ঢাকায় বড় মাপের জমায়েত করে শাহবাগের অবস্থানকারীদের উপরে হামলা চালাল মৌলবাদীরা। তবে আন্দোলনকারীদের পাল্টা প্রতিরোধে তারা পিছু হটে যায়। জামাতে ইসলামির ছাত্র কর্মীদের ছোড়া ইটে অন্তত তিন জন অবস্থানকারী রক্তাক্ত হয়েছে। এ দিকে ধর্মনিরপেক্ষ কয়েকটি সংগঠনের ডাকা হরতালে এ দিন গোটা বাংলাদেশ ছিল স্তব্ধ। দোকানপাট খোলেনি, বাস ও অন্য যানবাহন রাস্তায় দেখা যায়নি, স্কুল-কলেজও ছিল বন্ধ। বিভিন্ন শহরে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিল বার করেন হরতালের সমর্থকরা। রাতে মশাল-মিছিলও হয়।
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার ও দেশে ইসলামি শাসন কায়েমের দাবিতে এ দিন বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে ঢাকায় লং-মার্চের ডাক দিয়েছিল হেফাজতে ইসলামি নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন। জামাতে ইসলামি ও বিএনপি তাদের সমর্থন জানায়। তাদের এই কর্মসূচির প্রতিবাদে এ দিন হরতালের ডাক দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন সেক্টর কম্যান্ডারস ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাস্কৃতিক জোট। |
জামাত কর্মীদের ইটে জখম যুবক। শনিবার ঢাকার শাহবাগে। ছবি: রয়টার্স |
শাহবাগের আন্দোলনকারীরাও প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন। আজ সকাল থেকেই ঢাকায় ভিড় জমায় বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা। ১০টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও সকাল ৭টাতেই বক্তৃতা শুরু করে দেন মৌলবিরা। কিন্তু কর্মীরা সভায় আসার পথে বিভিন্ন জয়গায় ভাঙচুর করতে থাকে। পুলিশের সামনেই মহাখালিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি সভাস্থলে হামলা চালায় উন্মত্ত মৌলবাদীরা। কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবীর দাবি করেছেন, তিনি ও সংগঠনের নেতারাই ছিলেন হামলার লক্ষ্য। কয়েকটি জায়গায় গণজাগরণ মঞ্চেও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশের হিসেবে অন্তত দু’লক্ষ মানুষ এ দিন মৌলবাদীদের সভায় ছিলেন। সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘নাস্তিকদের নেত্রী’ ও খালেদা জিয়াকে ‘ধর্মানুরাগী’ বলে বর্ণনা করা হয়। স্বাধীনতা-বিরোধী রাজাকারদের বিচারেরও বিরোধিতা করা হয়। চলে নানা ধরনের উস্কানি। এই সভায় যোগ দেন বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ঢাকার প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।
বিকেলে সবার শেষে এক দল মৌলবাদী স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে শুরু করলে পুলিশ গাড়ি দাঁড় করিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। কিন্তু তা অমান্য করে জামাতে ইসলামির সংগঠন ছাত্র শিবিরের ওই কর্মীরা এগিয়ে গিয়ে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। অবস্থানকারীরা তাদের পাল্টা তাড়া করলে তারা পাশের সোহরাবর্দি উদ্যানে ঢুকে পড়ে দেদার ইট ছুড়তে থাকে। তিন জন আন্দোলনকারী তাতে মারাত্মক ভাবে আহত হন। আন্দোলনকারীরাও সোহরাবর্দি উদ্যানে ঢুকে পড়লে শিবির-কর্মীরা পালাতে থাকে। পাঁচ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শাহবাগ। তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ করে হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলামও।
|