পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক দোরগোড়ায় উত্তপ্ত নানুর। বৃহস্পতিবার রাতে নানুরের পালুন্দি গ্রাম থেকে হাজার খানেকেরও বেশি বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই গ্রামের মোল্লাপাড়ার শাহপুকুর লাগোয়া একটি জমি থেকে ১১টি প্লাস্টিক ড্রাম ভর্তি ওই বোমা উদ্ধার করে নানুর থানার পুলিশ। ওই বোমা উদ্ধার নিয়ে পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক মহল। সন্ত্রাস করে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের জন্যই ওই বিপুল পরিমাণ বোমা মজুত করা হচ্ছিল বলে একে অন্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে সিপিএম ও তৃণমূল।
এ দিকে, হাজারেরও বেশি বোমা উদ্ধারের পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, “বিধানসভা ভোটের পরে তুলনামূলক ভাবে কিছুটা হলেও এলাকা শান্ত ছিল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই বোমা উদ্ধারেই বোঝা যাচ্ছে এলাকায় ফের আশান্তি ফিরছে।” অন্য দিকে, তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “সন্ত্রাস সৃষ্টি করে পঞ্চায়েত দখল করার জন্য সিপিএমই ওই বোমা মজুত করেছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান বলেন, “সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি আমরা করি না। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক কারা ওই বোমা মজুত করেছিল।” |
রাজনৈতিক সংঘর্ষের দিক থেকে সূচপুরের পরই থুপসড়া পঞ্চায়েত জেলায় আলোচিত নাম। পালুন্দি সেই থুপসড়া পঞ্চায়েতেরই অধীনে। এলাকা তথা পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে অতীতে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার তেতে উঠেছে ওই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম। সম্প্রতি গত ফেব্রুয়ারি মাসেই গ্রামেরই বাসস্ট্যান্ডে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের ব্লক সাধারণ সম্পাদক মুন্সি নুরুল ইসলাম ওরফে সোনা চৌধুরী। ঘটনায় অভিযোগ ওঠে সিপিএমের দিকে। সে দিন গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় গোলাগুলি চলে। পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাসুদেব মেটে ও ইদ্রিস শেখ নামে দুই সিপিএম কর্মীও। সিপিএমের পক্ষ থেকে দুই দলীয় কর্মী খুনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। ঘটনার কিছু দিন পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওই গ্রামের সিপিএম নেতা জয়নাল শেখ-সহ প্রায় শতাধিক সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে। এর আগে ২০১০ সালের জুলাই মাসেও একই গ্রামে এক সিমিএম কর্মীর পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ১৪২টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
নানুরের ওসি চয়ন ঘোষ বলেন, “কে বা কারা কী কারণে বোমাগুলি মজুত করেছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা না আসা পর্যন্ত বোমাগুলিকে পুলিশের পাহারায় রাখা হচ্ছে।” |