রাহুলকে জবাব দিলেও গদির দৌড়ে মোদীর কাঁটা দল-সঙ্ঘ
বিজেপি-র ৩৩ম প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করে ফের এক বার নিজেকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে উদ্যোগী হলেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের ঋণ শোধ করার কথা বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে থাকার সঙ্কেত দিয়েছেন যিনি।
সম্প্রতি ভারতকে ১০০ কোটি মানুষের এক মৌচাক বলেছেন রাহুল গাঁধী। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মোদীর বক্তব্য, “কংগ্রেস নেতাদের ভারত সম্পর্কে ধারণার কথা শুনে আমি আশ্চর্য। আমাদের দেশ হল মা।” এই মন্তব্যকে রাহুল বনাম মোদীর একটি পর্ব হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
১৯৮০ সালে বিজেপি-র যাত্রা শুরু। মাঝে বিজেপি-র নেতৃত্বে কেন্দ্রে রাজত্ব করেছে এনডিএ সরকার। কিন্তু এখন দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে রীতিমতো শোচনীয় অবস্থা বিজেপি-র। নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তূলে ধরার জন্য চাপ রয়েছে কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু এখনও দলেরই একটি অংশের চাপে সে পথে এগোতে পারেননি শীর্ষ নেতৃত্ব।
আজ আমদাবাদে বিজেপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন মোদী। দিল্লিতে দলের সদর দফতরেও অনুষ্ঠান হয়েছে। সেখানে লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বেই ২০১৪ সালের ভোটে লড়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য সভাপতি বিজয় গয়াল। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলন নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে আডবাণীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি জাতীয় স্তরে প্রাসঙ্গিক থাকতে চান।

স্বাগত। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ ও মুখমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকেই আমদাবাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। দিল্লির অনুষ্ঠানের পরেই বিমানে আমদাবাদ পাড়ি দিয়ে মোদীর পাশে দাঁড়ান রাজনাথ। ফলে, নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিজেপি-র একটি অংশের বক্তব্য, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করলে বিপাকে পড়বে দল। কারণ, গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার প্রেক্ষিতে মোদীর ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা রয়েছে শরিক নীতীশ কুমারের। মোদী প্রার্থী হলেই নীতীশকে হারাবে এনডিএ। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে নবীন পট্টনায়ক কেউই মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ জোটে যোগ দিতে চাইবেন না। জোট রাজনীতির এই যুগে শরিকদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে বিজেপি।
নরেন্দ্র মোদী শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে দল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করলে কখনওই বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়বে না। দক্ষিণে বিজেপি দুর্বল, পূর্বেও তাই। যে সব এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী, সেখানে আসন সংখ্যা বাড়াতে গেলে মোদীকে সামনে রেখে এগোনো ছাড়া উপায় নেই। বিহারে সি পি ঠাকুরের মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, নীতীশের পক্ষে এনডিএ ছাড়া সহজ হবে না। বরং মোদীকে সামনে রেখে চললে চাপে পড়বেন নীতীশই।
৩৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপি-র সামনে আর একটি সমস্যা আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ। গাঁধীজীর হত্যার পরে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আরএসএস-কে। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জনসঙ্ঘ যাত্রা শুরু করার সময়ে আরএসএসের দেশব্যাপী সংগঠনের সাহায্য নিয়েছিল।
জয়প্রকাশ নারায়ণের ইন্দিরা গাঁধী-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে জনতা পার্টিতে মিশে যায় জনসঙ্ঘ। কিন্তু আরএসএসের সদস্য থাকলে জনতা পার্টির সদস্য থাকা যাবে না বলে সরব হয় ওই দলের একটি অংশ। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টি তৈরি করেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা।
দলের সংগঠন বাড়াতে গিয়ে আরএসএসের সাহায্য নেওয়ায় এখন বিজেপি-র মধ্যে কার্যত সমান্তরাল সংগঠন চালায় আরএসএস। প্রতি রাজ্যেই সাংগঠনিক সচিব হিসেবে সভাপতির পাশেই থাকেন আরএসএস মনোনীত এক ব্যক্তি। সঙ্ঘের প্রিয়পাত্র হওয়াতেই অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের বদলে দলের সভাপতি হয়েছিলেন নিতিন গডকড়ী। বর্তমান সভাপতি রাজনাথ সিংহও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ। কিন্তু দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে বিরক্ত অনেক শীর্ষ নেতাই। এর প্রতিবাদও করেছিলেন খোদ লালকৃষ্ণ আডবাণী। তাই শুধু রাহুলকে জবাব নয়, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে গেলে নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরের আশীর্বাদও পেতে হবে মোদীকে।
মোদী সব দিক সামলাতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.