাসনিক উদ্যোগে এই হলটিকে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু জনসাধারণ এই হলটিতে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারছেন না। কারণ, এই হলটিতে বেশ কিছু লোক আস্তানা গেড়ে বাস করছে। হলটির সদ্ব্যবহারের বন্দোবস্ত হোক।
বীরেন সরকার। অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া |