ওসি-র মাথা ফাটার পরে গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তল্লাশির নামে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও বারাবনি থানা তা অস্বীকার করেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত কয়েক জন আটক হয়েছে। তাদের জেরা করা হচ্ছে।
কেলেজোড়া গ্রামে দু’দল চোরাই কয়লা কারবারির সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের মারে বারাবনি থানার ওসি-সহ তিন পুলিশকর্মী আহত হন বৃহস্পতিবার রাতে। চোরাই কয়লা মজুত ও ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই ওই গ্রাম সংলগ্ন তালাপাড়া ও চাপাপাড়ার মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। পুলিশের কাছেও সেই খবর ছিল। এই নিয়ে চাপা উত্তেজনা থাকলেও এলাকায় নিয়মিত জিপ পাঠিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে রেখেছিল পুলিশ। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তালাপাড়ার এক মাফিয়ার চোরাই কয়লা বোঝাই গরুর গাড়ি চাপাপাড়ার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে সেখানকার এক মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে। মোটরসাইকেল আরোহী প্রতিবাদ করলে মাফিয়ার লোকজন তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এরই জেরে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। রাত বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে দুই পাড়ার লোকজনের উত্তেজনাও বাড়তে থাকে। বারাবনি থানার ওসি অসীম মজুমদার জানান, রাত ১১টা নাগাদ তাঁরা দুই পাড়ার গণ্ডগোলের খবর পান। কয়েক জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। কিন্তু তালাপাড়া ও চাপাপাড়ার মাঝামাঝি গিয়ে দাঁড়াতেই এক দল দুষ্কৃতী লাঠি-রড নিয়ে তাঁদের উপরেই চড়াও হয়। ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়।
|
পুরুষশূন্য কেলেজোড়ায় পড়ে চোরাই কয়লা। শুক্রবার। ছবি: শৈলেন সরকার। |
প্রাণ বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসে পুলিশ। এই খবর পাওয়ার পরেই বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, বারাবনি থানার ওসির মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়েছে। একজন এসআইয়ের হাত ভেঙেছে ও এক পুলিশ কর্মীর চোখে গুরুতর চোট লেগেছে। এডিসিপি বলেন, “দুই পাড়ার সংঘর্ষ থামাতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের হাতে পুলিশকর্মীরা মার খান। আমরা কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তখনও যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালানোয় বেশির ভাগ পুরুষই পাড়াছাড়া। চাপাপাড়ার মহিলারা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ, তল্লাশির নামে পুলিশ বাড়ি-বাড়ি ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। শেখ জাকির নামে এক জনের বাড়িতে তছনছ করা হয়েছে জিনিসপত্র। জাকিরের দিদি নুরজাহানের অভিযোগ, “পুলিশ আমায় গালিগালাজ তো বটেই, মারধরও করেছে।” ভাঙচুর হয়েছে শেখ সিদ্দিকির বাড়িতেও। আরও কিছু বাড়ি তছনছ। তালাপাড়াতেও চোখে পড়েছে একই দৃশ্য। সেখানেও কোনও পুরুষ চোখে পড়েনি। বাড়ির মহিলারাও কোনও কথা বলতে চাননি। এডিসিপি (পশ্চিম) অবশ্য তল্লাশির নামে হাঙ্গামার অভিযোগ মানেননি। রাত পর্যন্ত পুলিশ বা দু’পক্ষের কারও বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগও করেনি। |