|
|
|
|
ধ্বংসস্তূপের নীচে ৩০ ঘণ্টা, বেঁচেও অনাথ ৩ |
ঠাণে-কাণ্ডে মৃত বেড়ে ৭২, ধৃত দুই বিল্ডার |
সংবাদসংস্থা • ঠাণে |
আনন্দে রীতিমতো চেঁচিয়ে উঠেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা পেরেছেন, ঠাণের শিলঘর এলাকার সাততলা বাড়িটার ভগ্নস্তূপ থেকে তাঁরা বাঁচাতে পেরেছেন দশ মাসের ছোট্ট প্রাণকে। তবে বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না উচ্ছ্বাস। জানা গেল, তার বাবা-মা, বা পরিবারের কেউই আর বেঁচে নেই। নামটাও জানা যায়নি। তাই উদ্ধারকর্মীরাই পরে নাম রেখেছেন ‘গুড়িয়া’, বললেন, “পুতুলের মতো দেখতে তো, তাই...।”
আড়াই বছরের কর্ণর অবস্থাও প্রায় একই রকম। তার চোখটা মারাত্মক জখম হয়েছে বুধবারের ঘটনায়। তবুও মাকে দেখতে পেয়ে ক্ষণিকের জন্য চিকচিক করে উঠল ছেলেটার চোখমুখ। তবে ছেলে-মায়ের মিলন বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না। ঘণ্টা খানেক পরেই মৃত্যুসংবাদ এল মায়ের। কর্ণর বাবাও নিখোঁজ। উদ্ধারকর্মীরা সন্দেহ করছেন, তিনিও হয়তো বেঁচে নেই
ঠাণের সাততলা বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়ার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর শেষ হল উদ্ধারকার্য। একের পর এক এমন খবরই এখন আসছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি বাচ্চাও। আহত অবস্থায় প্রায় ৬০ জন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। যাঁরা ভাগ্যক্রমে বেঁচেও গিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের অপেক্ষায় কেউ আর নেই। |
উদ্ধার হল, তবে প্রাণ নেই। দুর্ঘটনার দু’দিন পর ঠাণেতে। ছবি: এএফপি |
বাড়িটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা দু’জনকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে। ঠাণের পুলিশ কমিশনার কে পি রঘুবংশী জানান, বিল্ডার জামিল কুরেশি উত্তরপ্রদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ওখান থেকেই তাঁকে ধরা হয়েছে। সেলিম শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঠাণে থেকেই। ঘটনার পর থেকেই দু’জনে পলাতক ছিলেন। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে। এ দিকে স্থানীয় থানার সাব ইনস্পেক্টর এবং ঠাণের উপ পুর-কমিশনারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুর-কমিশনার আর এ রাজীব নিজেই জানিয়েছেন, মুম্বরা এলাকার ৯০ শতাংশ বাড়িই বেআইনি। তাঁর কথায়, “ওই এলাকায় অন্তত ২৫০টি বেআইনি বাড়িকে নোটিস পাঠিয়েছিলেন তাঁরা।” এই বাড়িটিও বন দফতরের এলাকায় বেআইনি ভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং দু’-দু’বার নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তিনি এ-ও বলেন, “এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার জন্য বন দফতরকে আমরা বারবার জানিয়েছিলাম। এমনকী বাড়িটির বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দেওয়ার কথাও বলেছিলাম।” কোনও মতে বেঁচে ফেরা ওই বাড়িরই এক বাসিন্দার অভিযোগ, “আশপাশের বাড়িগুলোতে দেড় হাজারের মতো ভাড়া। এই বাড়িটাতে বিল্ডাররা মাত্র ৫০০ টাকায় ঘর ভাড়া দিয়েছিলেন। আর যত পেরেছিলেন বাড়ির মধ্যে লোক ঢুকিয়েছিলেন।”
আজ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, মৃতদের নিকট আত্মীয়কে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা অর্থসাহায্য। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই, সরকার সাহায্য করলেও, সে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আবার পরিজনের দেহ নিতে চাইলেও, প্রমাণ দেখাতে পারছেন না অনেকেই। ছুটে মরছেন এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। কী প্রমাণ দেবেন, সর্বস্ব তো ধ্বংসস্তূপের তলায়।
গুড়িয়া, কর্ণর মতো পরিণতি আরও এক শিশুর। ৬ বছরের মেয়েটির নাম সন্ধ্যা। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা চাপা পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের কারও খোঁজ মেলেনি এখনও। আপাতত ডাক্তার-নার্সদের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে সে।
বেঁচে গিয়েছেন শবনমও। তবে ভুলতে পারছেন না সেই ফোনটার কথা। গত কাল দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল। ও পাশে কমবয়সী এক মহিলার করুণ আর্তি। জানিয়েছিলেন, ছ’-সাত জন পড়ুয়া-সহ ভগ্নস্তূপে আটকে পড়েছেন।
দু’দিন কেটে গেল, এখনও তাঁকে খুঁজে চলেছেন শবনম। |
পুরনো খবর: ঠাণের বেআইনি বহুতল ভেঙে মৃত ৫০ |
|
|
|
|
|