শনিবারের নিবন্ধ
কান পেতে রই ...
কটা পেল্লাই ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় একটি মাত্র মাইক বসানো। আর তার দু’দিকে জনাকয়েক অভিনেতা-অভিনেত্রী স্ক্রিপ্টে চোখ রেখে এক মনে অভিনয় করে চলেছেন। যত নিবিড় ঘনিষ্ঠ দৃশ্যই হোক না কেন, নায়কের নায়িকার দিকে তাকানোর সিন নেই এখানে। তাকালেই মাইক থেকে মুখ সরে যাবে। গলাটা ভাল শোনাবে না। চলাফেরা নেই, এক্সপ্রেশন নেই অথচ সব রসটুকু পৌঁছে দিতে হবে শ্রোতাকে। অনেকখানি ডেডিকেশন না থাকলে কি এটা করা সম্ভব? গলা দিয়ে ড্রইং করতে করতে চরিত্রগুলোকে মূর্ত করে তোলা কি এতই সহজ!
‘আজকের নাটক’ শুক্রবার, শনিবার, রবিবার আর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার (লং প্লে) বাঙালি শ্রোতাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, গত কয়েক দশক ধরে। কারণটা আর কিছুই নয়, কিছু সৃজনশীল মানুষের নিত্য অনুসন্ধান ছিল এই মাধ্যমটিকে জানতে, বুঝতে। শুধু অভিনয় কেন, এফেক্টস, মিউজিক এসবের জন্য তাঁরা কী অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন, তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
লাইভ ব্রডকাস্টের সময় ঘরময় ছড়ানো থাকত কয়েকটি মিউজিকের যন্ত্রপাতি- ঘুঙুর, ঝাঁজ, খঞ্জনি, ঘণ্টা, শাঁখ। একবার কোনও একটি নাটকে গুলির শব্দের দরকার ছিল। বীরেনদা’র (ভদ্র) নির্দেশে স্টুডিয়োয় বেলুন ফাটিয়ে ছিলেন অজিত মুখোপাধ্যায়।
একদিন তো বীরেনদা বেশ কিছু খড়মড়ে কাগজের টুকরো নিয়ে পাঁচ নম্বর স্টুডিয়োতে ফেলে তার ওপর দিয়ে ছেলেমানুযের মতো হেঁটে চলে বেড়াতে লাগলেন। আর রেকর্ডিং রুমে শব্দযন্ত্রীদের মনে হল, বনজঙ্গলে শুকনো পাতার মধ্যে দিয়ে একজন হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
এফেক্ট সৃষ্টি করতে গিয়ে দু’এক প্রজন্ম ধরে বেতার কর্মীরা খ্যাপার মতো খুঁজে খুঁজে ফিরেছেন সঠিক পথের সন্ধান।
একবার এই নিবন্ধকার সন্ধের অন্ধকারে টালা পার্কের নর্দমার সামনে টেপ রেকর্ডার হাতে ঘোরাফেরা করেছিলেন, শুধু এটুকু বুঝতে - জলের আওয়াজটা কুলুকুলু, ঝিরিঝিরি, নাকি ছলাৎ ছলাৎ?
