মুলারদের বিশ্বকাপে নিয়ে যাচ্ছে কোভারম্যান্স-ফর্মুলাই
জার্মান ফুটবলের যাবতীয় সাফল্যের পিছনে পেশাদার ছত্রিশ ক্লাবের নিজস্ব অ্যাকাডেমি!
বায়ার্ন মিউনিখ বা কলকাতায় অনেক বছর আগে খেলে যাওয়া বোখুমের মতো ক্লাবগুলিকে অ্যাকাডেমির জন্য বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় করতে হয়। শুনলে অবাক হতে হয়! ফেডারেশনের সঙ্গে আইএমজি-রিলায়েন্স পনেরো বছরের চুক্তির জন্য দিচ্ছে সাতশো কোটি টাকা। আর বুন্দেশলিগার দু’টি ডিভিশনের ৩৬টি ক্লাব এক বছরে সমান টাকা ব্যয় করে তাদের অ্যাকাডেমির জন্য।
জার্মান লিগে খেলার ছাড়পত্র পেতে হলে অ্যাকাডেমি গড়া বাধ্যতামূলক। শুক্রবার দুপুরে হফেনহাইম ক্লাবের অত্যাধুনিক অ্যাকাডেমি ঘুরিয়ে দেখালেন জার্মান ফুটবল সংস্থার কর্তারা। এই অ্যাকাডেমির দুই ফুটবলার আছেন জোয়াকিম লো-র এখনকার জাতীয় দলে। জার্মান লিগ পরিচালন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্দিয়েস রিটিং পরিসংখ্যান দিয়ে দেখালেন, ২০১০ বিশ্বকাপে যে ২৫ জনের দল দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল সেই দলে মুলার, সোয়াইনস্টাইগারের মতো অ্যাকাডেমির ফুটবলার ছিল ১৯ জন। “আমরা ক্লাবগুলিকে বলেছি আর্থিক দিক থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে নিজেদের অ্যাকাডেমির ফুটবলার তৈরি করুন। বাইরে থেকে ফুটবলার কিনলে পয়সাই খরচ হবে। দেশের ফুটবলের কোনও লাভ হবে না।” তার কথা যে সত্যি তা ক্লাবগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কথাই ধরুন। ইউরোপে যাদের বলা হচ্ছে ‘নতুন বার্সেলোনা’। তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলাচ্ছে যে ১১ জনকে, তার মধ্যে সাত জনই অ্যাকাডেমির।
ডেম্পো-সালগাওকরের মতো গোয়ার দলগুলি অ্যাকাডেমি থেকে জনা দশেক সফল ফুটবলার তুলে আনলেও কলকাতার ক্লাবগুলি এখনও সে ভাবে আনতে পারেনি। মণীশ ভার্গব বা সৈকত সাহারায়ের মতো হাতে গোনা কয়েক জন উঠলেও মোহন-ইস্টে এখনও ওডাফা-টোলগে-চিডিদের দাপটই বেশি। ক্লাবগুলির বাজেটের বেশির ভাগ টাকা যাঁদের আনতে খরচ হয়েছে। হাতে গোনা বঙ্গসন্তান। ভারতীয় ফুটবলের সাপ্লাই-লাইন এখনও টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির উপর নিভর্রশীল। বিভিন্ন টিম আই লিগ জেতার জন্য বিদেশি স্ট্রাইকার নেওয়ায় উঠছে না দেশীয় ভাল স্ট্রাইকার বা স্টপার। জাতীয় দলে সুনীল ছেত্রী, রবিন সিংহ, মননদীপের মতো ক্লাব দলের রিজার্ভ বেঞ্চের স্ট্রাইকারের উপরই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে কোভারম্যান্সকে।
সেই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য সপ্তাহখানেক আগে কলকাতায় ক্লাবগুলির কোচেদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন জাতীয় দলের টিডি রব বান এবং কোচ উইম কোভারম্যান্স। মর্গ্যান-করিম এবং ক্লাবকর্তাদের জন্য তাঁদের বার্তা ছিল, অ্যাকাডেমি তৈরি করুন। বেশি দামে ফুটবলার কিনবেন না। বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় করুন ফুটবলার তুলে আনার জন্য।
অ্যাকাডেমি থেকে জার্মানির জাতীয় দলে লামদের পাশে মুলার।
মধ্য কলকাতার এক নামী ক্লাবের সভা থেকে বেরিয়ে ক্লাবকর্তারা হয়তো সেই বার্তা ভুলে বসবেন। কেউ হয়তো তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন, ‘আমাদেরও তো জুনিয়র দল আছে’ ভেবে। সেগুলি যে মান্ধাতার আমলের, সে ভাবে কার্যকর নয় তা জার্মনিতে এসে বোঝা গেল। ভারতের জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত ডাচ টিডি-কোচেরা আই লিগের ক্লাবগুলির অ্যাকাডমি বা কোচিং স্কুলের উপর যে ভাবে জোর দিচ্ছেন তা জেনে জার্মান ফুটবল কর্তারা খুশি। প্রত্যেকেই বলছেন, গত দশ বছরে জার্মানির ফুটবল যদি অ্যাকাডেমি নির্ভর হয়ে এত সাফল্য পায় তা হলে কেন ভারত পারবে না? জার্মান ফুটবলের অন্যতম প্রধান কর্তা আন্দ্রেস বললেন, “আমরা চেলসি, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র মতো কোনও ব্যক্তি মালিকানায় দিতে চাই না জার্মান ক্লাবগুলিকে। এতে অ্যাকাডেমির ক্ষতি হবে। ওগুলোই তো আমাদের সম্পদ।”
আই লিগে আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা নামী ক্লাবের কর্তারা কবে বুঝবেন অ্যাকাডেমির গুরুত্ব? মুম্বইয়ে ফেডারেশনের একটা অ্যাকাডেমি করলে সমস্যা মিটবে না। ক্লাবগুলি অ্যাকাডেমি তৈরি করে ফুটবলার তুলে আনলেই মিটতে পারে সমস্যা। জার্মানি তার বড় উদাহরণ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.