নাম কাটা যায় হইচইয়ের পর
পিয়ালিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুরোধ করেন মন্ত্রী
রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী সুপারিশ করার পরেই ওয়েটিং লিস্ট থেকে চার জনকে টপকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর আইন (এলএলএম) পাঠ্যক্রমে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন টিএমসিপি নেত্রী পিয়ালি মুখোপাধ্যায়। যদিও সংগঠনেরই একাংশের হইচইয়ে পরে তাঁর নাম কাটা যায়।
গত ২৬ মার্চ রাজারহাটে নারায়ণপুরের ফ্ল্যাটে পিয়ালির ঝুলন্ত মৃতদেহ মেলার পর থেকেই শাসকদলের কয়েক জন নেতা, বিশেষ করে এক মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা বারবার সামনে আসছে। সম্প্রতি তিনি যে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, তার পিছনে ওই মন্ত্রীর অবদান কতটা, তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে কী ভাবে সাহায্য করেছেন তা-ও পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পিয়ালি সম্প্রতি একটি ৩-৪ লক্ষ টাকার সোনার হার তৈরি করিয়েছিলেন। কিছু দিন আগেও যিনি আইনের ছাত্রী ছিলেন, তিনি এত টাকা কোথায় পেলেন তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে পিয়ালির যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তিনি যে মেয়েকে সাধারণত বাপের বাড়িতেই রাখতেন, তার কারণও জানার চেষ্টা চলছে। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ শনিবার বলেন, “আমরা সমস্ত সম্ভবনা খতিয়ে দেখছি। কিছু বিষয়ে ফের নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার কর্মীর মেয়ে পিয়ালির মন্ত্রীর নেকনজরে আসা এবং ক্ষমতার আঙিনায় চমকপ্রদ ‘উত্থান’ শুরু বছর তিনেক আগে। শুরুর দিকেই, ২০১১ সালের জুনে ঘটে এলএলএম পাঠ্যক্রমে ভর্তি হওয়ার ঘটনাটি। তার জন্য যে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে পিয়ালি ওয়েটিং লিস্টে পাঁচ নম্বরে ছিলেন। তখন সবে রাজ্যে নতুন সরকার এসেছে। বর্ধমানের দায়িত্বে থাকা এক অন্যতম নেতা মন্ত্রী হয়েছেন। সেই মন্ত্রীই পিয়ালিকে আইন পাঠ্যক্রমে ভর্তি করে নিতে ‘অনুরোধ’ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ২৪ জুন উপাচার্যের কাছে ভতির্র্র জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন পিয়ালি। ২৭ জুন উপাচার্য সুব্রত পাল তা মঞ্জুর করেন। সুব্রতবাবুর জানান, পিয়ালি তাঁকে বলেছিলেন, শরীর খারাপ থাকায় ভাল করে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে পারেননি। বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়। প্রয়োজনে তিনি এক মন্ত্রীর সুপারিশ আনতে পারেন। এ দিন উপাচার্য বলেন, “আমি ওঁকে বলেছিলাম, মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে এলেই যে ভতির্র্ করানো হবে, তার কোনও মানে নেই। তবে ওঁর কাতর আবেদন শুনে শেষে ভর্তি করতে নির্দেশ দিই।”
পিয়ালিকে ভর্তি নেওয়ার জন্য মন্ত্রী কি উপাচার্যের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন? উপাচার্যের জবাব, “না। উনি যে চিঠি দিয়েছিলেন, তাতে ‘রিকোয়েসটেড টু’ শব্দগুলি লিখেছিলেন।” কিন্তু চার জনকে টপকে পিয়ালিকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে শুনে তাঁর সংগঠনেরই একাংশ বাধা দেয়। আইন বিভাগের টিএমসিপি নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘরামির নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। উপাচার্য ভর্তির নির্দেশ বাতিল করে দেন।
সুব্রতবাবু বলেন, “যখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তখনও আমি ফের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। উনি সমস্যার কথা শুনে বলেন, ঠিক আছে, আপনি ওই নির্দেশ বাতিল করে দিন।” ৩০ জুন সেই নির্দেশ বাতিল করা হয়। কার্তিক ঘরামি বলেন, “পিয়ালির সঙ্গে আমার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল ছিল। কিন্তু তাই বলে অবৈধ ভাবে তাঁর এলএলএম পাঠ্যক্রমে ভর্তি হওয়া আমরা মানতে পারিনি।”
ইতিমধ্যে হুগলি মহসিন কলেজে নতুন এলএলএম বিভাগ খোলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়েটিং লিস্টে থাকা অন্য চার জনের সঙ্গে পিয়ালিও সেখানে ভর্তি হয়ে যান।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.