সত্যজিতের সায়েন্স ফিকশন ‘সেপ্টোপাসের খিদে’ নাটকে একটি সিকোয়েন্স ছিল - সাতটি শুঁড়ওলা ক্ষুধার্ত সেপ্টোপাস একটি মুরগিকে গিলে নিচ্ছে। প্রয়োজন ছিল মৃত্যুভয়ে ভীত মুরগির ছটফটানি।
শব্দ সংযোজক নালু মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে বেহালার একটি বাড়িতে গিয়ে পোষা একটি মুরগিকে লাঠি নিয়ে ধাওয়া করেছি তাকে উত্ত্যক্ত করার জন্য। যাতে তার দু’তিনটি পালক খসে গিয়েছিল। এফেক্টটি দারুণ পাওয়া গেল। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের শেষে দেখা গেল, যে ভদ্রমহিলার মুরগি, তাঁর চোখ দিয়ে জল ঝরছে।
অনেক সময় আসল শব্দের রেকর্ডিং করেও সঠিক শব্দের আভাসটি আনা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ বিস্ময়কর ভাবে সেটি মিলে যায়, নকল জিনিস দিয়ে তৈরি করা রেকর্ডিংয়ে।
অবিকল সমুদ্রের গর্জন রেকর্ড করলে সেটা শোনায়, অনেকটা ফ্যাক্টরির একঘেয়ে মেশিন চলার ঘর্ ঘর্ শব্দের মতো। কিন্তু কৃত্রিমভাবে শব্দবিজ্ঞানের সাহায্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের এফেক্ট আনা অসম্ভব নয়।
আর একটি দৃষ্টান্ত দিতে ইচ্ছে করছে। এই প্রতিবেদকের প্রযোজনায় মতি নন্দীর ‘স্টপার’ নাটকের একটি দৃশ্য থেকে। পুরোনো দিনের বিখ্যাত ফুটবল কোচ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। তিনি তাঁর প্রিয় ছাত্রকে বললেন, তাঁর সামনে বল নিয়ে একবার ‘ড্রিবল’ করতে। ওই দৃশ্য দেখতে দেখতে তিনি তৃপ্তির সঙ্গে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চান।
সিকোয়েন্সটি ছিল ব্যতিক্রমী। এবং নাটকীয়। রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে এসে গেল আসল ফুটবল, রেকর্ডও করা হল। কিন্তু কী রকম একটা ধবধবে আওয়াজে দৃশ্যটির গভীরতা পাওয়া গেল না। অথচ বড় রবারের বল দিয়ে দৃশ্যটির বাঞ্ছিত মুডটিকে সহজেই ধরা গেল।
সত্যজিৎ রায় কৃত্রিম ভাবে ধ্বনি সৃষ্টির কৌশল সম্পর্কে আমাকে অনেক গুপ্ত তথ্য দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটির কথা তো বলতেই পারি। একদিন বললেন, “তুমি আমার চিড়িয়াখানা দেখেছ?” বললাম, “হ্যাঁ, দেখেছি।” তাতে তখন বললেন, “এক জায়গায় ‘ভালবাসার তুমি কি জানো’ গানটার সময় পুরোনো দিনের মরচে পড়া স্ক্রিন খোলার ঘিস্ ঘিস্ মৃদু আওয়াজ ছিল। সেটা কী ভাবে করেছি জানো?” বলেই উনি যুবকের মতো ক্ষিপ্রবেগে উঠে পড়লেন। সরু একটা নতুন ছাতা নিয়ে এলেন। ছাতাটা এমনভাবে টেনে মেঝেতে ঘষলেন যে ঘর্ষণে অদ্ভুত একটা শব্দ বেরিয়ে এল। বললেন, “এটাই সেই শব্দ।”
কিছু কিছু হরবোলা ছিলেন, যেমন রবীন ভট্টাচার্য, সুনীল আদক, রাধাবল্লভ পাল এঁরা এমন এমন সব ধ্বনি সৃষ্টি করতে পারতেন, যা কৃত্রিম যন্ত্রপাতি দিয়ে করা সম্ভব হত না। আকাশবাণী কলকাতা নাট্যবিভাগ তাঁদের কাছে অনেক ভাবে ঋণী।
এ বারে একটু নাট্য অভিনয়ের কথায় আসা যাক। সে সময় রিহার্সালের খুব কড়াকড়ি ছিল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, শ্রীধর ভট্টাচার্য, বাণীকুমার, প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায় এঁরা সব মহড়ার ব্যাপারে ছিলেন দারুণ সিরিয়াস। ছড়িটাই শুধু থাকত না। কিন্তু কেউ দেরিতে এলে বা না এলে কোনও ওজর-আপত্তি শুনতেন না। বরাতে অনেক তিরস্কার জুটত ফাঁকিবাজি অভিনেতার। ক্রমে ক্রমে দিন বদলাতে লাগল। রিহার্সাল এ বার দাঁড়াল তিন দিনে।
আর এই প্রতিবেদকের সময় দু’দিনের জন্য শিল্পীদের মহড়ায় আনাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। এখন তো শিল্পীরা রেকর্ডিংয়ের দিনেই আসেন। তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন - এভাবেই রেকর্ডিং হয়ে যায়।
এই তরুণদের অনেকের মধ্যেই অভিনয় আছে। দক্ষ বটে, তবে প্রাণের কোথায় যেন অভাব! বেচারি প্রযোজক কী বা করতে পারেন এখন!
