পিএমও-র উদ্যোগে তৎপর মন্ত্রক
কোথায় কত অনাবাসী, জানেই না ভারত
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে আছেন ওঁরা। কিন্তু কে কোথায় কত জন আছেন, সে খবর ভারত সরকারই রাখে না! অনাবাসীদের ব্যাপারে নির্দিষ্ট তথ্য ও পরিসংখ্যান নেই কেন্দ্রের কাছে। এর আগে বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু অনাবাসী বিষয়ক মন্ত্রক তার উত্তর জোগাতে পারেনি। গোটা বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে অনাবাসী ভারতীয় মন্ত্রকের চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে নড়েচড়ে বসেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় (পিএমও)। শেষ পর্যন্ত বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তরফে অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রককে তিন মাসের মধ্যে সমীক্ষা সেরে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন এই পরিসংখ্যানের উপর এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, ৯ বছর আগে অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রক তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভারতের অর্থনীতি, কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বাড়ানোর কাজে কী ভাবে অনাবাসীদের সাহায্য পাওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও ব্লু-প্রিন্ট এখনও তৈরি হয়নি। অথচ অনাবাসীদের তালিকা হাতে থাকলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি, বিনিয়োগ টানা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা হতে পারে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, অতীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা অনেক সময়েই এ সব কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছেন। অন্যান্য দেশ তাদের বংশোদ্ভূতদের এ ভাবেই কাজে লাগায়। এ ব্যাপারে চিনের প্রসঙ্গ তুলছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। এক কর্তার মতে, বিপুল সংখ্যক চিনা বংশোদ্ভূত মানুষ বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন। এবং বেজিং জানে, কোন দেশে কত চিনা বংশোদ্ভূত আছেন। ওই অনাবাসীদের ব্যাপারে নাক গলিয়ে বেজিং দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জটিল করে না ঠিকই, কিন্তু তাদের সুকৌশলে কাজে লাগায়। বিনিয়োগ থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময় সব ব্যাপারেই তাদের কাজে লাগায় চিন।
ভারতের তরফে অনাবাসীদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে জানার চেষ্টা অবশ্য এই প্রথম নয়। গত তেরো বছর ধরেই এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। ২০০০ সালে বিশিষ্ট আইনজীবী এল এম সঙ্ঘভির নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল ‘হাই লেভেল কমিটি অন ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরা’। ওই কমিটি ২০০১ সালে যে রিপোর্ট তৈরি করে তাতে বলা হয়, ২ কোটির বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মূলত তিনটি সময়ে ভারতীয়রা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েন বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়। প্রথম বার, ১৮৩৪ সালের পরে ব্রিটিশরা দাসপ্রথার অবলুপ্তি ঘটালে আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ফিজি, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হয়। কাজের সন্ধানে লাখো ভারতীয় ঘর ছাড়েন এই দেশগুলির উদ্দেশে। দ্বিতীয় বার, বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। সফল পেশাদাররা ইউরোপ, আমেরিকার উদ্দেশে দলে দলে দেশ ছাড়েন। এর পর সত্তরের দশক। পশ্চিম এশিয়া এবং উপসাগরীয় এলাকায় তেলের খনি এনে দেয় ভারতীয়দের জন্য কাজের সুযোগ। এর চেয়ে খুব বেশি তথ্য সে সময় পাওয়া যায়নি।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি সে সময়ের সরকার। অনাবাসীদের কাছে টানার জন্য ২০০২ সালে শুরু হয় প্রবাসী ভারতীয় দিবস। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত সফল অনাবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের মাধ্যমে বিনিয়োগ টানার জন্যই বিদেশ মন্ত্রক এই অনুষ্ঠান শুরু করে। এ পর্যন্ত এর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ এসেওছে। এখন অনাবাসী বিষয়ক মন্ত্রক এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। অনাবাসীদের নিয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে কাজের জন্য ২০০৪ সালে মনমোহন সিংহের সরকার ক্ষমতায় এসে অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য পৃথক মন্ত্রক গঠন করে। গত বছর এই মন্ত্রক সংসদকে জানায়, প্রায় আড়াই কোটি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছড়িয়ে রয়েছেন ১৮৯টি দেশে। একই সঙ্গে জানানো হয়, এই সংখ্যা ‘আনুমানিক’। এ বিষয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক রিপোর্ট (যার অন্যতম, গ্লোবাল অর্গানাইজেশন অফ পিপল অফ ইন্ডিয়ান ওরিজিন)-এর হিসেব অনুযায়ী, ওই সংখ্যা আড়াই কোটির থেকে অনেক বেশি। সম্প্রতি অনাবাসী মন্ত্রকের তরফে বিদেশ মন্ত্রককে জানানো হয়, সুনির্দিষ্ট ভাবে এই সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ অনাবাসী ভারতীয় এবং তাঁরা যে দেশে বাস করছেন সমীক্ষা করে বিষয়টি জানার ব্যাপারটি বেশ ‘স্পর্শকাতর’। বিদেশ মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, সরকারের নীতি নির্ধারণের জন্য এবং বিনিয়োগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে এই তথ্য জানা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে।
রাষ্ট্র এবং তার অনাবাসী বংশোদ্ভূতদের নিয়ে গত তিরিশ বছর ধরে কাজ করছেন লতা ভরদ্বরাজন। সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপিকার কথায়, “কোনও দেশের বংশোদ্ভূতদের অন্য দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে গণনা করার বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। কারণ এ ব্যাপারে অন্য দেশের সমীক্ষার উপর নির্ভর করতে হয়। তা ছাড়া যাঁরা বহু দিন আগে ‘ভারতীয়ত্ব’ বর্জন করে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন, সেই সব ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের আলাদা করে খোঁজ পাওয়াও শক্ত।” তাঁর মতে, নিউজিল্যান্ডের গভর্নর স্যার আনন্দ সত্যানন্দ অথবা ত্রিনিদাদ টোব্যাগোর প্রেসিডেন্ট-এর মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা যথেষ্টই পরিচিত। কিন্তু ততটা পরিচিত বা বিখ্যাত যাঁরা নন, এমন লাখ লাখ মানুষকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়াটি সত্যিই কঠিন। এই ‘কঠিন’ কাজটি চিন স্বচ্ছন্দে করেছে বলেই জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা। অন্য বহু বিষয়ের মতো এ ক্ষেত্রেও চিনা কৌশলটি ঠিক যে কী, তা এখনও পর্যন্ত অজানা রয়ে গিয়েছে। নয়াদিল্লি নতুন কোনও পথ তৈরি করতে পারে কিনা, এখন সেটাই দেখার।


First Pge| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.