বর্ষীয়ান নেতা অনুপস্থিত। কিছুটা ক্ষোভে, কিছু অভিমানে। গরহাজির সেই প্রবীণ নেতারই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী!
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্মেলনে রবিবার রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের কণ্ঠে প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসা শুনে শাসক দলের অন্দরেই জল্পনা, তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশেই কি শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে বিবদমান দুই শিবিরের সেতুবন্ধনের চেষ্টা হচ্ছে?
শোভনদেব শনি ও রবিবার যথাক্রমে সিঙ্গুর ও দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসি-র সভা ও সম্মেলনে ছিলেন না। ‘দলের কাজে ব্যস্ত’ থাকার জন্য তিনি সম্মেলনে থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। যদিও তাঁর অনুগামী শিবির থেকে অন্য কথা শোনা গিয়েছে।
তাঁদের ক্ষোভ, এই সম্মেলন আয়োজনকে কেন্দ্র করে সংগঠনের একাংশ তোলাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে উপস্থিত থেকে ‘তোলাবাজিতে সিলমোহর’ লাগাতে চায়নি সংগঠনের একাংশ।
দুর্গাপুরে এ দিন দোলাদেবী অবশ্য সংগঠনে কোনও রকম দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। শোভনদেব কী ভাবে সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছেন, তা নিয়েই মিনিট দুয়েক বক্তৃতা করেন তিনি। বলেন, “১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই বছরই ডিসেম্বরে আইএনটিটিইউসি যাত্রা শুরু করে। দায়িত্বে ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে এই সংগঠন পরিচালনা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, শোভনদেববাবুও তেমনই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সংগঠনকে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। সংগঠনকে আজকের এই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া অল্প কথা নয়। তিনি সেটা করেছেন। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি করেন।”
দুর্গাপুরে রাজীব গাঁধী ময়দানে এ দিন সম্মেলন উপলক্ষে ছিল বিপুল আয়োজন। ছিল ২৫ হাজার লোকের বসা ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা, বিশাল মঞ্চ। আগের রাত থেকে চলে আসা কয়েক হাজার প্রতিনিধির থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছিল। শিল্পাঞ্চলের সিপিএম নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, সম্মেলন আয়োজনে নানা কারখানার মালিকদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। উদ্বোধনী বক্তব্যে পার্থবাবু স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই বলেন, “বলাবলি হচ্ছে, মালিকেরা নাকি চাঁদা দিয়েছেন। আমি সেই সব মালিকদের খুঁজছি, কে চাঁদা দিয়েছে! শ্রমিকেরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে সম্মেলন আয়োজন করেছেন।”
পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “জোর করে কারও কাছে চাঁদা নেওয়া হয়নি। সদস্যেরা ২০ টাকা করে দিয়েছেন। প্রতিটি ইউনিট চাঁদা দিয়েছে।
নেতারা নিজেদের আয়ের অংশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, কিছ ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।” এই ‘বন্ধু’রা কারা, তা অবশ্য তিনি জানাতে চাননি। কত খরচ হল, সে প্রশ্নে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “সব হিসেব আছে। পরে যোগাযোগ করলে জানিয়ে দেব।” |