গিরিশচন্দ্রের ‘প্রফুল্ল’ নাটকে অহীন্দ্র চৌধুরীর (বাঁ দিক থেকে চতুর্থ) সঙ্গে অন্যরা
পুরোনো কথায় ফিরি। প্রথম দিকের রেডিয়ো নাটক ছিল থিয়েটার-মুখী। ধীরে ধীরে থিয়েটারের খোলস ছেড়ে বেতারের আসল স্বরূপটি চিনতে পারছিলেন বেতার প্রযোজকরা। আর এ ব্যাপারে শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্র জুটির কথা বলতেই হবে। তাঁরা বেতার নাটককে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যা বিশ্বমানের সঙ্গে তুলনীয়।
শম্ভুদা’কে দেখতাম, খুব ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও ওঁর মুখে কোনও অভিব্যক্তি ফুটত না। ‘ঘাতক’ নাটকটির কথা মনে পড়ছে। প্রযোজনা অজিত মুখোপাধ্যায়ের। বিমল করের কাহিনি। নাটকে শম্ভুদার স্ত্রী চিররুগ্ণা। ওঁর শালী মাধবীর চরিত্রে ছিলেন তৃপ্তিদি। শালীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ঝড়বৃষ্টির রাতে আটকা পড়েন ওঁরা।
সে রাতে ওঁদের মধ্যে কামনার ঝড় বয়ে যায়। নিজের হাতের তালুতে ঠোঁট রগড়ে শম্ভুদার সেই সংলাপ “মাধবী, মাধবী আমি তোমায় ভালবাসি, মাধবী....” অসম্ভব কামাক্ত, আবেগঘন। চাপা পড়া প্রেম সাময়িক মুক্তির রাস্তা খুঁজে নিচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেও মিশে আছে কখনও গোঙানি, কখনওবা হাহাকার। আবার শরীরী মিলনের সুখও। এর সবটা ফুটে উঠত ওঁর গলায়। অথচ মাইকের সামনে বসা শম্ভুদার চোখেমুখে তার লেশমাত্র ছাপ থাকত না। বেতার আর মঞ্চের নাটককে একেবারে আলাদা গোত্রের ধরতেন তিনি।
এদিক থেকে অজিতেশ বা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একেবারে আলাদা। আমার প্রযোজনায় ‘ফয়সালা’ নাটকটার কথা মনে পড়ছে। রানিগঞ্জের কয়লা খনির শ্রমিক মালকাটাদের নিয়ে।
নাটকে এক দাদার চরিত্রে ছিলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদা-ভাইয়ের ঝগড়ায় ওঁকে দেখলাম, গোটা শরীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। থর থর করে কাঁপছেন আর সংলাপ বলছেন, ‘ছাড়ান দে, ছাড়ান দে...’। অল্প পরেই রাগের বশে ভাইকে ধাক্কা মারার একটা ব্যাপার ছিল। তখন উত্তেজনায় হাতের স্ক্রিপ্টটাই ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি। অজিতেশ বা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই বেতার নাটককে মঞ্চাভিনয় থেকে আলাদা করে দেখতেন না। ওঁদের কাছে ফারাকটা ছিল শুধু অভিনয় মাত্রার বা ‘মাপের’।
