অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু নিয়ে দীর্ঘদিন টানাপোড়েন চলছে। এ বার অনিশ্চয়তার মুখে বেঞ্চের স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজ। গত ২ মার্চ ওই কাজ শুরুর চার দিনের মাথায় ভবনের নকশা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা অসন্তোষ প্রকাশ করে রদবদলের নির্দেশ দেন। কোন ক্ষেত্রে রদবদল হবে সেটা রাজ্য সরকারকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে বিচারপতিরা জানান। ওই নির্দেশ পেয়ে স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। ফের কবে কাজ শুরু হবে তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আইন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি। স্থায়ী ভবনের নির্মাণও শুরু হয়েছিল। মাননীয় বিচারপতিরা এসে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশ মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কী অবস্থায় রয়েছে জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী, অস্থায়ী পরিকাঠামো? ৩১ ডি জাতীয় সড়কের জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে শুরু হয় স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ। কাজ বন্ধের নির্দেশের পরে মাস খানেক ধরে ফাঁকা পড়ে আছে ৪০ একর জমি। ডাই করে রাখা ইটের রং ফ্যাকাশে হতে শুরু করেছে। |
শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ছাউনির বেড়া টুকরো করে খুলে নিয়েছে কেউ। মাঠে গবাদি পশুরা চড়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় ৯০ হাজার বর্গফুটের চারতলা ভবন নির্মাণ কাজের জন্য যে শ্রমিক, সুপারভাইজার নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁরা ফিরে গিয়েছে। নির্মাণ যন্ত্রগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২ মার্চ প্রধান বিচারপতির পরিদর্শনের পরে ফের তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন তথা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। বন্ধ রয়েছে বিচারপতিদের অস্থায়ী আবাসন তিস্তা ভবন, সার্কিট হাউসের সম্প্রসারিত অংশ মিলিয়ে ৫টি স্যুইট। ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দে স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজের শুরুর দিন স্থায়ী ভবনের জমি পরিদর্শন করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বে চার বিচারপতির একটি দল। হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের তৈরি নকশা যথাযথ নয় বলে হাইকোর্ট মনে করছে। তবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, হাইকোর্টের পূর্বতন প্রধান বিচারপতির সময় ওই নকশা জমা দিয়ে অনুমোদন নেওয়া হয়। যদিও রাজ্য সরকারের ওই যুক্তি মানছে না হাইকোর্ট। |
সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে চিন্তা |
• ফাঁকা পড়ে ৪০ একর জমি।
• ফিরে গিয়েছেন শ্রমিক, পরিদর্শকেরা।
• যন্ত্রপাতিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
• পড়ে বরাদ্দ ৬০ কোটি টাকা। |
|
স্থায়ী ভবনের নকশায় কোন ক্ষেত্রে রদবদল হবে সেই বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরে নতুন করে ভবনের নকশা তৈরি করতে হবে পূর্ত দফতরকে। নতুন করে ভবনের নকশা তৈরি করা। পরে সেটার অনুমোদন নেওয়া সব মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি সময় প্রয়োজন বলে রাজ্য সরকার মনে করছে। ততদিন স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজও শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতো ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা কিছুতেই সম্ভব নয় বলে পূর্ত দফতরই জানিয়ে দিয়েছে। নতুন করে সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় ক্ষুদ্ধ বিভিন্ন মহল। সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয় কমিটির সম্পাদক বলেন, “দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী ভবনের নকশা অনুমোদন হয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। কাজ বন্ধ থাকা দুর্ভাগ্যজনক। হাইকোর্ট ও রাজ্য সরকার বৈঠক করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করুক।” তৃণমূলের আইনজীবী সেলের সর্বভারতীয় সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, “সার্কিট বেঞ্চের কাজ অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে। আশা করি সমাধান সূত্র বেরোবে।” |