কিনারা চাইছেন স্বজন-বন্ধুরাও
মৃত্যুর আগে বারবার একটি নম্বরে ফোন করেন পিয়ালী
মৃত্যুর আগে একাধিক বার একটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের ছাত্রনেত্রী পিয়ালী মুখোপাধ্যায়। যদিও নম্বরটি তাঁর মোবাইলে ‘সেভ’ করা ছিল না। এক বার ফোন পেয়েছিলেন। তার পরে আর পাননি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি শেষ চেষ্টা করেন।
গত মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ রাজারহাটের নারায়ণপুরের ফ্ল্যাটে পিয়ালীর ঝুলন্ত দেহ মেলার পরে তাঁর মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখে এমনই তথ্য মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, সে দিন তিনি বারবার যে মোবাইলে ফোন করেছিলেন, সেটি আপাতত বন্ধ। তবে সেটি কার, কেনই বা পিয়ালী যোগাযোগের মরিয়া চেষ্টা করছিলেন, পুলিশ সে ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। তাঁর পরিবার তো বটেই, রাজনৈতিক সহকর্মীদেরও একটা বড় অংশ চাইছে, মৃত্যুর কারণ প্রকাশ্যে আসুক।
পিয়ালীর শ্বশুরবাড়ি ও বাপের বাড়ি দুই-ই বর্ধমানের গোলাপবাগে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকেই উত্থান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্যতম জেলা সম্পাদিকা, পেশায় আইনজীবী পিয়ালীর। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে ছিলেন। তাঁর ল্যাপটপ থেকে কয়েকটি ভিডিও পেয়েছে পুলিশ। কয়েকটি অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডিং পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁর ই-মেল এবং কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কও পরীক্ষা করা হয়েছে।
বর্ধমানের বাড়িতে পিয়ালীর বাবা ও ভাই। —নিজস্ব চিত্র
ময়না-তদন্তের বিস্তারিত রির্পোট এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। তবে প্রাথমিক রিপোর্টে শ্বাসরোধে মৃত্যুর কথাই জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, পিয়ালীর মোবাইলের সিমকার্ড পরীক্ষা করে পাঁচ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর নাম পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে কার সঙ্গে তাঁর কতটা যোগাযোগ ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও তাঁর পরিবারের লোকজন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকায় বর্ধমানে গিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
শনিবার দুপুরে গোলাপবাগে পিয়ালীর বাপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হাল্কা গোলাপি বাড়িটির সদর দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরে তাঁর ভাই, বছর পঁচিশের প্রীতম বেরিয়ে এসে বলেন, “সংবাদমাধ্যমের লোকেরা এসে নানা কথা জানতে চাইছেন। কাউকেই কিছু বলতে পারছি না। কেন দিদি এমন করবে, তা বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করছে। ওদেরই বলুন কারণ জানাতে।”
পুলিশ পিয়ালীর পরিবারকে যে ‘সুইসাইড নোট’ দেখিয়েছে তাতে লেখা ছিল, তিনি একাকীত্ব ও মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করছেন। মৃত্যুর জন্য কাউকে তিনি দায়ীও করেননি। কিন্তু নোটের হাতের লেখা কি পিয়ালীরই? একটু থমকে গেলেন প্রীতম। তার পরে আগের চেয়েও গম্ভীর হয়ে বললেন, “সেটাও পুলিশের তদন্ত করে দেখার বিষয়। আমাকে কিছু বলতে বলবেন না।”
পিয়ালীর সঙ্গে কি বিশেষ কোনও মন্ত্রী বা তৃণমূল নেতার যোগাযোগ ছিল? প্রীতম বলেন, “দিদি জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর যোগাযোগ ছিল। হয়তো কথাও হত তাঁদের সঙ্গে। কী কথা হত, তা তো আমরা জানি না!” তবে পিয়ালীর আত্মহত্যার খবর আসা ইস্তক বর্ধমানের কোনও তৃণমূল নেতা বা নেত্রী তাঁদের বাড়িতে আসেননি বলেও তিনি জানান। কথা চলতে চলতেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। সংবাদমাধ্যমও রহস্যভেদ করার চেষ্টা করছে। আমরা আর কিছু বলতে চাই না।”
শ’দুয়েক মিটার তফাতে পিয়ালীর শ্বশুরবাড়ি। হলুদ রঙের সেই বাড়ির কলিং বেল বারংবার বাজাতে বেরিয়ে এলেন তাঁর শাশুড়ি ছায়া চক্রবর্তী। পিয়ালীর স্বামী সুভাষের সঙ্গে দেখা করা যায়? ছেলে বাড়ি নেই জানিয়ে ছায়াদেবী বলেন, “সংবাদমাধ্যমের অনেকে সকালে এসেছিলেন। গত কালও। ছেলে মনখারাপ করে বসে রয়েছে। কারও সঙ্গে কথা বলেনি।” পিয়ালীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়ে থাকতে পারে, এমন কাউকে সন্দেহ করেন আপনারা? জবাব না দিয়ে মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে ভিতরে ঢুকে যান ছায়াদেবী। তবে পিয়ালীর পাড়া-পড়শিরা চাইছেন, রহস্যের কিনারা হোক। প্রতিবেশী দুই যুবক আশিস মণ্ডল ও শেখ রকিব বলেন, “পিয়ালীদি শুধু রাজনীতিতে নয়, পাড়াতেও অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর আত্মহত্যার পিছনে কোনও প্ররোচনা থাকলে, তা প্রকাশ পাক।”
২০১০ থেকে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পিয়ালীর সঙ্গে একযোগে ছাত্র রাজনীতি করেছেন, তাঁদের অন্যতম বর্ধমান শহর টিএমসিপি সভাপতি কার্তিক ঘরামি বলেন, “আমরা মর্মাহত। সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার তদন্তের দাবি জানাব।” নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিএমসিপি তো বটেই, জেলা তৃণমূলেরও অনেক নেতা বলছেন, পিয়ালীর আত্মহত্যা যথেষ্ট রহস্যজনক। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “পিয়ালী প্রতিশ্রুতিমান রাজনীতিক ছিলেন। তাঁর মতো মেয়ে আত্মহত্যা করলেন কেন, তা জানা জরুরি। নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.