সে একটা সময় গিয়েছে তখন। ইথার তরঙ্গে ভেসে আসত কিংবদন্তি অভিনেতাদের স্বর্ণকণ্ঠ। বৃহস্পতি, শনি, রবিতে হাততালির বন্যা বইয়ে যাঁরা দর্শকদের মাত করে দিতেন, তাঁরাই আসতেন শুক্রবার রাতে রেডিয়ো স্টেশনের স্টুডিয়োতে। শিশির ভাদুড়ি (কালেভদ্রে), অহীন্দ্র চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, মলিনাদেবী, সরযূবালাদেবী কে নন? এই সব প্রথিতযশাদের দর্শক দেখতে পেত না, সাজসজ্জার বালাইও ছিল না, ছিল না মঞ্চের মায়াও। শুধুমাত্র কণ্ঠ দিয়েই তাঁরা চোখের সামনে একটি ছবি তুলে ধরতেন।
এই ভাবেই কেটে গেল দু’একটি দশক। ষাট-সত্তর দশক থেকে আমরা যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছি, তখন এলেন আরেক দল অভিনেতা। যাঁদের বেতার অভিনয় দেশে, বিদেশে, প্রবাসে থাকা বাঙালিরা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। যেমন নির্মলকুমার, জয়ন্ত চৌধুরী, নীলিমা দাস, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমাংশু বসু, বীরেশ্বর সেন, শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে মাঝে ভাবি, এঁরা যে মানুষের এত কাছে পৌঁছতে পেরেছিলেন তার একটাই কারণ তাঁদের আন্তরিকতা, ডেডিকেশন।
সত্যজিৎ রায়ের ‘সেপ্টোপাসের খিদে’ বেতার নাট্যে প্রযোজক ও শিল্পীরা
সে সময় রেডিয়ো নাটক এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, কলেজ ছাত্রী পরীক্ষার আগের রাতেও লুকিয়ে চুরিয়ে শুনত। মুমূর্ষু রোগীর কাছেও অক্সিজেনের মতো ছিল রেডিয়ো নাটক।
কোনও শুক্রবার রাতে একটি অঞ্চল দিয়ে হাঁটতে থাকলে পর পর কানে আসত বিখ্যাত সব কণ্ঠস্বর। এ রকম অভিজ্ঞতা আরও অনেকেরই আছে।
সে সময় বেতার কর্তৃপক্ষ দুটি পত্রিকা বের করত। একটি ইংরেজিতে, যার নাম - ‘আকাশবাণী’-- আর অন্যটি বাংলায় ‘বেতার জগৎ’। কিন্তু আধিকারিকদের একটি সমস্যা ছিল প্রচারিতব্য নাটকের শিরোনাম, নাট্যকারের নাম, এমনকী গল্পটির সংক্ষিপ্তসার দিতে হত দু’মাস আগেই। সেটি করতে গিয়ে আধিকারিকদের ল্যাজে-গোবরে অবস্থা হত! তখন তাঁরা ফন্দি করে নাটকের একটা কল্পিত নাম বসিয়ে দিতেন। ধরা যাক, নাটকের নাম ‘ঝড়ের রাতে’।
গল্পটি হল এই রকম ঝড়ের রাতে বীণা আর অভিষেকের দেখা হল কুড়ি বছর পর। বিদ্যুতের আলোয় তারা পরস্পরকে চিনতে পারল, কী হল তার পর?
