মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া রিপোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অব্যবস্থার জন্য রেলকেই দায়ী করলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরীক্ষার দিন রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে রেল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, এত ভিড় সত্ত্বেও কোনও বড় অঘটন ঘটেনি। কারণ, রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন রেল পুলিশ (জিআরপি) অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
ডিজির এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, নিজেদের অপদার্থতা ঢাকার জন্যই রেলকে ঢাল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও সে দিন সমস্ত ট্রেন চালানো হয়েছে। ৬৫০০ পরীক্ষাকেন্দ্রের সবগুলিই সরকার রেল স্টেশনের ধারে করেছিল নাকি? গোলমাল তো অন্যত্রও হয়েছে। তার দায় নিশ্চয়ই রেলের নয়।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি রেল প্রতিমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ৪৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা কি সরকার করতে পেরেছিল?
ডিজি গত কাল মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যালকে একটি রিপোর্ট (মেমো নং: আইএস/৪৩৪০/ডিজি/১৩) পাঠিয়েছেন। তাতে পরিবহণ সংক্রান্ত সব গোলমালের দায় তিনি রেলের ঘাড়েই চাপিয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেল পুলিশের পক্ষ থেকে পরীক্ষার কথা জানিয়ে অনেক আগেই রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছিল। শিয়ালদহ, হাওড়া, শিলিগুড়ি এবং খড়্গপুর ডিভিশনে বাড়তি ট্রেন চালানো এবং নিরাপত্তা রক্ষী রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রেল সে সবের তোয়াক্কা করেনি। ফলে পরীক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ডিজির এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকার রেল মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জবাব চাইতে পারে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক কর্তা।
ডিজি আরও লিখেছেন, রেল পুলিশ থেকে যে রিপোর্ট মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, শিলিগুড়ি ডিভিশনে বিশেষ সমস্যা হয়নি। খড়গপুর ডিভিশনে রেল কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু হাওড়া এবং শিয়ালদহ ডিভিশনে অতিরিক্ত ট্রেন না চালানোর জন্য পরীক্ষার্থীদের ভয়ানক ভুগতে হয়েছে। ডিজি পাশাপাশি এ কথাও লিখেছেন, রাজ্য পর্যাপ্ত জিআরপি মোতায়েন করেছিল। আরপিএফের সাহায্য নিয়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালই সামলেছে। ডিজি তাঁর রিপোর্টের সঙ্গে রেল পুলিশের এডিজি অমরকুমার সরকারের রিপোর্টও জুড়ে দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর এলাকা বহরমপুরে রেল কী ভাবে ‘অসহযোগিতা করেছে’, এডিজি এই রিপোর্টে সে কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া দুই ২৪ পরগনা ও হুগলির বিভিন্ন স্থানে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তারও উল্লেখ করেছেন এডিজি।
আগাম জানানো সত্ত্বেও রেল সহযোগিতা করেনি বলে পরীক্ষার দিনই অভিযোগ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায় রেলের সঙ্গে ‘নিশ্চয়ই যোগাযোগ করেছিলেন’। কিন্তু বুধবার ব্রাত্যবাবু বলেন, “স্কুলশিক্ষা দফতর কী করবে? রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা তো প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের।” শিক্ষামন্ত্রী ও পর্ষদ-সভাপতির এই চাপানউতোরেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকার আদৌ কোনও সহযোগিতা কি চেয়েছিল? রেল প্রতিমন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী তো দেশের সবর্কালের সেরা রেলমন্ত্রী হিসাবে নিজেকে দাবি করেন। তিনি তো ভালই জানেন, অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে হলে আগাম অনুরোধ জানাতে হয়। অধীর বলেন, “তেমন কোনও অনুরোধ আমাদের কেউ করেনি। তা সত্ত্বেও ছুটির দিনে রুট রিলে ইন্টারলকিং সিস্টেমের কাজ বন্ধ করে সমস্ত ট্রেন চালানো হয়েছে।”
অধীরের আরও প্রশ্ন, ৪৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সকলেই কি ট্রেনে চড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল? যারা যায়নি তারা কি সবাই সুস্থ ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছিল? যদি তা না হয়, সেই দায়ও কি রেলের? শিক্ষামন্ত্রী এ দিনও জানান, যানবাহনের সমস্যার জন্য যে পরীক্ষার্থীরা টেট দিতে পারেননি, ফের তাঁদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। ওই দিন যাতায়াতের সমস্যার জন্য রেলকে দুষেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “রেল কর্তৃপক্ষ ওই দিন আরও একটু সহযোগিতা করলে ভাল হত। তবে এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।”
|