ফের ভারত-চিন যৌথ মহড়া
মমতার প্রশংসায় সেনাপ্রধান, অনড় জমি প্রশ্নে
ব্যারাকপুরে এক অনুষ্ঠানে এসে রবিবার রাজ্য সরকারের, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিক্রম সিংহ। কিন্তু গঙ্গার সৌন্দর্যায়ন নিয়ে রাজ্য সরকার যে সেনাবাহিনীর কাছে জমি চেয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও আশার বার্তা মিলল না তাঁর কাছ থেকে। বরং বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল তাঁর বক্তব্যে। সেনাপ্রধান হিসেবে এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় কলকাতা সফর। তিন দিনের সফর সেরে দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে জেনারেল সিংহ এ দিন জানান, এ বছর ফের যৌথ সেনা মহড়ার আয়োজন করবে ভারত ও চিন।
প্রাক্তন সেনাকর্মীদের অভাব-অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ব্যারাকপুরে এক র্যালির আয়োজন করা হয়েছিল এ দিন। সেখানে সেনাপ্রধান জানান, পেনশন নিয়ে প্রাক্তনদের অভিযোগ শীঘ্র মেটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রত্যেককে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এ রাজ্যে আরও ৪টি পলিক্লিনিক তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি করা হবে বৃদ্ধাবাস। বাড়ানো হবে সুলভ মূল্যের ক্যান্টিনের সুযোগ-সুবিধাও। এই সবের সূত্রেই জেনারেল সিংহ বলেন, “এ রাজ্যের সরকার আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। আমরা খুশি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে সেনাপ্রধান যোগ করেন, “ওঁর হৃদয়ে আমাদের জন্য জায়গা রয়েছে। উনি ভাবেন।”
প্রয়াত সেনাকর্মীর স্ত্রী শুকতারাকে আশ্বাস। ব্যারাকপুরে। —নিজস্ব চিত্র
যদিও গঙ্গার দু’পাড়ের সৌন্দর্যায়নের জন্য রাজ্য সরকারকে জমি দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলা তোলা হলে সেনাপ্রাধান বলেন, “আমরা এ নিয়ে রুল বুক মেনে চলব।” এতে বিষয়টি যে শুধু সরকারি নিয়মের গণ্ডিতেই বাধা রইল তা নয়, অনিশ্চিতও হয়ে পড়ল। কারণ সেনাবাহিনীর হাতে থাকা জমি এ ভাবে রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার সংস্থান নেই। বিশেষ করে জমিটি যখন পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরের খুব কাছেই।
ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে এ দিন হাজির হয়েছিলেন অন্তত ১২ হাজার প্রাক্তন সেনা। অনেক অভিযোগ জমে ছিল তাঁদের। মাঠে স্টল করে বিভিন্ন দফতরের কর্মী-অফিসার বসে ছিলেন। সেখান থেকেই অনেক অভিযোগ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, “আপনাদের খুশি করতে পারলেই ভারতীয় সেনারা খুশি থাকবে। সেটারই চেষ্টা করছি আমরা।” প্রাক্তন সেনাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের মধ্যে সেনাপ্রধানকে দেখা গেল কিছুটা ভিন্ন মেজাজে। অনুষ্ঠান মঞ্চের ডান দিকে একটি বড় সামিয়ানার তলায় বসে ছিলেন শুকতারা বিবি। স্বামীর মৃত্যুর পর কোনও সাহায্য পাননি তিনি। ছেলেকে পড়াতেও পারছেন না। সেনাপ্রধানকে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। কাঁদতে দেখে সেনাপ্রধানই এগিয়ে যান তাঁর দিকে। সহানুভূতির সঙ্গে তাঁর হাত ধরে বলেন, “সেনার বাড়ির লোকজনের চোখের জল থাকতে নেই। বাবারা কী মেয়ের জল দেখতে পারে?” মন দিয়ে তাঁর সব কথা শুনে সেনাপ্রধান বললেন, “স্থানীয় সেনা ছাউনি থেকেই তাঁর সব ব্যবস্থা করা হবে।” তার পরেও দিলেন নিজের ফোন নম্বর। বললেন, “প্রয়োজন হলে ফোন করবেন। আপনাদের সবার জন্য আমি আছি।”
জেনারেল সিংহের সফরের আর একটি পর্ব ছিল সামরিক বৈঠকের। ফোর্ট উইলিয়ামে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে চিন সীমান্তে পরিকাঠামো নির্মাণ, যুদ্ধ-পরিস্থিতির জন্য জওয়ানদের প্রস্তুত রাখা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তিনি। মার্চের শেষে দিল্লি ঘুরে গিয়েছেন চিনা সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিউ জিয়াংগুও। গত সপ্তাহে কলকাতা এসেছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া। তার পরই সেনাপ্রধানের এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছরে ভারত-চিন সম্পর্কে কিছুটা শীতল ভাব এসেছে। এখন আবার সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরাতে চাইছে দু’দেশই। চার বছর বন্ধ থাকার পর ভারত-চিন যৌথ সেনা মহড়ার উদ্যোগ সেই লক্ষ্যেই। জেনারেল সিংহ এ ব্যাপারে দু’দেশের সম্মতির কথা জানালেও দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।


First Pge| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.