প্রতি মাসেই ইস্তফাপত্র পাঠাচ্ছেন প্রধান। গৃহীত হচ্ছে না। ফের পাঠাচ্ছেন। গত দেড় বছর ধরে কার্যত একা পঞ্চায়েত সামলানোর সঙ্গে এটাও যেন তাঁর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটাই দাবি করেছেন রানিগঞ্জের এগারা পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশান্ত ঘোষ।
সিপিএম থেকে নির্বাচিত ওই প্রধান জানান, বাকি সদস্যেরা নানা কারণে কার্যালয়ে আসা বন্ধ করেছেন। ফলে পড়েই থাকছে সমস্ত বরাদ্দ টাকা। তাঁর ক্ষোভ, “২০১১ সালের নভেম্বর থেকে প্রতি মাসেই আমি ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছি। অনেক দিন আগে পঞ্চায়েত ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করা উচিত ছিল।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা যদিও জানিয়েছেন, এমন কোনও ইস্তফা তাঁরা পাননি।
রানিগঞ্জ ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিই বামেদের দখলে। সব মিলিয়ে কংগ্রেসের দু’জন আর তৃণমূলের তিন জন পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন। এগারা পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে একটি সিপিআই ও বাকি সব সিপিএমের দখলে রয়েছে। বছরখানেক আগে সিপিএমের তিন পঞ্চায়েত সদস্য মুনমুন ঘোষ, পরেশ গড়াই এবং দীপক রুইদাস অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দেন। এর পরেই উপপ্রধান তথা সিপিআই সদস্য, প্রধান এবং আরও আট জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ‘কাজ করার পরিবেশ নেই’ অভিযোগ তুলে বিডিও-র কাছে ইস্তফা দেন। কিন্তু বিডিও ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি। তিনি সর্বদল বৈঠক ডেকে সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনার ব্যাপারে সাহায্যের আশ্বাস দেন। তবে সমস্যা না মেটার অভিযোগে ওই সদস্যেরা পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দেন।
সিপিএমের রানিগঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক রুনু দত্তের দাবি, ওখানে কাজ করার মতো পরিবেশ নেই। পঞ্চায়েত সদস্যদের বাদ দিয়েই তৃণমূলের কর্মীরা সংসদের বৈঠক ডাকছিলেন। সেখানে গৃহীত কর্মসূচি প্রধানের মাধ্যমে তাঁরা অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছিলেন বলেও জানান তিনি। রুনুবাবুর দাবি, “সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এলাকায় তৃণমূলের বিক্ষোভ, অবরোধ বাড়ছিল। প্রধানও নির্বাচিত সদস্যদের উপেক্ষা করে বিরোধীদের প্রায় আজ্ঞাবাহকে পরিণত হয়েছিলেন। এ সব কারণেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” পঞ্চায়েত সদস্যরা যাচ্ছেন না। প্রশাসন প্রতিশ্রতি দেওয়া ছাড়া কিছু করেনি বলেও তাঁর অভিযোগ।
তবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একেবারেই মানতে নারাজ প্রধান। তিনি জানান, সরকার পরিবর্তনের পরে মানুষের মধ্যে আশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। নানা দাবিতে তাঁরা পঞ্চায়েতে আবেদন জানাতে আসছিলেন। বিডিও রাজনৈতিক চাপান-উতোর মেটাতে সর্বদল বৈঠক করেছিলেন। তৃণমূলের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলও বৈঠকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে দাবি প্রশান্তবাবুর। তাঁর অভিযোগ, “বিনা কারণেই পঞ্চায়েত সদস্যেরা আসছেন না।” বিরোধী দলের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচিত সদস্যেরা কাজ না করায় বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। ফলে বিভিন্ন সমাজসেবী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পরামর্শ মেনে অনেক কাজ করা হয়েছে। আবার পঞ্চায়েত সদস্য ছাড়া বেশ কিছু কাজ রূপায়ণ করা যায় না বলে এক বস্তা ত্রাণের পোশাক এবং শীতবস্ত্র পড়ে আছে।”
প্রধানের আরও দাবি, “আমি চেয়েছিলাম, পঞ্চায়েতের সদস্যেরা বিরোধীদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলুন। তাতে ভাল কাজ করা যাবে।” তৃণমূল নেতা সেনাপতিবাবুও বলেন, “প্রথম থেকেই সহযোগিতা করছি আমরা।”
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের মে থেকে পঞ্চায়েতের বোর্ড মিটিং বন্ধ। ফলে, কোনও কর্মসূচি রূপায়ণ করা যাচ্ছে না। গত অর্থবর্ষের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়নি। অনুমোদিত হয়েও পড়ে রয়েছে ৫৬ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষেও ৭৮ লক্ষ টাকার বাজেট বরাদ্দ করে বিডিও-র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে তা জেলা পরিষদে জমা দেন। তবে প্রধানের দাবি, গত আর্থিক বর্ষে কিছু কুয়ো সংস্কার, নর্দমা তৈরি এবং টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, “২০১১ সালের নভেম্বরে বিডিও-কে ইস্তফাপত্র দিয়ে জানাই, নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের অসহযোগিতা এবং শারীরিক অসুস্থতায় দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। কিন্তু তা মঞ্জুর না হওয়ায় প্রতি মাসেই নিয়মিত ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছি। পরে ২০১২ সালের অগস্টে জেলা পরিষদের ডিপিআরডিও-কে লিখিত ভাবে জানাই, পঞ্চায়েত সদস্যদের অনুপস্থিতিতে আমরা সঙ্কটের মুখে। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা হোক।”
জেলাশাসক বলেন, “যে অচলাবস্থা চলছে তা নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরই কাটাতে হবে। অর্থ কমিশনের টাকা পঞ্চায়েত সদস্যদের সম্মতি ছাড়া খরচ করা যায় না। তবে ইন্দিরা আবাস, একশো দিনের কাজ চলছে।” প্রশাসক নিয়োগের কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
বিজেপি-র আলোচনা। শনিবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন করল বিজেপির আসানসোল জেলা কমিটি। রানিগঞ্জের রানিসায়র মোড়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা হয়।
|