নকল করার সময়ে পরীক্ষার্থীদের খাতা কেড়ে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শকদের উপরে হামলা করার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর কলেজে তৃতীয় বর্ষের অনার্স পরীক্ষা চলার সময় এই ঘটনাটি ঘটে। পড়ুয়ারা পরিদর্শকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পাশাপাশি ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ। পরিদর্শকরা জানান, কেমন পরীক্ষা চলছে দেখতে তাঁরা এ দিন ইসলামপুর কলেজ যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিষয়ক মুখ্য পরিদর্শক প্রদীপ দত্ত বলেন, “কলেজে দেখি পরীক্ষার্থীরা টোকাটুকি করছে। ২৬ জনকে ধরে ফেলি। খাতা নিয়ে নেওয়ায় ওরা বহিরাগতদের জুটিয়ে কলেজ চত্বরে এসে আমাদের সহকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কি করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় খারাপ কিছু ঘটেনি। গাড়ির চালক মহম্মদ আসরাফকেও মারধর করা হয়েছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি।” ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্যের জনশিক্ষা গ্রন্থাগার মন্ত্রী তথা ইসলামপুর কলেজ পরিচালন সমিতি সভাপতি আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। পরিস্থিতি ঠিক আছে।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পরীক্ষা শুরু হয়। কলেজের তৃতীয় বর্ষের অনার্সের প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হলে পাঁচ জন পরিদর্শক কলেজে পৌঁছে যান। তাঁরা কয়েক জনকে নকল করার সময়ে ধরে ফেলে খাতা কেড়ে নেন। যদিও ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, নকল করেনি এমন কয়েকজনের খাতা পরিদর্শকরা কেড়ে নেন। ঘটনার পরে পরিদর্শকদের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। অভিযোগ, দরজা ভাঙার চেষ্টাও করে উত্তেজিত ছাত্ররা। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরীক্ষার্থীদের দাবি, কোনও শিক্ষককে গালিগালাজ বা ধাক্কাধাক্কি করা হয়নি। শুধু জানতে চাওয়া হয়, নকলের সঙ্গে মিলিয়ে না দেখে কেন খাতা নিয়ে নেওয়া হল। শিলিগুড়ি কলেজের প্রাণী বিদ্যার অধ্যাপক তথা পরিদর্শক দলের সদস্য উদয় মৈত্র বলেন, “ইসলামপুর কলেজে গত বছর ব্যাপক নকলের ঘটনা ঘটে। এ বছর পরিদর্শনে এসে নকল ধরা হয়। পরীক্ষার্থীদের এমন ব্যবহার আশা করিনি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।”
এ দিন যাদের নকল ধরা হয়েছে তাঁরা একটি পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাঁরা পরবর্তী পরীক্ষাগুলিতে বসতে পারবে। কলেজে অধ্যক্ষেরা ওই ঘটনা আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন বলে ওই পরিদর্শকদের দাবি। ইসলামপুর কলেজের অধ্যক্ষ উতথ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর আমাকেও হামলার মুখে পড়তে হয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মানিক ব্যাপারী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের হেনস্থা করে থাকলে সত্যি অন্যায় করেছে।” একই মত এসএফআইয়ের ইসলামপুর শহর সম্পাদক মোহিত অগ্রবালের। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা কলেজে আর আগে কখনও হয়নি। শিক্ষকদের সম্মান দেওয়া ছাত্রদের সাধারণ রীতি-বোধের মধ্যে পড়ে। সেটা ভুলে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।” |