পুলিশ ও সিআরপি-র লাগাতার টহলদারির জেরে দার্জিলিঙের রাজনীতির ছবিটা যেন এ বার বদলাচ্ছে। প্রায় ছ’বছর পরে শুক্রবার দার্জিলিং পাহাড়ের তিন মহকুমায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিরোধী দল জিএনএলএফ-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের মিছিল-সভায় উপচে পড়া ভিড় দেখে তেমনই ভাবছেন পাহাড়বাসীদের অনেকে। এমনকী ছ’বছর পরে সুবাস ঘিসিং আবার পাহাড়ে যেতে পারেন, এমন কথাও বলেছেন জিএনএলএফের নেতারা।
হুমকির সুর বদলেছে মোর্চাও। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি প্রদীপ প্রধান বলেছেন, “পাহাড়ে সব রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। ঘিসিং পাহাড়ে আসতেই পারেন। তবে উনি গোর্খাল্যান্ড চান না। উনি পাহাড়ে ষষ্ঠ তফসিল চান। তাই পাহাড়ের মানুষ ওঁর সঙ্গে নেই বলে আমাদের ধারণা। সেটা উনিও ফের বুঝতে পারবেন।” এত দিন অবশ্য ঘিসিংকে পাহাড়ে যেতে দেওয়া হবে না বলেই দাবি করতেন মোর্চা নেতারা। |
খোদ ঘিসিং জলপাইগুড়ির অরবিন্দনগরের ভাড়া বাড়িতে থেকেই মোবাইলে নির্দেশ আদানপ্রদান করেছেন। এ দিনের সভায় জিএনএলএফ নেতারা তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। বিভিন্ন সভায় তাঁরা জানান, পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য বাম আমলে প্রচুর বঞ্চনা হয়েছে। পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁরা ষষ্ঠ তফসিল চেয়েছিলেন, কেননা তাতে গোর্খাদের জাতিসত্তা স্বীকৃতি পেত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা হয়নি। তবে তাঁরা হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। তাঁরা রাজ্য সরকারেরও প্রশংসা করেন। তাঁদের বক্তব্য, এই সরকার আসার পরে লেপচাদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গড়েছে। গোর্খা জাতিসত্তাকেও এই সরকার স্বীকৃতি দেবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
মোর্চার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ সভায় করা হয়নি। জিএনএলএফ নেতাদের বক্তব্য, কোনও দলের সঙ্গেই সংঘাত চান না তাঁরা। তবে জিএনএলএফ অন্দরের খবর, মোর্চার কাজে বীতশ্রদ্ধ পাহাড়ের মানুষ যে বিকল্প দলের খোঁজ করছেন, তা এ দিন তাঁদের সভায় উপছে পড়া ভিড়েই স্পষ্ট। যে কারণে গুরুঙ্গরাও সুর পাল্টাতেও বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করছেন জিএনএলএফ নেতারা। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মহেন্দ্র ছেত্রী বলেছেন, “এতদিন মোর্চার বাধায় সভা করতে পারিনি। এখন সিআরপি থাকায় পুলিশও সক্রিয়। ফলে মোর্চা সব ক’টি বড় সমাবেশের জায়গা আগেভাগে কব্জা করলেও আমাদের কর্মী-সমর্থকদের আটকাতে পারেনি।”
মোর্চা পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েমের পরে বস্তুত, ২০০৩ সাল থেকেই ঘিসিং কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ওই সময়ে ঘিসিংকে পাহাড়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে ঘিসিং পাহাড়ে ফেরেন। কিন্তু মোর্চার রোষের
মুখে পড়ে ফের রাতের অন্ধকারে পাহাড় ছাড়তে হয় তাঁকে। ঘিসিং পাহাড় ছাড়া হওয়ার পর থেকে এতদিন কোনও কর্মসূচি নিতে পারেনি জিএনএলএফও।
সম্প্রতি পাহাড়ে সিআরপি মোতায়েন হয়। এর পরেই অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, জিএনএলএফের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে ছোটখাট সভা করতে শুরু করেন। তাই জিএনএলএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভিড় কেমন হয়, তা নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। ১১টি এলাকায় সমাবেশ হয়। সবচেয়ে বড় সভাটি হয়েছে কার্শিয়াঙের শিমুলবাড়িতে। সেখানে তাঁদের দশ হাজার সমর্থক ছিলেন বলে জিএনএলএফের দাবি। তাঁদের নেতা মহেন্দ্র বলেন, “যা হিসেব পেয়েছি, তাতে অন্তত ২৫ হাজার কর্মী-সমর্থকরা এদিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।”
কী বললেন ঘিসিং?
জিএনএলএফ নেতারা জানান, সভাপতি কারও সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে দলের কাজকর্ম বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ভিলেজ প্রোটেকশন সেল নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জোরদার করার কথা বলেছেন ঘিসিং। দু’মাসের মধ্যেই পাহাড়ে সভা করার ইচ্ছের কথাও ঘিসিং জানিয়েছেন বলে ওই নেতারা জানান। |