পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতবিরোধ যখন মামলা-মোকদ্দমায় পর্যন্ত গড়িয়েছে, তখন পুরভোট আয়োজনের প্রশ্নেও কার্যত ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিবেশ দানা বাঁধল দু’পক্ষের মধ্যে।
আগামী জুনে রাজ্যের ১৩টি পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। রাজ্য সরকার কবে ওই নির্বাচন করতে চায়, রাজ্যের পুর-সচিবকে চিঠি দিয়ে তা জানতে চেয়েছেন কমিশনের সচিব। কিন্তু চিঠি পাঠানোর এক মাস কেটে গেলেও সরকারের তরফে উত্তর আসেনি। কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “চিঠিটি মহাকরণে পৌঁছানোর পরে এক অফিসার আমাদের অফিসে টেলিফোন করেছিলেন। তবে কার্যকরী কথাবার্তা কিছু হয়নি। আমরা সরকারের জবাবের অপেক্ষায় আছি।”
বস্তুত রাজ্যের জবাব না-পেলে ১৩ পুরসভার নির্বাচনী নির্ঘণ্টই তৈরি করা যাবে না বলে জানিয়েছে কমিশনের এক সূত্র। এবং অভিযোগ, রাজ্যের এই ‘দীর্ঘসূত্রতা’ ঘিরেই সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। কী ভাবে? কমিশন সূত্রের দাবি: পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘উপেক্ষাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি’ থেকেই যাবতীয় জটিলতার উৎপত্তি। পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব সম্পর্কে কমিশন গত ডিসেম্বরে রাজ্যকে যে চিঠি পাঠিয়েছিল, মহাকরণ তার জবাব দিয়েছে তিন মাস পরে, গত মার্চে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত-মামলার শুনানিতে কমিশনের কৌঁসুলি সমরাদিত্য পাল সওয়ালে অভিযোগ তুলেছেন, রাজ্য সরকার এ ভাবে কমিশনের চিঠির জবাব না-দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবজ্ঞা করেছে। এ বার পুরভোট নির্ঘণ্টের প্রশ্নে রাজ্য সরকার তারই পুনরাবৃত্তি চাইছে কি না, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যে মাথা চাড়া দিয়েছে কমিশনের অন্দরে।
রাজ্য কী বলছে? এক মাসেও চিঠির জবাব কেন দেওয়া গেল না?
পুর দফতরের ব্যাখ্যা: কমিশনের চিঠি প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনও কোনও বার্তা আসেনি। সেই বার্তা না-পেলে পুর দফতরের পক্ষে চিঠির জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিকে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক পদস্থ কর্তার দাবি: রাজ্য সরকার কমিশনের চিঠির উত্তর দিতে তৈরি হচ্ছে। আপাতত খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ২০১০-এ মীরা পাণ্ডের আমলে রাজ্যে যে পুর নির্বাচন হয়েছিল, তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল। তার ভিত্তিতেই নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন-সহ পুরভোট সংক্রান্ত নানা বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র দফতর কমিশনকে পাঠাবে বলে জানিয়েছেন কর্তাটি। তাঁর বক্তব্য: পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে যে রকম সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, পুরভোটে তার প্রতিফলন রুখতে সরকার সচেষ্ট। তাই যত শীঘ্র সম্ভব স্বরাষ্ট্র-সচিব কমিশনের চিঠির জবাব দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
তবে নিছক আশ্বাসে কমিশন নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। তাদের বক্তব্য: জুনের পরে নভেম্বরেও রাজ্যে চারটি পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। যার প্রস্তুতি এখনই শুরু করা দরকার। কিন্তু ১৩ পুরসভার নির্বাচন নিয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত না-হওয়ায় পরেরটি নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করা যাচ্ছে না। “জুনে যে সব পুরসভার ভোট হওয়ার কথা, এখন সেগুলোয় ওয়ার্ড-বিন্যাস চলছে। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।” বলছেন কমিশন-সচিব।
ডায়মন্ড হারবার, গুসকরা, বর্ধমান, মেদিনীপুর, পানিহাটি, হাবড়া, চাকদহ, বালুরঘাট, ডালখোলা, আলিপুরদুয়ার, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি এবং দুবরাজপুর এই ১৩টি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে জুনে। নভেম্বরের নির্বাচন-সূচিতে রয়েছে হাওড়া, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর ও ঝাড়গ্রাম। কমিশন-সূত্রের খবর: অবাধ ও সুষ্ঠু পুর নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কর্মী সরবরাহের দায়িত্ব রাজ্যের। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইলেও পুরভোটে কমিশন কেন্দ্রীয় আধা ফৌজ চাইবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
২০১০-এর পুরভোট অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা-ছত্রচ্ছায়াতেই হয়েছিল।
|