সল্টলেকে নাট্যকর্মী দম্পতিকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে বুধবার এক গাড়িচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শুভ্রকুমার ঘোষ। এ দিন বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে তাকে ছ’দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বিধাননগর পুরসভা এলাকার শান্তিনগরে। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন ওই দম্পতি। পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ওই নাট্যকর্মী দম্পতির নাম সংগ্রাম গুহ ও শম্পা সেন। ধরপাকড় শুরু হলেও আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের। এ দিন সল্টলেকে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রীতিমতো ভয়ে ভয়ে রয়েছে পুরো পরিবার। শম্পাদেবীর আশঙ্কা, “ফের আক্রমণ হতে পারে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, নাটকের মহড়ার জন্য শান্তিনগরে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। মহড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের গাড়ির ভাড়া করা চালকের সঙ্গে বচসা হয়। দম্পতির অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে গাড়িচালককে আটক করে পুলিশ। পরে এক দল লোক ওই দম্পতিকে নিগৃহীত করে বলে অভিযোগ।
সংগ্রামবাবু সরকারি কর্মচারী আর শম্পাদেবী কলেজে পড়ান। তাঁরা জানান, একটি সংস্থা থেকে চালক ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা শান্তিনগরে প্রান্তিক সভাগৃহে যান। সেখানে চালককে গাড়ি রাখতে বলেন। অভিযোগ, রাত ৮টা নাগাদ মহড়ার শেষে সভাগৃহের বাইরে গাড়ি দেখতে না-পেয়ে চালককে ফোন করেন শম্পাদেবী। কিন্তু সাড়া দেননি চালক। অনেক পরে গাড়ির হদিস মেলে। অভিযোগ, দীর্ঘ ক্ষণ ধরে সাড়া না-দেওয়া এবং গাড়িতে এসি চালানো নিয়ে প্রশ্ন করায় চালক ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকেই ফোন করে পুলিশ ডাকেন ওই দম্পতি।
শম্পাদেবী জানান, পুলিশ যাওয়ার আগেই চালকের ফোন পেয়ে কিছু লোক গাড়ির কাছে জড়ো হয়ে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই সময়েই পুলিশ এসে গাড়িচালককে ধরে নিয়ে যায়। তাঁদেরও থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু পুলিশ সেই অনুরোধ রাখেনি।
শম্পাদেবীর অভিযোগ, পুলিশ চালককে নিয়ে চলে যেতেই ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া চালকের সঙ্গীরা তাঁদের বেদম মারধর করে। সংগ্রামবাবুকে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে কয়েক জন। তাঁদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। নিগ্রহকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাননি শম্পাদেবীও। ঘণ্টাখানেক এই অবস্থা চলার পরে দুই ব্যক্তি পরিস্থিতি শান্ত করতে উদ্যোগী হন। তাঁদের মধ্যে এক জন নিজেকে ‘কাউন্সিলর’ বলে দাবিও করেন। মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ ফের ঘটনাস্থলে যায়। ওই দু’জন নিগৃহীত দম্পতিকে থানায় পৌঁছে দেন। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি বলে শম্পাদেবীর অভিযোগ। তিনি জানান, তাঁরা মার খেলেন। অথচ এক পুলিশ অফিসার তাঁদেরই ধমকাতে থাকেন। হেনস্থার এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ নেওয়ার ব্যাপারে টালবাহানা চলে। থানায় যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে তাঁদের এফআইআর লিপিবদ্ধ করা হয় বলে অভিযোগ করেন শম্পাদেবী।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সিপিএমের সুবল রং বলেন, “আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। রাতে গোলমালের সময় যিনি নিজেকে কাউন্সিলর বলে পরিচয় দিয়েছিলেন, তিনি কে, তা-ও জানি না।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠলেও তা মানতে নারাজ বিধাননগর কমিশনারেট। তাদের দাবি, চালক সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছিল। পুলিশ গিয়ে চালককে গ্রেফতারও করে। পরে গোলমাল শুরু হওয়ায় ফের পুলিশ যায়। কমিশনারেটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে কান্নন বলেন, “ওই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত চালক সম্পর্কেও খোঁজখবর চলছে।” |