কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে যখন-তখন ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ছে কাচ। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত প্রায় আটটি কাচ ভেঙেছে। কাচ ভাঙার কারণ জানতে ভেঙে পড়া কাচের টুকরো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে আমেরিকায়।
গত ১১ মার্চ থেকে একের পর এক বিমান সংস্থা কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। ১৫ মার্চের মধ্যে সমস্ত বিমান সংস্থাই সরে এসেছিল নতুন টার্মিনালে। তখন থেকেই টার্মিনালের ভিতরে একটার পর একটা কাচ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন টার্মিনাল তৈরি হয়েছে। এখন যদি দেখা যায়, সব কাচ বসানোতেই ত্রুটি রয়েছে, তা হলে সেই কাচ বদলাতে খরচ বাড়বে। এ ছাড়া, কাচ টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ার সময়ে আহত হতে পারেন যাত্রী বা বিমানবন্দরের কর্মীরা। এই সব পরিস্থিতির কথা আঁচ করতে পেরে ‘নতুন টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হবে’- এ ধরনের গুজবও ছড়িয়ে গিয়েছে বিমানবন্দরে। যদিও সে আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরে তার অব্যবস্থা নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ১১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৫টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়াও, প্রতি দিন যাত্রীরা এসে মৌখিক ভাবে অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন। কখনও কনভেয়ার বেল্টের সমস্যা, কখনও অপরিষ্কার শৌচালয়, কখনও ডিসপ্লে বোর্ডের ছোট ছোট অক্ষর নিয়ে। কিন্তু কাচ ভাঙার ঘটনাটাই এখন কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার প্রধান কারণ। |
নয়া টার্মিনালের ভাঙা কাচ। —ফাইল চিত্র |
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা, যাঁর তত্ত্বাবধানে এই নতুন টার্মিনাল তৈরি হয়েছে, সেই বি পি শর্মা-র কথায়, “অস্ট্রিয়ার যে সংস্থার কাছ থেকে কাচ কেনা হয়েছিল, কাচ ভাঙার খবর শুনে তাদের দু’জন বিশেষজ্ঞ এসেছিলেন। অস্ট্রিয়ার গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য ভাঙা কাচ সঙ্গে নিয়ে যান তাঁরা।” কলকাতা বিমানবন্দরের পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বুধবার জানান, অস্ট্রিয়ায় পরীক্ষার পরেও কাচ ভাঙার কারণ জানা যায়নি। তাই ভাঙা কাচের নমুনা আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে।
বিমানবন্দরে কর্মরত প্রায় প্রতিটি বিমানসংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থা, অভিবাসন, শুল্ক, গোয়েন্দা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের মুখে মুখে ঘুরছে কাচ ভাঙার ঘটনা। এ দিকে, পুরনো অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে এখনও কিছু বিমানসংস্থার দফতর রয়ে গিয়েছে। সেই টার্মিনালে নিয়মিত চলছে বাতানুকূল ব্যবস্থা, আলো ও জল। ফলে, নতুন টার্মিনাল বন্ধ হয়ে গিয়ে আবার পুরনো টার্মিনালে ফিরে আসতে হবে সমস্ত সংস্থাকে, এমন গুজবও ছড়িয়েছে।
অধিকর্তা বি পি শর্মা অবশ্য এ বিষয়ে বলেন, “একেবারেই ভুল ধারণা। নতুন টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি।” অধিকর্তার অভিযোগ, চালু হওয়ার পরে দিল্লির নতুন টি-থ্রি টার্মিনালেও এক হাজারের বেশি কাচ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দিল্লির সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে হইচই করেনি। তবে দিল্লির বেসরকারি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (ডায়াল) মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেখানে ১৫০ হাজার বর্গমিটার জুড়ে লাগানো কাচের একটিও ভেঙে পড়েনি। তাঁর কথায়, “এক হাজার কাচ ভেঙে গেলে তা নিয়ে হইচই হতো। যাত্রীরাই বাইরে খবর পাঠিয়ে দিতেন।”
কয়েক জন বিশেষজ্ঞ জানান, কলকাতায় কাচ ভাঙার পিছনে রয়েছে কম্পনের তত্ত্ব। বিমান ওঠানামার সময়ে তার প্রচণ্ড আওয়াজের জন্য যে কম্পনের সৃষ্টি হয়, তার জন্যই কাচ ভাঙতে পারে। তবে বি পি শর্মা বললেন, “ভাবলেন কী করে, টার্মিনাল তৈরির সময়ে ওই বিষয়টি আমরা বিবেচনা করিনি? সমস্যাটা অন্য কোথাও। সেটাই জানার চেষ্টা করছি।”
|