তৃণমূল ছাত্রনেত্রী পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জট খুলতে তাঁর দিনযাপন নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব হাতড়াচ্ছে পুলিশ। যেমন ওই নেত্রী কার গাড়ি চড়তেন? কে দিতেন তেলের খরচ? রাজারহাটে যে-ফ্ল্যাটে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল, তারই বা ভাড়া মেটাতেন কে? কিংবা ঘটনার আগের রাতে (২৫ মার্চ) পিয়ালিকে বাড়িতে ছাড়ার সময়ে গাড়িতে তাঁর বন্ধু রূপকথা গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও তৃতীয় যে-ব্যক্তি ছিলেন, তিনি কে?
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পিয়ালি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। প্রায় রোজই রাজারহাটের ফ্ল্যাটে বন্ধুবান্ধব ও দলীয় কর্মীদের জমায়েত হত। পিয়ালির জীবনযাপনের সঙ্গে আয়ের সঙ্গতি যাচাই করতে গিয়ে তাঁর ব্যবহৃত দামি গাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশমহলে। সেই সূত্র ধরেই চলছে পুলিশি অনুসন্ধান। পুলিশ জানাচ্ছে, পিয়ালি যে-গাড়িটি ব্যবহার করতেন, সেটি নগদ টাকায় কেনা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে ওই টাকা পিয়ালি নিজে দিয়েছিলেন, নাকি গাড়িটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন, তা যাচাই করছেন তদন্তকারীরা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও।
একাধিক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার সঙ্গে যে পিয়ালির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, সেই বিষয়ে পুলিশ এক রকম নিশ্চিত। তাঁদেরই প্রভাব-প্রতিপত্তির জেরে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশ জানতে চাইছে, রাজারহাটের ওই আসবাবে ঠাসা ফ্ল্যাটের ভাড়া পিয়ালি নিজে মেটাতেন, নাকি অন্য কেউ দিতেন? তবে এখনও পর্যন্ত ওই বাড়ি থেকে কোনও ভাড়ার রসিদ পাওয়া যায়নি। পুলিশ জেনেছে, পিয়ালি যে-ফ্ল্যাটে থাকতেন, তার মালিক ইসমাইল খান নামে এক ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে এখন তিনি অস্ট্রেলিয়ায়। পিয়ালির ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কোনও কারণে পিয়ালির সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সম্পর্কের অবনতি কেন? তারই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ জেনেছে, রাজারহাটের ওই ফ্ল্যাটে আসার আগে পিয়ালি কেষ্টপুরের হানাপাড়ায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তদন্তের খাতিরে পুলিশ সেখানে গিয়ে পাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, কেষ্টপুরে থাকার সময়েও পিয়ালির ফ্ল্যাটে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যাতায়াত ছিল। অস্বাভাবিক মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাজারহাটে যে-এলাকায় পিয়ালি থাকতেন, সেখানে তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ও ছাত্রনেত্রী পিয়ালি সেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গিয়ে কারও বিরাগভাজন হয়েছিলেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, “পিয়ালির ঘর থেকে যে-সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে, তাতে তাঁর অবসাদ, হতাশা ও একাকীত্বের কথা কেন লেখা ছিল, সেটাই ভাবাচ্ছে।”
|