বিমানবন্দরের কাচে উৎপাদনগত কোনও ত্রুটি নেই। বৃহস্পতিবার আমেরিকা থেকে এমনই রিপোর্ট কলকাতায় এসে পৌঁছেছে। যার অর্থ, বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে কাচ লাগানোর নকশা তৈরিতে অথবা কাচ লাগানোর সময়ে ত্রুটি হয়েছে। সেই ত্রুটি খুঁজে বার করতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আমেরিকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসছে কলকাতায়।
এ দিকে বৃহস্পতিবারেই দিল্লি থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল এসে কলকাতায় পৌঁছেছে। ওই দলের সদস্যরাও কাচ নিয়ে তদন্ত করবেন। এ দিনই কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে কেন বার বার টার্মিনালের কাচ ভেঙে পড়ছে, তা নিয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দিল্লির একটি সংস্থা এই কাচ বসানোর কাজ করেছে। তত্ত্বাবধানে ছিল মার্কিন সংস্থা ‘ফাসাড’। এই সংস্থাই নতুন টার্মিনালের কাচ বসানোর নকশা বানিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সংস্থার বিশেষজ্ঞরা কলকাতায় আসছেন বলে কলকাতা বিমানবন্দরের পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছেন। দিল্লির যে সংস্থা কাচ বসানোর কাজ করেছে, তাদের দিয়ে এখন কাচ পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে যে কাচগুলি দেখে মনে করা হচ্ছে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলি আগে থেকে বদলে ফেলা হচ্ছে। |
প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি কলকাতার নতুন এই টার্মিনালের পুরো দেওয়ালই কাচের তৈরি। ফলে, সেই কাচ নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আন্দোলন করে চেন্নাইয়ের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনাল বানানোর কাজ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। আপত্তি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। দিল্লি-মুম্বই -বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদের মতো কলকাতা-চেন্নাইও বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চেছিল কেন্দ্র। এখন সেই টার্মিনালে বড়সড় সমস্যা দেখা দিলে তার দায় বর্তাবে কর্তৃপক্ষের উপরেই। প্রথম থেকে কাচ ভাঙার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেও সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সম্প্রতি ভাঙা কাচের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল অস্ট্রিয়ায়।
সৌগত রায় বলেন, “রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়েছে ওই কাচের। কিন্তু অস্ট্রিয়ায় পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হওয়া যায়নি বলে তা পাঠানো হয়েছিল আমেরিকায়। সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবারই আমাদের হাতে পৌঁছেছে। তা বলছে, কাচ তৈরিতে কোনও ত্রুটি নেই। এখন তা হলে দেখতে হবে অন্য কোথাও ত্রুটি হচ্ছে কি না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ফাসাড-কে ডেকে পাঠানো হবে।”
ইতিমধ্যেই বিমানবন্দরে গুজব ছড়িয়েছে কাচের সমস্যার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে নতুন টার্মিনাল। এক বেসরকারি বিমানসংস্থার অফিসারের কথায়, “এখন যদি দেখা যায় সমস্ত কাচ বসানোতেই ত্রুটি হয়েছে, তা হলে তো সত্যিই টার্মিনাল বন্ধ করে দিতে হবে! সে ক্ষেত্রে আমাদের আবার সরে যেতে হবে পুরনো টার্মিনালে! এ তো অবাস্তব ব্যাপার!” কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা, যাঁর তত্ত্বাবধানে এই টার্মিনাল তৈরি হয়েছে, সেই বি পি শর্মা অবশ্য এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়েই দিয়েছেন। কিন্তু ফাসাড এসে যদি দেখে যে নকশায় গলদ রয়ে গিয়েছে, তা হলে কী করে নতুন এই টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা যাতায়াত করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিমান সংস্থার কর্তাব্যক্তিরাই। |