|
|
|
|
দেশে-বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণা, ধৃত যুবক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বয়স মাত্র ২৮ বছর। আদতে দিল্লির বাসিন্দা। নিজের দাবি অনুযায়ী, তিনি তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বেশ কয়েকটি বড় কর্পোরেটে কাজের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। কিন্তু দেশে-বিদেশে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে সমৃদ্ধি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি তাঁদের প্রতারণা করে ২০০৯ থেকে মাত্র দু’-আড়াই বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। টিভিআই এক্সপ্রেস কেলেঙ্কারির নায়ক হিসেবে অভিযুক্ত সেই তরুণ ত্রিখাকে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি-র গোয়েন্দারা দিল্লিতে গ্রেফতার করে শনিবার কলকাতায় নিয়ে এসেছেন।
ল্যাপটপ, বিদেশের তারকা খচিত হোটেলে বিলাস-ব্যসন, বিলাসবহুল গাড়ি, বাংলো, এমনকী ৮০ কোটি টাকা দামের জেট বিমান, সংস্থার শেয়ারও প্রতি মাসে দেওয়ার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রতারিতদের। দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার মাত্র চার জন ব্যক্তি গোয়েন্দাদের শনিবার রাত পর্যন্ত যে টুকু তথ্য দিয়েছেন, তাতেই দেখা যাচ্ছে, এই রাজ্যে ত্রিখার হাতে প্রতারিতের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। এঁরা প্রত্যেকেই গড়ে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছেন ত্রিখার সংস্থাকে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাজাখস্তান, বাংলাদেশেও সংস্থাটি প্রতারণার জাল বিছিয়েছিল। |
ভবানী ভবনে ধৃত তরুণ তৃখা। |
কী ভাবে দুনিয়া-জোড়া জাল পেতে এত মানষকে প্রতারণা করা হল? গোয়েন্দাদের বক্তব্য, চেন মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কিংবা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবস্থাই এখানে ছিল প্রতারণার হাতিয়ার। যেখানে সংস্থার সদস্য হতে হবে ১৩ হাজার টাকা (পরবর্তী কালে বেড়ে হয় সাড়ে ১৫ হাজার) কিংবা ২৫০ মার্কিন ডলার দিয়ে। একই সঙ্গে অন্য দু’জন ব্যক্তিকেও সংস্থার সদস্য করাতে হবে। এই ভাবে প্রথমে আট জনকে নিয়ে একটি পিরামিড তৈরি হওয়ার পর তার শীর্ষে থাকা ব্যক্তি পিরামিড থেকে বেরিয়ে যাবেন। তিনি পাবেন ১৩ হাজার টাকার দু’টি অর্থাৎ মোট ২৬ হাজার টাকার ভাউচার। ওই ভাউচারের বিনিময়ে তিনি আরও দু’জনকে সংস্থার সদস্য করাবেন এবং ওই দু’জনের সদস্যপদের মোট ২৬ হাজার টাকা তিনি পাবেন। পিরামিড যত বড় হবে, ততই সদস্যেরা ফুলেফেঁপে উঠবেন, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবে আট সদস্যের পিরামিড তৈরি হওয়ার পর ভাউচারের বিনিময়ে কেবল ওই ২৬ হাজার টাকাই সদস্যদের একাংশ পেয়েছিলেন।
প্রতারিতদের অন্যতম, খড়্গপুরের বাসিন্দা শুভ্রা দাস ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খড়্গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত ভার এ বছরের গোড়ায় সিআইডি হাতে নেওয়ার পরেই ত্রিখার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে, সতর্ক করা হয় বিমানবন্দরগুলিকেও। সিআইডি-র স্পেশ্যাল আইজি বিনীত গোয়েল বলেন, “দিল্লি থেকে বিমানে তরুণ ত্রিখা নেপালে পালানোর মতলবে ছিলেন। নেপালে ভারতীয়দের ঢুকতে পাসপোর্ট লাগে না। সেখানে ভুয়ো পরিচয়পত্র করিয়ে তিনি হয়তো অন্য দেশে গা তিনি ঢাকা দিতেন।”
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০১০ সালের ১ অক্টোবর কটকের বরাবাটি স্টেডিয়ামে তরুণ ত্রিখার সংস্থা যে মহা সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, তাতে বিদেশি সদস্য হাজির ছিলেন ৫০০ আর ভারতীয় ১০ হাজার। সল্টলেকে ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি পাঁচ তারা হোটেলে সে বছর এপ্রিল মাসে সংস্থাটি সভার আয়োজন করে। এই চক্রে কয়েক জন বিদেশিও জড়িত থাকতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়া হবে। সিআইডি জানায়, আজ, রবিবার মেদিনীপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তরুণ ত্রিখাকে হাজির করানো হবে।
তরুণ ত্রিখাকে গ্রেফতারের পর কলকাতায় আনা হয়েছে, এই খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদের কান্দির নরেন্দ্রনারায়ণ রায়, উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির রবীন পাল, খড়্গপুরের বিশ্বরূপ দাসেরা এ দিন বিকেলে সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবনে হাজির হন। তাঁদের বক্তব্য, “তরুণ ত্রিখা ও তাঁর আত্মীয়দের নামে থাকা ৩৫টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। তবে বেশির ভাগ সময়েই আয়করের কথা বলে হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বলত তরুণ।”
|
পুরনো খবর: ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থায় রাজ্যের রাশ |
|
|
|
|
|