|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
|
প্রয়াণের পর পণ্ডিত রবিশঙ্করের প্রথম জন্মদিন সাত এপ্রিল। তার আগে বারাণসীর নির্জন ঘাটে
এক
সকালে তাঁর মুখোমুখি উস্তাদ বিলায়েৎ খান। অভিমান, অনুযোগ, ঈর্ষা, ক্ষোভ থেকে মহব্বত,
এমনকী দুঃসহ শৈশবের কথাতেও অকপট ওঁরা। দুই মহারথীর সঙ্গলাভের স্মৃতি
হাতড়ে এই
কল্প-আড্ডার সংলাপ গাঁথলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য |
কল্পিত সংলাপ ঠিকই। কিন্তু এর অধিকাংশ কথা কখনও না কখনও বলা হয়েছে এবং রেকর্ড করাও হয়েছে। সেই সব কথাই একটা নতুন মাত্রায় সাজানো হল এ বার, পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও উস্তাদ বিলায়েৎ খানের জীবন ও চরিত্রের প্রতি সমান ধ্যান রেখে। আজব আড্ডা, কিন্তু বাস্তবে মুখর।
প্রতিবেদক
পণ্ডিত রবিশঙ্করের থেকে ক’বছর আগেই স্বর্গে এসেছেন উস্তাদ বিলায়েৎ খান। ওঁর বেলায় সে জায়গাকে জন্নত বলতে হবে? ‘কিঁউ’? প্রশ্ন করে জোরে জোরে মাথা নাড়লেন খান সাহেব।
‘‘শঙ্করবাবু তুমি কি জানো না কিষেণজি, নট কিষেণ মহারাজ, দ্য গ্রেট শ্রী কিষেণজি আর আমার জন্ম একই দিনে? জন্মাষ্টমী।’ অমনি মুচকি হেসে পাশ থেকে ফুট কাটলেন রবিশঙ্কর, “কী সৌভাগ্য কিষেণজির! এত দিন থাকতে ঠিক তোমার জন্মদিনেই জন্মাতে পারলেন!”
‘‘দাঁড়ান, দাঁড়ান রবুদাদা। এর জবাব আপনাকে দেব ঠিক জায়গায়। ফার্স্ট লেট মি ফিনিশ....”
রবিশঙ্কর আমাকে ছোট্ট একটা খোঁচা মেরে বললেন, “নাও হি ইজ ইন হিজ মেটল্। শুনে যাও।” বিলায়েৎ খান খোঁচাটাও দেখেছেন, কথাটাও শুনেছেন। বললেন, “রবুদা, এ রকম একটা আড্ডা আমাদের লাইফটাইমে কেন হল না? শুধু এর মুখে ওর মুখে কথা শুনে নিজেদের মধ্যে ডিসট্যান্সই বাড়িয়ে গেলাম?”
শুধু একটি দিন। একটু আড্ডার জন্য স্বর্গ/ জন্নত থেকে নেমে এসেছেন রবিশঙ্কর ও বিলায়েৎ খান। পৃথিবীর দু’টি সেরা সুর, সেরা কল্পনা। ওঁদের নিয়ে বসেছি এক সকালে বারাণসীর এক নির্জন ঘাটে।
জায়গাটা পছন্দ করেও রবিশঙ্কর বলেছিলেন, “ও যদি চায় তো আমি ওর দেরাদুনের পাহাড়েও যেতে পারি।”
তা শুনে বিলায়েৎ বলেছেন, ‘কিঁউ? দাদা বয়সে সিনিয়র। দেরাদুনে আমার বাড়িতে এসেওছেন। আর বনারস তো হমারে মিউজিককা বেথলেহেম হ্যায় যঁহা লর্ড ক্রাইস্টনে পয়দা হুয়ে থেঁ। আর রবুদাদা যখন এত আদর করে ডেকেছেন, তা কি ফিরানো যায়! বস্ করো ভাই, চলো বনারস।” |
উস্তাদ বিলায়েৎ খান |
পণ্ডিত রবিশঙ্কর |
|
আমি (বিলায়েৎ খানকে): রবুদা’র আদর নিয়ে কী একটা বলছিলেন দাদা?
