দাম চড়া, জমছে না সেলের বাজার
ংরেজি মাসের প্রথম শনি-রবিবারের উপর ভরসা করেছিলেন চৈত্র সেলের কারবারিরা। এত দিন পর্যন্ত গ্রামীণ ক্রেতাদের উপর নির্ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল চৈত্র সেলের বিকিকিনি। রাস্তার ধারে প্লাস্টিক বিছিয়ে পসরা সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ীরা ছুটির দিনে বাজার জমে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। ভেবেছিলেন, মাস মাইনে হাতে পেয়ে শহুরে ক্রেতারা বাজারমুখো হবেন। কিন্তু সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে ব্যবসায়ীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হল না। নবদ্বীপের রাধাবাজার পার্কের সেলের এক দোকানদার মঙ্গল রায় বলেন, “আমাদের হাল বেশ খারাপ। পুরসভার কথা মতো পার্কের মধ্যে দোকান নিয়েছি। কিন্তু বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না। পার্কের বাইরের দোকানদারদের কিছুটা অবশ্য ক্রেতা জুটছে।” নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রীর সম্পাদক গোকুল বিশ্বাস বলেন, “কৃষ্ণনগর শহরে খানিকটা বাজার জমলেও সামগ্রিকভাবে জেলায় সেলের বাজারের হাল খারাপ।”
পূর্বস্থলী থেকে নবদ্বীপে চৈত্রসেলের কেনাকাটা করতে এসে রীতিমতো আফসোস করছিলেন প্রতিমা মণ্ডল এবং তাঁর অবিবাহিত ননদ নিবেদিতা। বাজারের জিনিস তাদের খুশি করতে পারেনি। প্রতিমাদেবীর কথায়, “যে দামে যে সব জিনিস দেখাচ্ছে, সে তো স্থানীয় বাজারেই মেলে। এর জন্য নবদ্বীপে আসব কেন। দাম যদি কম না হয়, জিনিস যদি ভাল না হয় তা হলে আর এত ছোটাছুটি করে কী লাভ হল।”
সপ্তাহান্তেও ভিড় নেই চৈত্র সেলে। —নিজস্ব চিত্র।
কমবয়েসি ননদ নিবেদিতা বলেন, ‘‘প্রতি বার নবদ্বীপ থেকেই সেলে কেনাকাটা করি। নববর্ষে নতুন বস্ত্র পরার রেওয়াজ রয়েছে। তবে খুব দামি কিছু নয়। বেশির ভাগই গরমে পরার কম দামের হাল্কা পোশাক। এ বার দেখছি সেলে জিনিসের দাম বেশ চড়া। অন্য সময়ের তুলনায় দু-পাঁচ টাকা হেরফের। এর জন্য নবদ্বীপ আসা পোষায় না।’
আসলে চৈত্রসেলের চরিত্র দু’তিন বছর বদলাচ্ছে। মূলধারার কেনাবেচার সঙ্গে সেলের কেনাবেচার দূরত্ব ক্রমশ কমছে। এখন কিছু প্রতিষ্ঠান সারা বছরের ‘স্টক’ হাল্কা করার জন্য কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করে বটে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেলের বাজারে বিক্রির জন্য বিশেষ ধরনের জিনিস তৈরি করা হচ্ছে। গুণমান খারাপ। দামে সস্তা। সেই সব জিনিসের উপর ৩০ শতাংশ ছাড় মিলছে না সঙ্গত কারণেই। ফলে তাঁরা হতাশ হচ্ছেন।
নবদ্বীপের রেডিমেড ব্যবসায়ী রাজীব সাহা বলেন, ‘কলকাতার মেটিয়াবুরুজ, ও দিকে বারাসত, মধ্যমগ্রাম, অশোকনগর প্রভৃতি এলাকায় এই চৈত্র সেলের মাল বিপুল পরিমাণে তৈরি হয়। গ্রাম মফফ্সলের দোকানদারেরা মঙ্গলা হাট বা উৎপাদকের ঘর থেকে সরাসরি এ সব মাল কিনে আনেন। দোকান সাজিয়ে এক মাস কেনাবেচা করেন। ৩০ চৈত্র রাতে সব হিসাব শেষ। ব্যবসাও শেষ। ফলে বেশি আয়ের কোনও উপায় নেই। এ সব তো আর সারা বছরের পুরোনো মাল নয়।’
খুশি নন ক্রেতারা
নববর্ষে নতুন বস্ত্র পরার রেওয়াজ রয়েছে। তবে খুব দামি কিছু নয়। বেশির ভাগই গরমে পরার কম দামের হাল্কা পোশাক। তবে এ বার জিনিসের দাম বেশ চড়া। অন্য সময়ের তুলনায় দু-পাঁচ টাকা হেরফের। এ জন্য নবদ্বীপ আসা পোষায় না।’
—নিবেদিতা মণ্ডল, ক্রেতা
ব্যবসায়ী মঙ্গল রায় বলেন, ‘আগের সেলের সঙ্গে এখন সেলের বাজারের আরও ফারাক আছে। মধ্যমগ্রাম বারাসতে যে সব জিনিস তৈরি হয়, তা কেবল চৈত্রমাসের জন্য হয় না। বারোমাস সব দোকান ওই জিনিসগুলোই বিক্রি হয়। অন্য সময় দোকানে যেখানে ১০ শতাংশ লাভে মাল বেচাকেনা করি। সেলে হয়তো লাভটা কমিয়ে আমরা ৫ শতাংশ রাখি। ফলে সেলের ক্রেতা সব মিলিয়ে ওই পাঁচ শতাংশ লাভটুকুই ছাড় পান। এতে তারা সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। এ ছাড়া এখন সেলের প্রধান ক্রেতা কিন্তু গ্রামীণ মানুষ। শহরের মানুষ সে ভাবে ভিড় করেন না।”
অনেক কম দামে শাড়ি বা চুড়িদার কিংবা জিনস কেনার মজা ক্রমশ কমে আসছে। ফলে মধ্যবিত্ত ক্রেতা আগ্রহ হারাচ্ছেন সেলের বাজারে। এমনটা মনে করেন নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘সারা বছর ধরে দোকানে জমা হয় নানা ধরনের জিনিস। চৈত্র মাসে মহাজনের টাকা মেটানোর আগে এ সব জমা জিনিসের যতটা পারা যায় বিক্রি করে টাকাটা নগদ করে নেওয়ার পথ হিসাবেই সেলের সূচনা হয়ে ছিল। দাম কম হওয়ায় মানুষ মুখিয়ে থাকত চৈত্রসেলের জন্য। কিছু প্রতিষ্ঠানে এমন সেল এখনও চালু থাকলেও আসলে সেলের জন্য আলাদা উৎপাদন হচ্ছে। তাতে ক্রেতাদের নানা চালু ব্র্যান্ডের সস্তা সুলভ সংস্করণ কেনা সম্ভব হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত গ্রামীণ ক্রেতা খুশিও হচ্ছেন।”
তবে কি সেল তার চরিত্র হারাচ্ছে? উত্তরে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান বাদল দত্ত বলেন, “মন্দার বাজারে ক্রেতাকে আকর্ষণ করা পৃথিবীর সব দেশের ব্যবসায়ীদের ধর্ম। চৈত্রমাস, ঋণশোধের মাস। তখন ক্রেতাকে বাড়তি কিছু ছাড় দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না ব্যবসায়ীরা। আর কোনও অতিরিক্ত প্রাপ্তিতে সে ছুটবেই। তাই সেল আসলে একটা পদ্ধতি যা ক্রেতাকে কেনাকাটা করতে প্ররোচনা দেয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.