|
|
|
|
পঞ্চায়েত জট খুলতে এ বার চেষ্টা কেন্দ্রের, নজর মমতার সফরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরে পঞ্চায়েত জট কাটাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নামতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই চেষ্টার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন্ন নয়াদিল্লি সফর।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ যে পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশই সাংবিধানিক অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছে মনমোহন সিংহের সরকার। গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার করার জন্য এই জটিলতা কাটানোর একটা দায় কেন্দ্রের রয়েছে। আবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতি মোটেই তাঁদের অনুকূল নয়। কারণ, রাজ্যের পঞ্চায়েত আইন অনুসারে ভোট করানোর ক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্যই শেষ কথা। ওই আইনের ১৩৭ নম্বর ধারার ২ উপধারা বলছে, নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যার উদ্ভব হয়, তা হলে সেই সমস্যা দূর করার জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় যে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে। ফলে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা দু’টি বিষয়েই, রাজ্যকে অগ্রাহ্য করে কমিশন এক তরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে অনেক আইনজীবীর দাবি। তাঁদের মতে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে মামলায় কমিশন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
বিরোধীদের আবার অভিযোগ, ভোট পিছনোর কৌশল হিসেবেই হাইকোর্টে মামলা হারতে চাইছে সরকার। শনিবার বিধাননগরে এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রাজ্য সরকার ইচ্ছে করে মামলায় হারতে চাইছে। তা হলে তারা শীর্ষ আদালতে যেতে পারবে। আর সেই সময়টা প্রশাসক বসিয়ে পঞ্চায়েত চালাবে।” ভোটে হারার ভয় পেয়ে তৃণমূল ঘুরপথে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করতে চায়, বিরোধীদের এই প্রচার রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতি করতে পারে বুঝে তৎপর হয়েছে শাসক দলও। আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিয়ে সরকার এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে, তারা ভোট করতে আগ্রহী। তৃণমূল নেতারাও বলছেন, মমতা ফেব্রুয়ারিতেই ভোট করতে চেয়েছিলেন। অতএব প্রশাসক বসিয়ে ক্ষমতা দখলের ইচ্ছে তাঁদের নেই।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিরোধ এখন মূল যে জায়গায় আটকে রয়েছে তা হল, ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন। কমিশন ভোটপর্ব চলাকালীন ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করেছে। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের বক্তব্য, তারা নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রয়োজন হলে ভিন রাজ্যের পুলিশ এনে ভোট করাতে চায়। মমতা কেন্দ্রকে যে বার্তাটি দিতে চাইছেন তা হল, আজ পর্যন্ত দেশের কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচনে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। এমনকী, অসমে তুমুল হিংসার সময়েও নয়। তা হলে হঠাৎ এখনই বা হতে যাবে কেন? কমিশন ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার উদাহরণ তুলে ধরেছে। এর পাল্টা তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, ২০০৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা সত্ত্বেও তার পরের বার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। তা ছাড়া, ওই দুই ভোটই হয়েছে বাম আমলে। যখন নির্বাচনে পেশিশক্তির প্রয়োগই দস্তুর ছিল। তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচন, জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচন এবং দু’টি পুরসভা নির্বাচন হয়েছে। কোথাও প্রাণহানি অথবা বড় কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করে রাজ্যের পরিস্থিতি আগের তুলনায় শান্ত।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি একান্ত ভাবেই তাদের এক্তিয়ারভুক্ত। স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশন অবাধ
ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতেই পারে। কিন্তু বাহিনীর চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ফারাক বিস্তর। ফলে তাদের চাহিদামতো বাহিনী যে দেওয়া যাবেই, তা আদৌ নিশ্চিত নয়। এই বাস্তব পরিস্থিতি সামনে রেখে রাজ্য সরকার ও কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা মধ্যবর্তী সমাধান সূত্র বার করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তৎপর কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও। কারণ, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ততই ফের কাছাকাছি আসার আগ্রহ দেখাচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূল দু’পক্ষই।
এই অবস্থায় আগামী ৮ তারিখ থেকে মমতার পাঁচ দিনের দিল্লি সফরের তাৎপর্য অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত রাজ্যের যোজনা আয়তন ঠিক করতেই এ দফা দিল্লি আসছেন মমতা। কিন্তু যোজনা কমিশনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ৯ তারিখ। তার পর তিন দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে বৈঠক করবেন তিনি। তাঁর সফরসঙ্গী অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া পেশ করবেন। কিন্তু এর পাশাপাশিই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হতে পারে। সংসদীয়মন্ত্রী কমল নাথের সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার তামিল নীতি প্রশ্নে ডিএমকে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে কংগ্রেসের তরফে যাঁরা মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কমল নাথ তাঁদের অন্যতম। তাঁর দৌত্য সফলও হয়েছিল। বিদেশ নীতির বিষয়টি কেন্দ্রের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন মমতা।
কংগ্রেসের অনেক নেতার মতে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে যত বেশি সম্ভব শরিক সঙ্গে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে কোনও একটি দলের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হবে না। তা ছাড়া, মমতার সঙ্গে বিরোধ বজায় রেখে তাঁকে বিজেপি শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়াও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ভুল হবে। বিশেষ করে মমতা নিজেই যখন নতুন করে সমঝোতায় আগ্রহী। রাজ্যের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়া তাঁর দলের পক্ষে আশানুরূপ ফল করা সম্ভব নয়। |
|
|
|
|
|