বিলায়েৎ খান: আমি আর কী বলব! দাদা তো নিজেই কী সুন্দর বলে দিয়েছেন ওঁর প্যার মুহব্বত নিয়ে ‘রাগ-অনুরাগ’-এ। আমি তো সির্ফ কমেন্ট করলাম।
রবিশঙ্কর: ভাই, তোমারও তো প্রেমট্রেম কিছু কম হয়নি জীবনে। তো?
বিলায়েৎ খান: ডিনাই করছি না। হয়তো আপনার চেয়ে একটু কম কী একটু বেশিই। কিন্তু....
রবিশঙ্কর: কিন্তু ঝেড়ে কাশলে না, তাই তো?
বিলায়েৎ খান: এই শঙ্করবাবুটা কম খুঁচায়নি যখন ‘কোমল গান্ধার’ বই হচ্ছিল। কিন্তু মাই ফার্স্ট অ্যান্ড ফ্যাসিনেটিং লভ অ্যাফেয়ার নিয়ে বলেও বললাম আমার লায়লার নাম গুম রাখবে এখন। ওর তো ফ্যামিলি আছে। আমার মৌত হয়ে গেলে দুনিয়াকে জানাতে পারো।
আমি: বইতে অ্যাফেয়ারটা আছে। নাম নেই। আপনি চলে যাবার পর নাম জানিয়েছি।
রবিশঙ্কর: কার কথা হচ্ছে? নসরিন? আমরা তো সেই কবে থেকেই জানতাম। অফকোর্স ইন আ ভেরি লিমিটেড সার্কল।
বিলায়েৎ খান: (হাসতে হাসতে): আপনি আমার কোন খবরটা রাখেন না স্যার? কোথায় কোন রাগ কতক্ষণ বাজিয়েছি, কোথায় জমিয়েছি, কোথায় মুড পাইনি, সব খবরই তো চলে আসত আপনার কাছে।
রবিশঙ্কর (স্মিত মুখে): ওসব থাক, তুমি নসরিনের গল্পটা বলো...। ওকে কি নেগলেক্ট করেছিলে?
বিলায়েৎ খান: নেগলেক্ট! কী বলছেন দাদা? ও তো মেরি আঁখোকে নুর থি। আমি তো বিলকুল ফিদা ছিলাম। কিন্তু অন্য একটা ইস্যু দাঁড়িয়ে গেল যার মুকাবলা করা গেল না। আমার মা-ই বললেন এ বিয়ে হতেই পারে না।
রবিশঙ্কর: কেন পারে না? ও ফিল্মস্টার ছিল বলে?
বিলায়েৎ খান: না, না, ফিল্মস্টার তো তখনও হয়ইনি। ফিল্মে নামব-নামব করছে।
রবিশঙ্কর: তা হলে আপত্তি কোথায়?
বিলায়েৎ খান: ফ্যামিলি।
রবিশঙ্কর (চমকে): ফ্যামিলি! অনজুমান আরা বেগমের মতো অত্ত বড় গায়িকার মেয়ের আর কী পরিচয় চাই?
বিলায়েৎ খান: মাদার ওয়জ নট দ্য প্রবলেম। প্রবলেম হয়ে গেল অন্য জায়গায় ...আমাদের আব্বা একই জন। দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি উস্তাদ ইনায়েৎ হুসেন খান সাব।
রবিশঙ্কর (নামটা শুনে শ্রদ্ধায় কানে হাত ছোঁয়ালেন): আই লাভড হিজ সিতার। তুলনাহীন... তবে তোমার অ্যাফেয়ারটারও তুলনা হয় না। গল্প করে লেখার মতো। (তার পর আমার দিকে তাকিয়ে) এটা নিয়ে গল্প লেখোনি?
|
|
আমি: লিখেছি।
বিলায়েৎ খান: ঠিক আছে। ও যা লিখেছে, লিখেছে। এবার আমার কাছ থেকেই শুনে নিন। আপনি তো জানেন, আমি মা’র অনুরোধে সেতার বাজাতে বাজাতে গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আম্মা একদিন রাত্তিরে আমার বাজনা আর গান শুনে বাড়ি এসে বললেন, ‘মিঞা খান উনি আমাকে এভাবে ডাকতেন তুমি গান ছেড়ে দাও। স্টেজে শুধু সেতার বাজাবে, যেটা তোমার আব্বার ঘরানার জিনিস। আমার ঘরের জিনিস হল গান, কিন্তু আমি চাই তুমি তোমার আব্বার ঘরের দিক সামলাবে।’ বহৎ রোনা আয়া থা, রবুদা। কিন্তু আমি এক কথায় ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর এই আম্মাই আমাকে বম্বেতে বলতে লাগলেন, তুমি আরও সবুর করো। এখনই শাদি কোরো না।
রবিশঙ্কর: উনি কি জানতেন, মেয়েটা নসরিন?