এ বার যে নাট্যকারকে ঠিক করা হল, তাঁর অবস্থাটা ভাবুন! বীণা আর অভিষেককে নিয়ে তাঁকে বানাতে হবে এক ঘণ্টার নাটক। শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে বেতারের আদি কাণ্ডে এই সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটত।
তবু এ দেশে নামকরা সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাসের নাট্যরূপ, দেশ-বিদেশের ধ্রুপদী কাহিনি বারবার সম্প্রচার করেছে বেতার। যা থেকে উপকৃত হয়েছেন বহু নিরক্ষর ও দৃষ্টিহীন মানুষ যাঁরা কোনও দিন বই খুলে পড়তেন না, তাঁরাও জানতে পেরেছেন ধ্রুপদী সাহিত্যকে, শুধুমাত্র বেতারের জন্য।
এত কিছুর পরেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা এই সব উত্তাল সময়ের সাক্ষী হতে পারেনি বেতার নাটক। কারণ সব সময় তার ঘাড়ে চেপে থেকেছে সেন্সর ব্যবস্থার কড়াকড়ি। তবুও সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নাটক আধুনিকতায় ও অভিনবত্বে সব সময় নতুন পথের দিশা দেখিয়েছে বেতার।
প্রশ্ন হল, হাতিবাগানের ব্যবসায়িক মঞ্চের মতো আকাশবাণীর বেতার নাটকও কি অবলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে? বেতার নাটকের প্রযোজক কি এখন সংকটে? অথচ ডেডিকেশনের তো অভাব নেই। সে সময়, বাঙালি শ্রোতার কাছে বিকল্প বিনোদন বলতে বিশেষ কিছু ছিল না রেডিয়ো নাটক ছাড়া। আর এখন কত সুযোগ! বাড়িতে বসে ডিভিডিতে সিনেমা, অজস্র এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেলগুলোতে অবিরত সিরিয়াল, বেসরকারি এফএম চ্যানেলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান, এ সব নিয়েই আছে আজকের প্রজন্ম। সময় কোথায় তার পুরোনো দিনের ক্লাসিক গল্পের নাট্যরূপ শোনার?
রবীন্দ্রনাথের একটি রচনার কথা মনে পড়ে গেল, ‘নতুন পুতুল’। গরিব ঘরের মেয়ে সুভদ্রা রাজকন্যাদের কাছে পুতুল বেচতে গেল। দ্বারী বললে, এ পুতুল চলবে না। নতুন দিনের শিল্পী বললে, দাও তো ওই পুতুলের সাজ একটু ফিরিয়ে দিই, ঠিক বিক্রি হয়ে যাবে। আকাশবাণী কলকাতার আজকের নাটক পুরোনো দিনের পুতুল। রং ফেরালেই সে সেলেবেল হয়ে উঠবে। এখন সাজ ফেরানোর জন্য যথার্থ যোগ্য কারিগরের প্রয়োজন। অপেক্ষায় থাকলাম।

সাত কাণ্ড
কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম নাট্যধর্মী অনুষ্ঠান ‘মাইক্রোড্রামা’ প্রচারিত হয় ১৯২৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৪৫-এ।
কলকাতা বেতারে প্রথম বাংলা নাটক প্রচারিত হয় ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের লেখা ‘নরনারায়ণ’ ১৯২৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৪৫। নাটকটির নির্বাচিত অংশের ও কর্ণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শিশির ভাদুড়ি।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকটি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার থেকে রিলে করা হয়েছিল সন্ধে ৬ টা ৩০য়ে। নাটকটির প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।
শচীন সেনগুপ্তের ‘রক্তকমল’ নাটকটি প্রচারিত হয় ১৯৩০ সালের ২৪ জানুয়ারি। নাটকটির জন্য গান লিখেছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম।
আকাশবাণীর সপ্তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র একটি আত্মসমালোচনামূলক রঙ্গরসের নাটক লিখেছিলেন। নাম ‘ঝঞ্ঝা’। নাটকটির বিষয় ছিল বেতার কেন্দ্রের নানা ভুলত্রুটি নিয়ে নিয়ে রঙ্গব্যঙ্গ। রেডিয়োতে যিনি যে পদে ছিলেন, তিনি সেই চরিত্রেই অভিনয় করেন।
একবার রেডিয়োতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ নাটকটি অভিনীত হয়। সেখানে অভিনয় করেন বিভিন্ন লেখক। যেমন প্রমথ নাথ বিশী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ বসু, সজনীকান্ত দাস, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও পরিমল গোস্বামী।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট শুক্রবার সন্ধে ৬টা ৪৫ মিনিটে যে নাটক প্রচারিত হবে বলে ‘বেতার জগৎ’-এ জানানো হয়েছিল, তার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নাটকটি সেদিন প্রচারিত হয়নি।

ঋণ: বেতারনাটক ১৯২৭-১৯৭৭, নিখিলরঞ্জন প্রামাণিক (কলকাতা বেতার, সম্পাদনা: ভবেশ দাশ, প্রভাতকুমার দাশ)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.