ওষুধ-পথ্য নিয়ে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল তাঁর। বুধবার আদালতে অন্য একটি অভিযোগ এনে চমকে দিলেন গার্ডেনরিচে পুলিশ খুনের মামলায় অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না।
এ দিন মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয় তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান ইকবালকে। মুন্না-মামলার শুনানিতে এজলাস ছিল ভিড়ে ঠাসা। আচমকাই হাত জোড় করে বিচারকের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুন্না, “স্যার, জেলে আমাকে টেররিস্টদের (জঙ্গি) সেলে রাখা হয়েছে।” শুনে হতবাক হয়ে যান প্রায় সকলেই।
“ওখানে টেররিস্ট কারা আছে? তারা কোথায় থাকে?” মুন্নার কাছে জানতে চান মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুরথেশ্বর মণ্ডল।
“ওখানে মাওবাদীরা রয়েছে। অন্য জঙ্গিও আছে। ওদের মধ্যেই একটা আলাদা সেলে আমাকে রেখেছে” জবাব দেন ইকবাল।
১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কলকাতা পুলিশের এসআই তাপস চৌধুরী। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত মুন্না বেশ কিছু দিন পালিয়ে বেড়ানোর পরে ধরা পড়েন বিহারের ডেহরি-অন-শোন স্টেশনের কাছে। এই মামলা শুনতে আইনজীবী, সাধারণ মানুষ এবং সংবাদমাধ্যমের ভিড় হয় রোজই। সেই ভিড় এড়াতে অসুস্থ মুন্নাকে নিয়মমাফিক হাজির করানোর পরে এজলাসে না-এনে আদালতের লক-আপে বসিয়ে রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। এত দিন শুনানি চলাকালীন লক-আপেই বসে থাকতেন তিনি। কিন্তু এ দিন শুনানির শুরুতেই মুন্নার আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের মক্কেল এজলাসে হাজির থেকে সওয়াল-জবাব শুনতে চান। বিচারক অনুমতি দেন। কাঠগড়ায় ঢুকেই মেয়ে সাবা, স্ত্রী, ছেলে সইফ এবং অন্য পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলেন মুন্না।
তার পরেই জঙ্গি-বোমা ফাটান ওই অভিযুক্ত। তবে জঙ্গি-কিস্সা বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু ওষুধ-পথ্য নিয়ে ফের অভিযোগ ওঠে। খুন এবং হাঙ্গামা বাধানোর মামলায় অভিযুক্ত মুন্নার জামিনের আবেদনও জানান তাঁর আইনজীবীরা। একই মামলায় ধৃত মহম্মদ ইমতিয়াজের আইনজীবী তরুণ রায়চৌধুরীও তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি জানান। ৯ এপ্রিল মুন্নাকে টিআই বা শনাক্তকরণ প্যারেডে হাজির করানোর কথা। তা জানিয়ে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সরকার পক্ষ। শনাক্তকরণ প্যারেডের জন্য জামিনের আবেদনের বিরোধিতা কেন, প্রশ্ন তোলেন মুন্নার আইনজীবী। জামিনের আর্জি খারিজ করে বিচারক অভিযুক্তদের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
আলিপুর জেলে তাঁদের ‘অসুস্থ’ মক্কেল ঠিকমতো ওষুধ-পথ্য পাচ্ছেন না বলে আগেই অভিযোগ করেছেন ইকবালের আইনজীবীরা। অশোকবাবু এ দিন বিচারককে বলেন, তাঁদের মক্কেল দীর্ঘদিন পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খুনের মামলা করা হয়েছে। অশোকবাবু বলেন, “উন্মত্ত জনতার মধ্য থেকে মুন্নার অচেনা এক জন গুলি চালাল। তার দায় ওঁর উপরে বর্তাবে কেন? এ ক্ষেত্রে ৩০২ ধারা প্রযোজ্য কি না, আদালত সেটাও ভেবে দেখুক।” জেলে তাঁদের মক্কেল ঠিকমতো চিকিৎসা, ওষুধ-পথ্য পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তাঁর আইনজীবীরা।
বিচারক অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনাকে ডাক্তার দেখছেন?” মুন্নার জবাব, “স্যার, কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না। ডাক্তার দেখছেন। কিন্তু কোনও ওষুধ পাচ্ছি না। অন্য বন্দিদের যে-সব খাবার দেয়, আমাকেও তা-ই দেওয়া হচ্ছে।”
সরকারি আইনজীবী শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, জেলে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। অভিযুক্ত সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আদালত রিপোর্ট তলব করতে পারে। কিন্তু তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হলে তদন্তের কাজ ব্যাহত হতে পারে। ওই অভিযুক্তের চিকিৎসা এবং ওষুধ-পথ্যের ব্যাপারে ১০ এপ্রিল একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারক।
|