বিলায়েৎ খান: হাঁ হাঁ , নিশ্চিত করে। তাই না আমাকে বিলেত পাঠানোর বন্দোবস্ত করলেন, যাতে আমি মেয়েটার থেকে দূর হয়ে পড়ি।
রবিশঙ্কর: ইউ মিন, ফিফটি ওয়ানে ইংল্যান্ডে যে এম্পায়ার কনফারেন্স হয়েছিল?
বিলায়েৎ খান: হাঁ হাঁ, ওটাই (তারপর আমার দিকে তাকিয়ে) তোমাকে তো বলেইছি কী সাঙ্ঘাতিক রেসপন্স সেই ট্রিপে আমার। ওয়ার্ল্ডস বেস্ট অ্যাক্টর-অ্যাকট্রেসদের সঙ্গে স্টেজে পারফর্ম করছি। আর রেগুলার কাগজে বেরোচ্ছে, ‘দিস ল্যাড ইজ আ মির্যাকল’। কিন্তু আমার মন পড়ে আছে বম্বেতে, কবে ফিরব! প্রতি হপ্তায় এক বার করে যাই, আমাদের হাইকমিশনার ভি কে কৃষ্ণমেননের ঘরে। একটাই আর্জি, ‘আমাকে ছেড়ে দিন, বাড়ি যাব।’ উনি বুঝতেই পারেন না, কেন আমি বাড়ির জন্য কান্নাকাটি করি। শেষে যেদিন বললাম, ‘আই অ্যাম ইন লাভ।’ সে দিন উনি অনেক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর বললেন, ‘এই জন্যই তোমরা শিল্পী, আমরা শিল্পী নই। ইউ ক্যান স্যাক্রিফাইস এভরিথিং ফর লাভ।’
রবিশঙ্কর: চলে এলে?
বিলায়েৎ খান: আর তাতেই তো যত গোলমাল। এসে দেখি, আমার প্রেমিকা ফোনই তোলে না। আর তুললেও কী রকম উখড়া উখড়া ভাব। আমার মনে হল ও আমাকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে। কিংবা সিনেমার জন্য আমাকে ছেড়ে যাওয়ার তাল করছে। মাকে বললাম, কিন্তু তিনি তখনও হ্যাঁ বলছেন না।অথচ আমি তো ওকে পেতে চাই-ই। মন মেজাজ এতই খারাপ যে একটা জনি ওয়াকার বোতল নিয়ে সারা রাত ধরে খেলাম। তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলাম মাটিতে। সকালবেলা আমাকে ওই অবস্থায় দেখে আম্মা বললেন, ‘মিঞা খান, গাড়ি বার করো, তোমার মেয়েটাকে দেখতে যাব।’ চান-টান করে আমরা গেলাম মেরিন ড্রাইভে অনজুমান আরা বেগমের বাড়িতে।
রবিশঙ্কর (অস্ফুটে): ফ্যাসিনেটিং! অনেকটাই জানতাম। কিন্তু এত ভিভিডলি নয়।
বিলায়েৎ খান: আপনাদের বাংলা ছবিতে একটা ডায়লগ আছে না রবুদা দিলীপকুমার বলছেন, ‘এই তো জীবন কালীদা’।
রবিশঙ্কর: তোমার লাইফ তো আরও সেনসেশনাল দেখছি!
বিলায়েৎ খান: তা হলে শুনুন, আমরা গিয়ে বাড়ির দরজায় দাঁড়াতে নসরিন বেরিয়ে এল। আম্মাকে দেখে বলল, বেগম সাহেবা, আপনি এসেছেন, বসুন, বসুন। মা শুধু বলল, না বেটি আমরা বসব না। বলতে বলতেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন দ্যাট গ্রেট আর্টিস্ট অনজুমান আরা বেগম। আর মা বলে উঠলেন, ‘বহেন এদের বলে দাও, এটা কি সত্যি নয়, যে ওদের বাবা একই জন?’ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো যে ওই কপাল, ওই নাক, ওই চোখ, ওই মুখ একই রকম কিনা?’
