কয়লার লড়াইয়ে ফয়দা নেতাদের
চোরাই কয়লা কারবারিদের ভাগ বাটোয়ারার লড়াই তো আছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় অবৈধ কয়লার কারবারে মদত জুগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। বারাবনির কেলেজোড়া গ্রামে দুই পাড়ার সংঘর্ষ ও পুলিশকে মারধরের কারণ খুঁজতে গিয়ে এই তথ্যই সামনে আসছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। যদিও প্রশ্ন আছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
কেলেজোড়া গ্রামে একেবারে গায়ে-গায়ে তালাপাড়া ও চাপাপাড়া। দুই পাড়ারই বেশ কিছু বাসিন্দা চোরাই কয়লার কারবারে যুক্ত বলে জেনেছে পুলিশ। এলাকায় একটি বেসরকারি খনি সংস্থার একাধিক খোলামুখ খনি আছে। সেখানেই দেওয়ালের গায়ে সুড়ঙ্গ বা ‘র্যাট হোল’ বানিয়ে কয়লা চুরি করে স্থানীয় কিছু লোক। গরুর গাড়িতে চোরাই কয়লা চাপিয়ে চাপাপাড়ার রাস্তা ধরে নিয়ে গিয়ে তালাপাড়ার শেষপ্রান্তে একটি মাঠে তা মজুত করা হয়। পরে সেই কয়লা ভাগাভাগি করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাচার করে অবৈধ কয়লা কারবারিরা। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই কারবার চলছে।
কিন্তু গোল পাকায় মাসখানেক আগে, যার নেপথ্যে রয়েছে চোরাই কয়লার একচ্ছত্র দখল নেওয়ার চেষ্টা। পুলিশ জেনেছে, দুই পাড়ার মাফিয়ারাই কয়লা চুরির ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। চাপাপাড়ার কারবারিদের অভিযোগ, তালাপাড়ার দুই মাফিয়া চুরির কয়লা পুরোটাই হজম করতে চাইছে। এই কাজে তাদের সাহায্য করছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আলি হোসেন। ঘটনার পর থেকেই তাঁর খোঁজ নেই। তালাপাড়ার কারবারিদের অভিযোগ, চাপাপাড়ার বেশ কিছু মাফিয়া জামুড়িয়ার রাখাপুরা ও ঘোষনগর এলাকায় কয়লা চুরির একচেটিয়া কারবার করে। এ বারে বারাবনির খনির কয়লা চুরিতেও কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে তারা। কিন্তু অন্য পক্ষ এক চুল জমিও ছাড়তে রাজি নয়। ফলে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
এই গণ্ডগোলের জেরে প্রায় প্রতি দিনই অশান্ত হয়ে উঠছে কেলেজোড়া এলাকার পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা, বছর পঁচাত্তরের শেখ সরিতুল্লার অভিযোগ করেন, নিত্য দিনের এই সংঘর্ষে গ্রামের মানুষজন বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। রাতেই যেহেতু কয়লা পাচারের রমরমা, তাই সন্ধ্যা নামলেই চোরদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। শেখ সাজিদুল নামে আরক এক এলাকাবাসীও বলেন, “রাত হলে আমরা আর বাড়ির বাইরে বেরোতে পারি না। রাস্তা দিয়ে অবৈধ কয়লা বোঝাই কয়েকশো গরুর গাড়িই শুধু দেখা যায়।” তাঁদের অভিযোগ, মাফিয়ারা প্রতি দিন নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এলাকার শান্তিভঙ্গ করছে। এতে পরোক্ষে মদত দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, যে কোনও নির্বাচন এগিয়ে এলেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট কয়লা মাফিয়ারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। গ্রামের গরিব যুবকেরা রোজগারের আশায় তাদের অবৈধ কারবারে জড়িয়ে পড়ে। ভোটের সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এদের নিজেদের লোকবল হিসেবে ব্যবহার করেন। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় অবশ্য দায় ঝেড়ে ফেলে দাবি করেন, “সিপিএমের মদতে পুষ্ট কয়লা কারবারিরাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।” বিধানবাবুর আরও দাবি, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই সিপিএম তাঁদের পঞ্চায়েত সদস্য আলি হোসেনের নাম কয়লা কারবারিদের সঙ্গে জুড়তে চাইছে। তিনি নির্দোষ। সিপিএমের বারাবনি লোকাল সম্পাদক তীর্থঙ্কর পাত্র পাল্টা বলেন, “বারাবনি এলাকায় বিধানসভা আসন থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, সব তৃণমূলের দখলে। এই অবস্থায় অবৈধ কয়লার কারবারে আমাদের কারও জড়ানোর সাহস আছে না কি? পুরোটাই যে তৃণমূলের মদতে চলছে, তা তো শিশুও বুঝবে।”
কার দায় কতটা, বাম আমলে সিপিএম নেতারা কতটা যুক্ত ছিলেন, এখন কার ভূমিকা ঠিক কী এ রকম বহু প্রশ্নেরই স্পষ্ট উত্তর নেই। কিন্তু কয়লার চোরা কারবারের ছবিটা চোখ এড়ানোর নয়। গণ্ডগোল এবং পুলিশি তল্লাশির পরে এ দিনও কেলেজোড়া গ্রামের মূল রাস্তায় ঢোকার মুখেই দেখা গিয়েছে, সার বেঁধে কয়লা বোঝাই গরুর গাড়ি দাঁড়িয়ে। বেশ কিছু বাড়ির সামনে অবৈধ কয়লা ডাঁই করে সাজানো। ফাঁকা জমিতে কয়লা পোড়ানোর কাজ চলছে। এলাকার লোকজনই জানালেন, এ সবই চোরাই কয়লা। এই কয়লার দখল নিতেই প্রতি দিন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কয়লা মাফিয়ারা। কিন্তু পুলিশ সব জেনেও এত দিন কী করেছে, সেই প্রশ্নটা এড়ানো যাচ্ছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.