‘মাওবাদী’ মামলায় অভিযুক্ত
ঝাড়খণ্ড পার্টি কর্মীর জামিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য সন্দেহে ধৃত জেলবন্দি ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) কর্মী অভিজিত্ মাহাতোকে জামিনে মুক্তি দিল মেদিনীপুর জেলা আদালত। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালতে অভিজিত্বাবুর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়। শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম উপ সংশোধনাগার (ঝাড়গ্রাম সাব-জেল) থেকে ছাড়া পেয়ে বিনপুরের ভুরসাতোড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। জেল থেকে বেরনোর পর অভিজিত্বাবুকে স্বাগত জানান ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর দলনেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। চুনিবালা বলেন, “অভিজিত্ আমার দলের দীর্ঘ দিনের কর্মী। বিরোধী দল করার জন্যই তাঁকে মাওবাদী সাজিয়ে ফাঁসানো হয়েছিল।”
গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিনপুরের শিলদা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বছর আটচল্লিশের অভিজিত্বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ ও দুই চাদর বিক্রেতাকে অপহরণ করে খুনের পুরনো দু’টি মামলায় অভিযুক্ত করে ১৯ জানুয়ারি ধৃতকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। জোড়া খুনের মামলাটিতে তদন্তের স্বার্থে অভিজিত্বাবুকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। এরপরই গত ২১ জানুয়ারি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অভিজিত্বাবুকে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির করে বিতর্কে জড়ান ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। |
|
অভিজিত্ মাহাতো। নিজস্ব চিত্র। |
ওই দিন এসপি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে ভারতীদেবী দাবি করেছিলেন, “অভিজিত্বাবু মাওবাদী স্কোয়াডের সক্রিয় সদস্য।” এসপি’র সামনেই ওই দিন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে অভিজিত্বাবু পাল্টা জানান, “আমি মাওবাদী নই। আমি কোনও স্কোয়াডেও যুক্ত নই। আমি ঝাড়খণ্ড পার্টির কর্মী। আমি চাষাবাদ করি।” এই বক্তব্যে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান পুলিশ কর্তারা। ওই সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে আইনজীবী মহলের একাংশ দাবি করেন, কোনও অবস্থাতেই হেফাজতে থাকা কোনও অভিযুক্তকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক বা প্রকাশ্য বৈঠক করা যায় না। এতে মামলার স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। এসপি আদালতের নির্দেশকেই উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন আইনজীবীরা। গত ২৪ জানুয়ারি ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী সুমন সেন ওই সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের প্রতিলিপি জমা দিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তদন্তকারী অফিসারকে তলব করে অভিযোগের শুনানি করে আদালত। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালতে জেলবন্দি অভিজিত্বাবুর জামিনের আবেদন করা হয়। বৃহস্পতিবার আবেদনের শুনানি করে জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায় জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। অভিযুক্তের আইনজীবী সুমন সেন বলেন, “অভিজিত্বাবুকে ৫ দিন নিজেদের হেফাজতে নিয়েও কোনও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তাঁকে ৭১ দিন জেলবন্দি রেখেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। মামলার সিডি-তে (কেস ডাইরি) তদন্তের অগ্রগতির কোনও তথ্য পায় নি আদালত। সেই নিরিখে জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়।” শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম উপসংশোধনাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অভিজিত্বাবু দাবি করেন, “আমি তৃণমূলে যোগ দিতে অস্বীকার করায় পুলিশ আমাকে মাওবাদী সাজিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ ও খুনের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছিল।” |
|