রবিশঙ্কর (বিস্ময়ে বিস্ফারিত চোখ): স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।
বিলায়েৎ খান: মগার এ হি থা জিন্দেগি! কে যেন আমার পায়ের তলা থেকে সারা জমিন উঠা লিয়া (উনি মাথা নিচু করে দু’আঙুলে দুটো চোখ টিপে ধরলেন)। প্লিজ, এক্সকিউজ মি। পুরুষ লোকের চোখে জল আসা ঠিক না। আই উইল নট ক্রাই। ওইখানেই আমাদের লাভ স্টোরি শেষ হয়ে গেল। ও নিয়ে আর কিছু বলব না।
রবিশঙ্কর: কেউ তো গল্পটাকে সিনেমা করলেই পারে। নামটাম এ দিক-ও দিক করে।
বিলায়েৎ খান: বেশ আছেন দাদা। সব আমার ওপর দিয়ে চলবে...! আমারও তো খুব জানতে ইচ্ছে করে কি, অন্নপূর্ণাজিকে নিয়ে অত কম বললেন কেন আপনার বইয়ে? মিঞা-বিবির এত বিউটিফুল কম্বিনেশন হয় নাকি দুনিয়ায়! আমি শঙ্করবাবুর থেকে আপনাদের সুরবাহার-সেতারের ইমনকল্যাণ শুনে থ! শুধু একসঙ্গে ট্রেনিং নয়, দেয়ার ইজ বহত প্যার অউর না গুফ্তা নজরোনিয়াজ। এর বাংলা কী হবে শঙ্করবাবু? |
উস্তাদ বিলায়েৎ খান |
পণ্ডিত রবিশঙ্কর |
|
আমি: না বলা উপহার।
বিলায়েৎ খান: থ্যাঙ্ক ইউ। তা হলে বলুন ওয়ার্ল্ড রেসপেক্টেড পণ্ডিতজি, ওই কহানিও তো দুনিয়া শুনতে চায়। সিনেমায় দেখতে চায়।
রবিশঙ্কর (কী রকম একটা স্নেহের দৃষ্টিতে বিলায়েৎকে দেখতে দেখতে): কী আর হত? আর একটা ‘অভিমান’ তৈরি হত।
বিলায়েৎ খান: কী বলছেন কী? তাতে অনেক গেহরা খয়াল, মানে ডিপ থট থাকত। ফিলোসফি থাকত। মিউজিক থাকত।
রবিশঙ্কর: কী জানি! ‘রাগ-অনুরাগ’ রচনার সময় তো শঙ্করকে বলেছিলাম ওকে আমার সব ডায়েরি দিয়ে যাব। শুধু কড়ার এই আমার মৃত্যুর পরেই ওগুলো নিয়ে কাজ করবে।
বিলায়েৎ খান: তা হলে এখন লেখো শঙ্করবাবু।
আমি: কী করে লিখব? উনি তো আমায় দিয়ে যাননি।
রবিশঙ্কর: আর সে সব যে এখন কোথায় আছে তাও জানি না। কার কাছেই বা?
বিলায়েৎ খান: না, না। সব ভল্টে জমানোর চিজ না। নাও ইউ বিলং টু দ্য ওয়ার্ল্ড।
রবিশঙ্কর: সে তো তুমিও বিলায়েৎ ভাই!
