|
|
|
|
অকাল ভোটে যাবে কেন দল, প্রশ্ন চিদম্বরমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিরোধী এবং সহযোগীরা যখন অকাল ভোটের হাওয়া তুলতে চাইছেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আজ অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, “সরকার ভোট এগোতে চাইবে কেন? বরং তারা চাইবে নগদ হস্তান্তর, খাদ্য নিরাপত্তার মতো প্রকল্পগুলির সুষ্ঠু রূপায়ণের পরেই ভোটে যেতে।” সরকারের বক্তব্য, বারবার অকাল ভোট নিয়ে সরব হওয়ায় অর্থনীতির উপরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেটা সামলাতেই চিদম্বরম আজ পাল্টা বার্তা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে থেকে ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরেই নির্বাচন এগিয়ে আসা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এই জল্পনা সর্বাগ্রে উস্কে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সম্প্রতি বলেন, তাঁর কাছে খবর তিন মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোট হয়ে যাবে। পরে মুলায়ম সিংহ এবং আডবাণী বলেন, তাঁদের কাছেও পাক্কা খবর রয়েছে যে, সরকারই ভোট এগিয়ে আনবে। ভোট হবে সম্ভবত এ বছরের নভেম্বরেই। যদিও অনেকেই মনে করছেন, ভোটের জিগির জাগিয়ে তুলে বিজেপি বা সপা নেতারা নিজেদের কর্মীদের এখন থেকেই তৈরি রাখার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেস নিজে ভোট এগিয়ে আনবে এমনটা হয়তো মুলায়ম-আডবাণীও বিশ্বাস করেন না।
সরকারের সমস্যা কিন্তু অন্য। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, বিরোধীরা বারবার অকাল ভোটের কথা বলার ফলে বাজারের উপর প্রভাব তো পড়বেই। সেই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের মধ্যেও একটা শিথিলতা আসতে পারে। অথচ অর্থনৈতিক ভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতিতে মনমোহন-চিদম্বরমরা চেষ্টা করছেন বাজারকে চাঙ্গা রেখে যথাসম্ভব হাওয়া ঘোরাতে। সেই সঙ্গে ভোটে যাওয়ার আগে নগদ হস্তান্তর, খাদ্য নিরাপত্তার মতো প্রকল্প সুষ্ঠু রূপায়ণের মাধ্যমে একটা ‘ফিল গুড’ পরিস্থিতি তৈরি করতে।
সে দিক থেকে চিদম্বরমের আজকের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। সাংবাদিক বৈঠক করে আজ চিদম্বরম গোড়ায় জানান, কী ভাবে প্রত্যক্ষ কর থেকে আয় বেড়েছে, কী ভাবে সদ্য সমাপ্ত আর্থিক বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৬.৭ শতাংশ। নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের উপযোগিতার কথা বলেন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক জাপান ও দুবাই সফরের কথা উল্লেখ করে বোঝান, সরকার বিনিয়োগ টানতে কতটা মরিয়া। জানান, শীঘ্রই আরও কিছু আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক হাব-এও যাবেন তিনি। তা ছাড়া চলতি বাজেট অধিবেশনে বিমা ও পেনশন বিল পাশ করানোর ব্যাপারেও আশা প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, “বিমা বিলের কেবল একটি ধারা নিয়ে কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে মতান্তর রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে সে বিষয়ে আলোচনা করছেন। তার পর ২২ এপ্রিল অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সরকারের নেতৃত্ব।”
বিজেপি বা বিরোধীরা বিমা এবং পেনশন বিল পাশ করানোর সুযোগ সরকারকে দেবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তবু চিদম্বরমের আজকের এই বক্তব্য বাজারের মনোবল ধরে রাখার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কংগ্রেস।
পরে কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আগামী মাসে কর্নাটকে ভোট। সেখানে বিজেপির হারের সম্ভাবনাই বেশি। ফলে তার পরপরই বিজেপি লোকসভা ভোটে যেতে চাইবে না। তারা বরং অপেক্ষা করবে নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থানে জিতে ভোটে যেতে। তার পরেও অনুকূল পরিস্থিতি পেয়ে বিজেপি যদি সরকার ফেলতে চায়, সে জন্য সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হবে। তাতে বাম, বিএসপি এবং ডিএমকে-র মতো দলগুলি সায় দেবে না বলেই কংগ্রেসের বিশ্বাস। কারণ তারাও কেউ ভোট চায় না।
আর কংগ্রেস? দলের নেতারা চিদম্বরমের মতোই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস কেন অকাল ভোটে যেতে চাইবে? তাদের অনুকূলে
হাওয়া নেই। দলের কেউই এখন ভোটে যেতে চান না। কংগ্রেসের ওই নেতা অবশ্য জানালেন, দল ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। রাহুল গাঁধী প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুরু দিতে চাইছেন। কারণ, রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয়। তা ছাড়া ভোট আগামী বছর হলেও তো হাতে আর বিশেষ সময়ও নেই। |
|
|
|
|
|