দলের নামে জুলুম নয়, কঠোর পার্থ
সিঙ্গুরের পরে দুর্গাপুর। শিল্প সংস্থায় দলের পতাকা হাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার ব্যাপারে দলীয় শ্রমিক সংগঠনকে ফের কঠোর বার্তা দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জানালেন, একটি কারখানায় দলের একটিই সংগঠন থাকবে। কোনও গোষ্ঠীবাজি চলবে না। একই সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন রাজ্য সরকারের ‘শিল্পবান্ধব’ ভাবমূর্তিও।
শনিবার সিঙ্গুরে পার্থবাবু বলেছিলেন, “গেটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কথায় কথায় কারখানা বন্ধ করা যাবে না।” রবিবার দুর্গাপুরে দাঁড়িয়ে সুর আরও চড়িয়ে বললেন, “তৃণমূলের পতাকা হাতে কারখানায় গোলমাল পাকানো বরদাস্ত করা হবে না। কোনও সমস্যা হলে শ্রম দফতরকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মেটাতে হবে। শুধু দাবি আদায় নিয়ে ভাবলে চলবে না, দায়িত্বশীল কর্মী হতে হবে। তবেই শিল্প বাঁচবে, বাঁচবে শ্রমিক।” সাম্প্রতিক কালে এই শিল্পনগরীর একাধিক কারখানায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে।
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্মেলনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পূর্ণেন্দু বসু। রবিবার দুর্গাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
সেই সূত্রেই এ দিন দলের শ্রমিক সংগঠনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন পার্থবাবু। নির্দেশ না মানলে যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, দুর্গাপুরেরই বহিষ্কৃত আইএনটিটিইউসি অসীম প্রামাণিকের নাম নিয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি।
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের সমাবেশ ছিল দুর্গাপুরের রাজীব গাঁধী ময়দানে। সেখানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “অনেক সংস্থায় দলের নামে একাধিক সংগঠন চলছে। তা চলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, একটিই সংগঠন থাকবে। যেখানে তার বেশি রয়েছে, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সেগুলি মিটিয়ে নিন।” সদস্য-সমর্থকদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, “চাঁদাবাজি, তোলাবাজি চলবে না। বিল ছাপাবেন না। সেটা ওরা (সিটু) করত। আমরা করব না।”
এর পরেই অসীম প্রামাণিকের প্রসঙ্গ তোলেন তৃণমূলের মহাসচিব। গত ডিসেম্বরে দুর্গাপুরে জয় বালাজির ইস্পাত কারখানায় আধিকারিকদের হেনস্থার অভিযোগ ওঠে অসীমবাবু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। তাঁদের নামে অভিযোগও দায়ের হয়। কিন্তু তার পরেও শ্রমিকদের দাবি আদায়ের নামে অসীমবাবুর জঙ্গি আন্দোলনে অতিষ্ঠ হয় শহরের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতাল, গ্রাফাইট কারখানা-সহ আরও কিছু সংস্থা। মাসখানেক আগে অসীমবাবুকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। এ দিন পার্থবাবু বলেন, “আগেই ঘোষণা হয়েছে, আজ প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছি, অসীম দলের কেউ নয়।” একই কথা বলেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তবে, তাঁর সংযোজন, “অসীম নিজেকে শুধরে নিলে দলে ফেরার সুযোগ আছে।” অসীমবাবুর প্রতিক্রিয়া, “দল সুযোগ দিলে নিজেকে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করব।”
রাজ্য সরকারের শিল্পনীতি ও স্থানীয় স্তরে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের দাপটে ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। শিল্পমন্ত্রী যদিও বারবার রাজ্যের ‘শিল্পবান্ধব’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি কলকাতায় টাটা গোষ্ঠীর পাঁচ তারা হোটেলে আইএনটিটিইউসি-র নতুন ইউনিট গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভেঙে দেন পার্থবাবুই। পরে আইএনটিইউসি সেখানে একটি ইউনিট গড়ে। সে ক্ষেত্রেও শিল্পমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, অতিথিদের নিরাপত্তা সরকারের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সমস্যা হলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলেন শিল্পমন্ত্রী। পার্থবাবু জানান, রাজ্যে ২৫৭টি শিল্প-প্রস্তাবে তাঁরা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। ১৭০টির কাজ শুরু হয়েছে। বিনিয়োগ হবে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা। শিল্পের জন্য জমি নিয়ে রাজ্যে কোনও সমস্যা নেই দাবি করে তাঁর বক্তব্য, “সরকারের অনুমতি ছাড়া ২৪ একরের বেশি জমি কেউ রাখতে পারবেন না। অনেকে জমি নিয়ে ফেলে রেখেছেন। সেই জমিতে তাঁরা কী করতে চান, তাঁদের ষ্পষ্ট ভাবে জানাতে বলেছি। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি সে ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেবে। হয় শিল্প গড়ুন। না হলে অন্যকে ছেড়ে দিন।” সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন আনা হবে বলে এ দিন জানান শিল্পমন্ত্রী। সম্মেলনে পঁচিশ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা করলেও এ দিন হাজির ছিলেন অর্ধেকেরও কম। মন্ত্রীদের বক্তব্যের মাঝে পেটপুজো সেরে বাড়ির পথ ধরতে দেখা গেল তাঁদের অনেককেই। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘হাওড়ার শরত্‌ সদনে সিটুর রাজ্য সম্মেলন হল মাত্র কয়েকশো প্রতিনিধি নিয়ে। সেখানে আমাদের এই সম্মেলনকে তো মহা-সম্মেলনই বলতে হয়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.