বিলায়েৎ খান: থ্যাঙ্কস গড। আমরা দু’জনাই এখন হিস্ট্রিতে। জিন্দেগিতে প্যার-মুহব্বতটাই তো আসল। সে সিতারের কথাই বলুন, আশিকী বলুন আর আমাদের মায়েদের স্যাক্রিফাইস বলুন। ছোটবেলায় আব্বাকে হারালাম। কিন্তু আম্মা দাঁড়িয়ে গেলেন গাছের মতো মাথার ওপর। খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, রিয়াজ করাচ্ছেন। ননস্টপ রিয়াজে একটু যদি নিদ্ এসে গেল তো টেবল ফ্যানের তারের ছ্যাঁকা দিয়ে সোজা করে দিচ্ছেন। দাদা, এ সবই তো ভালবাসা।
রবিশঙ্কর: তোমার আব্বার তো ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছিল। আমার বাবা তো থেকেও ছিলেন না। পাঁচ ভাই আর মা’কে কাশীতে রেখে ইউরোপে চলে গেলেন। তুমি তো আট-ন’ বছর বয়সে বাবাকে হারালে। আমি তো আট বছর বয়সে বাবাকে প্রথম দেখলাম। নাইন্টিন টোয়েন্টি এইট-এ বাবা যখন ওঁর মেমসাহেব গার্লফ্রেন্ড আর প্রথম মেম বউয়ের বোনকে নিয়ে কাশীতে এলেন। হিজ ফার্স্ট ইংলিশ ওয়াইফ হ্যাড ডায়েড আ শর্ট টাইম এগো। যা হোক, যেটুকু মানুষ হয়েছি তো ওই মায়ের জন্যই। দাদা উদয়শঙ্কর তখন লন্ডনে আর্ট পড়তে গিয়েছেন। আমার ছোটদা ভূপেন্দ্র মারা গেল প্লেগে। মেজদা, সেজদা স্কুল-কলেজ যায় পড়তে। আর মা আমাকে নিয়ে দুঃখী তেলী নামে একজনের কাছে যান কানের দুল, কী নাকের ফুল, কী কোনও জরিদার শাড়ি বন্ধক রেখে টাকা আনতে। কেউ কিছু জানতে পারেনি। আমিই শুধু দেখতাম।
বিলায়েৎ খান: আহা রে! এই মা’জিও তো চলে গেলেন কিছু দিন পর।
রবিশঙ্কর: সেই তো। দাদার ট্রুপের সঙ্গে বিদেশ যাচ্ছি। বম্বে ডকে মা এসে বাবা আলাউদ্দিন খান সাহেবের হাতে তুলে দিলেন আমাকে। তখন দু’জনে মিলে কী কান্না! ওই চোখের জলেই দেখছি মা ডকে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন। এর ক’দিন পরেই খবর এল মা চলে গিয়েছেন।
বিলায়েৎ খান: হায়, হায়। কী বললেন দাদা!
আমি: না। আজ এ পর্যন্তই থাক। তার আগে রবুদা’কে একটা প্রশ্ন। মৃত্যুর আগে একটা কথা লিখেছিলেন কাগজে ‘যা হবার তা হবে’। কী রকম একটা ‘কে সেরা সেরা হোয়টএভার উইল বি উইল বি’ ভাব। কেন?
রবিশঙ্কর: না, না, না। ‘কে সেরা সেরা’ নয়। রবিঠাকুরের একটা পূজার গান মাথায় ঘুরছিল। ওঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে লেখা। মাথার ওই অবস্থায় বাকি কথাগুলো আর মনে পড়েনি। এখন শুনছি অনুষ্কা ওই কথাগুলোই হাতে উল্কি করে লিখেছে।
আমি (বিলায়েৎ খানকে): দাদা, আপনার কিছু মনে আসেনি শেষ মুহূর্তগুলোয়?
বিলায়েৎ খান: (হেসে): রবিদাদা তো রবিঠাকুরকে ইয়াদ করে নিলেন। রবিঠাকুর আমারও খুব প্রিয়। তবে আমার যে কথাগুলো মনে এল, সেগুলি যাঁর কলমে লিখা, তাঁর নাম আপনারা জানবেন না। আনন্দ নারায়ণ মুল্লা।
রবিশঙ্কর: কী কথা বিলায়েৎ ভাই?
বিলায়েৎ খান: শুনবেন? পরে বাংলায় ট্রান্সলেট করে দিও শঙ্করবাবু...
‘ও কওন হ্যায় জিন্হে তোবা কি মিল গই ফুরসত,
হমে গুণাহ্ ভি করনে কো জিন্দেগি কম হ্যায়।’
আমি: ‘তিনি কে যাঁর অনুতাপ করারও সুযোগ জুটে গেল/ আমার তো পাপ করার জীবনটাই কম পড়ে গেল।’
(অনিবার্য কারণে নসরিন ও অনজুমান আরা বেগমের প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হল না) |
|
|
|
|
|