ছাইয়ের ঝড়ে ছুটি হল স্কুল
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ছাইয়ের ঝড়ে ঢেকে গিয়েছে স্কুল। বেঞ্চ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড সবই ধূসর। বাধ্য হয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ। তবে তাতেও রেহাই নেই, স্কুল থেকে বাড়ি যেতে বা স্কুলের আশপাশের বাড়িতে হেঁচে-কেশে একসা হলেন সকলে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় এমনটাই চলল দুর্গাপুরের অঙ্গদপুর এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই অঙ্গদপুর হাইস্কুলের সীমানা পাঁচিলের পিছনের একটা ফাঁকা নীচু জায়গা আছে। সেখানেই দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন থেকে পরিত্যক্ত ছাই জলে মিশে এসে জমা হয় (অ্যাশ পন্ড)। পরে সেই ছাই কয়লা খনি ভরাট, রাস্তা তৈরি প্রভৃতি কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়। দামোদর নদ ও ডিভিসি ক্যানালের মাঝের এই জায়গাটি ডিভিসি’র নিজের। ফলে মাঝে মাঝে ছাই উড়ে আশপাশের বাড়িতে এলেও কারও আপত্তি করারও জায়গা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারাও সাধারণত দরজা জানালা বন্ধ করে, নাকে রুমাল দিয়েই পরিস্থিতি সামলে দেন। কিন্তু শুক্রবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই আলাদা।
কুয়াশা নয়, দার্জিলিঙের মেঘ নয়। চার দিক ঢেকে উড়ছে শুধু ছাই।
স্থানীয়রাই জানান, এ দিন একটু বেলা বাড়তেই লু বইতে শুরু করে। চড়া রোদ আর গরম হাওয়ায় ছাইয়ের মিশ্রণ থেকে জলীয় অংশ বাস্প হয়ে যায়। তারপরেই শুকনো ছাই উড়তে শুরু করে বাতাসে।
১০টা নাগাদ অঙ্গদপুর হাইস্কুল খোলা হলে দেখা যায়, সর্বত্র ছাইয়ের পুরু আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। তবে তার মধ্যেও স্কুল চালানোর চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সমস্যা হয় মিড-ডে মিল রান্না নিয়ে। ছাইয়ের ঝড়ে কোথায় রান্না হবে, আর রান্না হলেও এত পড়ুয়াকে কীভাবে খাওয়ানো যাবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েন কর্তৃপক্ষ। শেষে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখেশ্বর দাস বৈরাগ্য বলেন, “বাধ্য হয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছি। স্কুল পরিচালন সমিতিকে বিষয়টি জানিয়েছি।” স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক বিপদতারণ বাগদি জানান, মহকুমা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে এর বিহিত চাওয়া হবে।
বিপদতারণবাবুর বাড়িও এলাকাতেই। তিনি বলেন, “সকাল থেকে দুপুরভর ছাইয়ের ঝড় চলেছে। মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।” একই কথা জানিয়েছেন এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারাও। প্রণব দে, সত্যেন রুইদাস’রা বলেন, “সারা বাড়ি ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে। শিশু ও বয়স্কদের সমস্যা হয়েছে আরও বেশি। অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিয়েছিল।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) লাভলি রায়। পরে তিনি দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদে স্মারকলিপিও দেন। দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের সমস্যার কথা জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাইয়ের দাপটে নাক মুখ চাপা না দিয়ে চলাই দায়।
ডিটিপিএসের এক আধিকারিক জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অ্যাশ পন্ড হিসাবে ওই জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে বহু আগে। আর পাঁচটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতোই জল মিশ্রিত ছাই অ্যাশ পন্ডে এসে জমা হয়। এরপর জল থিতিয়ে গেলে ছাই তুলে তা পাঠানো হয় অন্যত্র। বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক দত্তের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা একটি ডাম্পারে করে ছাই ভরে নিয়ে গিয়ে ডিটিপিএসের ডিজিএম (প্রশাসন) বিকে সিংহের আবাসনের সামনে ফেলে দেন। অভিযোগ, তাঁর আবাসন লক্ষ্য করে ছাই ছোড়া হয়। তবে অশোকবাবুর দাবি, “মানুষ বিতশ্রদ্ধ হয়ে একাজ করেছেন।” ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। পরে ডিজিএম বি কে সিংহ বলেন, “আমরা সব সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারপরেও কিছু দূষণ হবেই। সারা দেশের সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই হয়। জানি না, কারা এ কাজ করেছে।”

শুক্রবার অঙ্গদপুর হাইস্কুলে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.