ঝুঁকে পড়া বাজারে টাকা
রাখুন ঝুঁকিহীন জায়গায়
বাজার এখন বেয়ারদের দখলে। গত কয়েক দিনে অনেকটাই জমি ছাড়তে হয়েছে বুলদের। পরিস্থিতি যা, তাতে বুলদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ শক্ত।
বাজারকে বিশেষ করে ধাক্কা দিয়েছে অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এক দিকে যখন স্থানীয় লগ্নিকারীদের দেখা নেই, তখন বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে একনাগাড়ে শেয়ার বিক্রি করে চলেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। ফল, সূচকের ক্রমাগত পতন। শুক্রবার সেনসেক্স এসে থেমেছে ১৮,৪৫০ অঙ্কে। অর্থনীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী আশার বাণী শোনালেও বাজার তাকে মূল্যই দিচ্ছে না। নতুন আর্থিক বছর শুরু হলেও এই বছর সম্পর্কে কেউই তেমন আশার কথা শোনাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই মেদ খুইয়েছে প্রথম সারির বেশ কিছু শেয়ার।
আর কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ। ফলাফল সম্পর্কেও বাজার খুব একটা আশাবাদী নয়। তাই বড় রকমের উত্থানের সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না। বরং হেভিওয়েট কোম্পানিগুলির কেউ কেউ আশার তুলনায় খারাপ ফলাফল প্রকাশ করলে তার প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে বাজারে।
শেয়ার বাজার বেশ দুর্বল হয়ে পড়ায় তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পে। বেশ খানিকটা করে ন্যাভ্ কমেছে প্রায় প্রত্যেকটি প্রকল্পের। তুলনামূলক ভাবে অবস্থা অনেকটাই ভাল ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পগুলির। সুদ হ্রাসের জমানায় এই প্রকল্পগুলির চাহিদা ক্রমশই বেড়ে উঠছে। বর্তমান বাজারে ডেট ফান্ড এবং ইনকাম ফান্ডগুলি লগ্নির অন্যতম ভাল জায়গা বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে উঁচু হারের করদাতাদের কাছে।
বাজার যদি আরও খানিকটা নামে, তবে তা সুযোগ করে দেবে অল্প জলে বড় মাছ ধরার। ভবিষ্যতে সাফল্য পাওয়ার জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে। অল্প অল্প করে সংগ্রহ করা যেতে পারে বেশ কিছু নামী শেয়ার। অথবা প্রত্যেকটি পতনে কেনা যেতে পারে সেনসেক্স এবং নিফটি এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড ইউনিট। এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে লার্জ ক্যাপ মিউচুয়াল প্রকল্পে। মিউচুয়াল প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে ‘ভ্যালুরিসার্চঅনলাইন.কম’ ওয়েবসাইট থেকে।
যাঁরা কোনও রকম ঝুঁকির মধ্যে যেতে চান না, তাঁদের জন্য ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতই টাকা রাখার শ্রেষ্ঠ জায়গা। সুদের হার এখনও যথেষ্ট ভাল। সুদ সামান্য কমলেও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট এখনও লগ্নির অন্যতম ভাল জায়গা।
২০১৩-’১৪ সালে কর সাশ্রয়ের জন্য যাঁরা এখন থেকেই লগ্নি শুরু করতে চান, তাঁরা এসআইপি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন কর সাশ্রয়কারী ইএলএসএস প্রকল্পে। কমবয়স্করা খাতা খুলতে পারেন নিউ পেনশন স্কিমে (এনপিএস)। বড় মেয়াদে ব্যাঙ্কের রেকারিং ডিপোজিটও মন্দ নয়। ইক্যুইটিতে যাঁরা কখনওই টাকা ঢালেননি, তাঁরা লগ্নি শুরু করতে পারেন রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিমের অন্তর্গত শেয়ার অথবা মিউচুয়াল প্রকল্পে। এই প্রকল্পে লগ্নিতে আছে অতিরিক্ত করছাড়। অবশ্য যাঁদের বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁরাই এই করছাড় পাওয়ার যোগ্য হবেন।
বেসরকারি কোনও কোনও কোম্পানি জন আমানত প্রকল্পে ব্যাঙ্কের তুলনায় কিছুটা বেশি সুদ দিলেও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা কম, এমন মানুষেরা এই ধরনের প্রকল্প এড়িয়ে চললেই ভাল হয়।
শেয়ার বাজার, ডাকঘর, মিউচুয়াল ফান্ড, এমনকী জীবনবিমা সবই এখন বেশ ঝিমিয়ে। এই কারণে ব্যবসা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে বিনিয়োগ এজেন্ট এবং ব্রোকারদের। ফলে এঁদের অনেকে আয়ের সন্ধান করছেন অন্যান্য ক্ষেত্রে। লোভনীয় কমিশনের হাতছানিতে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন চিট ফান্ডের পথ। সাময়িক লাভ হলেও এই পথ পরে তাঁদের বড় সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। ব্যাপারটি ভেবে দেখার।
সব সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরা অত্যন্ত প্রয়োজন। অনেক কিছু করার আছে সরকারেরও। শেয়ার বাজার ভাল হলে অনেকগুলি ক্ষেত্রই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজারের আশু পাকাপাকি উত্থান অবশ্য কেউই আশা করছেন না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আদৌ সুখকর নয়। এ অবস্থায় তহবিল সুরক্ষিত জায়গায় রেখে সুদিনের অপেক্ষা করাটাই হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ঝুঁকি নিতে আগ্রহী মানুষেরা ঝুঁকে পড়া বাজারে একটু একটু করে নামী শেয়ার এবং মিউচুয়াল ইউনিট সংগ্রহ করতে পারেন, ভবিষ্যতে সূচক উঠবে এই আশায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.