|
|
|
|
ট্রেন থামাতে টানা দুই কিলোমিটার দৌড়ে যান মেঘলাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি |
চোখে দেখেননি। কিন্তু শুনেছিলেন জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার কথা। এ ক্ষেত্রেও তেমনই কিছু ঘটতে চলেছে বুঝে আর দেরি না করেই উর্ধ্বশ্বাসে রেল লাইন ধরে, অসমর্থ শরীরে ছুটেছিলেন দু’কিলোমিটার দূরের স্টেশনের দিকে। যে করেই হোক ট্রেন স্টেশন ছাড়ার আগে সেটিকে থামাতে হবে!
আজ দুপুরে চেগরো স্টেশনে বসে অনেকটা ঘোরের মধ্যেই কথাগুলি বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ মেঘলাল মাহাতো। পেশায় রেলের কি-ম্যান। রাত থাকতে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়েছিলেন রেলের লাইন পরীক্ষা করতে। মেঘলালের কথায়, “তখন সবে ভোর হচ্ছে। লাইন পরীক্ষা করতে গিয়ে আবছা আলোয় দেখি, আপ লাইনের তলায় ছোট সিলিণ্ডারের মতো কিছু একটা আটকানো রয়েছে।” সেটি কী তা ভাল করে দেখতে গিয়ে মেঘলাল খেয়াল করেন সিলিণ্ডারটি লাইনের সঙ্গে আটকানো রয়েছে। তার সঙ্গে লাগানো তার চলে গিয়েছে মাটির তলা দিয়ে।
মেঘলালের কথায়, “দীর্ঘদিন কি-ম্যানের কাজ করছি। চোঙার মতো ওই ধরনের জিনিস লাইনের সঙ্গে আটকে থাকার কথা নয়। এখানে মাওবাদীদের উপদ্রব রয়েছে। দুই-আড়াই বছর আগে একবার মাওবাদীরা বাংলাতে ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক লোক মারা যায়। নিশ্চিত ছিলাম না, কিন্তু মনে হয়েছিল লাইন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য হয়তো বোমাই রেখে দেওয়া হয়েছে। বিপদ অনুমান করেই দৌড়তে শুরু করি স্টেশনের দিকে।” ঘটনাস্থল থেকে দু’ কিলোমিটার দূরে চেগরো হল্ট স্টেশন। দাঁড়িয়ে দম নিলে পাছে দেরি হয়ে যায় তাই দু’কিলোমিটার কোথাও না থেমে টানা দৌড়তে থাকেন মেঘলাল। সঙ্গে মোবাইল ফোনও ছিল না যে কাউকে খবর দেবেন। হাঁফাতে হাঁফাতে গিয়ে আগে চেগরো স্টেশনে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের চালককে ট্রেন চালু না করতে অনুরোধ করেন মেঘরাজ। স্টেশন মাস্টারকে সব কথা খুলে বলেন তিনি। ধানবাদের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুধীর কুমার বলেন, “ওই কি-ম্যানের কাছে খবর পাওয়ার পরেই ওই লাইন ধরে চলাচলকারী আপ ও ডাউন লাইনের সব ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। ওঁর জন্যই দুর্ঘটনা এড়ানো গেল। আমরা মেঘলালকে বিশেষ পুরস্কার দেব।” |
|
|
|
|
|