তকমা বাড়লেও বিষ্ণুপুর হাসপাতালের পরিষেবার উন্নতি হয়নি। চোখের পাতায় বঁড়শির কাঁটা বিঁধে যাওয়া এক বধূর চিকিৎসা করাতে এসে শুক্রবার চক্ষু বিশেষজ্ঞদের দেখা পেলেন না বধূটির আত্মীয়েরা। দেখা মেলেনি হাসপাতাল সুপারেরও। শেষে শহরের এক বেসরকারি চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে কাঁটা খোলানো হল।
বিষ্ণুপুর শহরের পোকাবাঁধে স্থানীয় বছর চল্লিশের এক বধূ মিঠু দাস এ দিন সকালে বাসন মাজছিলেন। কাছেই এক যুবক ছিপে মার ধরছিলেন। হঠাৎ সেই ছিপের বঁড়শি এসে মিঠুদেবীর এক চোখের পাতায় বিঁধে যায়। আত্মীয়েরা তাঁকে নিয়ে দৌড়ে যান বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। তাঁর স্বামী স্বপন দাসের অভিজ্ঞতা, “হাসপাতালে গিয়ে দেখি দু’জন চক্ষু বিশেষজ্ঞই ছুটিতে। কী করব জানতে দৌড়ে গিয়েছিলাম সুপারের চেম্বারে। তিনিও ছিলেন না। দরজায় তালা ঝুলছিল। পরিজনদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে স্ত্রীকে এক বেসরকারি চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসক কাঁটা বের করে দেওয়ায় স্ত্রীর চোখ রক্ষা পেল।” |
দু’জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এক সঙ্গে ছুটি পেলেন কী করে? হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তড়িৎকান্তি পাল বলেন, “এক চিকিৎসক অঞ্জন কামিল্যা ছুটিতে আছেন। কিন্তু অন্য চিকিৎসক বিভাস সাহা বৃহস্পতিবার থেকে কেন আসছেন না জানি না।” যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ওই দুই চিকিৎসক ও হাসপাতাল সুপার দেবাশিস রায় ফোন ধরেননি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “ওই চিকিৎসক কেন হাসপাতালে আসছেন না, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে।”
কয়েক মাস আগে দুর্ঘটনায় জখম এক যুবককে ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দেখা যায় শল্য চিকিৎসক ছুটিতে। বাইরে থেকে এক শল্য চিকিৎসককে নিয়ে এসে যুবকের চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, বিষ্ণুপুরকে স্বাস্থ্যজেলা ও এই হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালের সমতুল্য বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তারপরেও পরিষেবার হাল ফেরেনি কেন? বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি সত্যি হলে তা ভাল হয়নি। আমি বিশদে খোঁজ নেব।”
|
এক সদ্যোজাতর মৃত্যু ঘিরে শুক্রবার সকালে উত্তেজনা ছড়াল মহিষাদলের গড়কমলপুর এলাকার একটি নার্সিংহোমে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। নার্সিংহোমের ইন-চার্য শিলাদিত্য মাইতিকে মারধরও করা হয়। খবর পেয়ে যায় মহিষাদল থানার পুলিশ। পরে দু’পক্ষের মীমাংসার পর বিক্ষোভ তুলে নেন বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার কেশবপুর জালপাই গ্রামের সন্দীপ মান্না তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিতালিকে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করান। রাতেই মিতালিদেবী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরিবারের লোকেরাও দেখেন শিশুটি সুস্থ রয়েছে। কিন্তু গভীর রাতে শিশুটি কাঁদতে শুরু করায় শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় একতলার নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে। সকালে সন্দীপবাবু জানতে পারেন তাঁর সন্তান মারা গিয়েছে। সন্দীপবাবুর অভিযোগ, “আমার সন্তান সুস্থ ছিল। সকালে দেখি অক্সিজেন, স্যালাইন সব শেষ। ঘরে কেউ নেই। ওদের গাফিলতিতে আমার সন্তান মারা গেল।” নার্সিংহোমটির মালিক সুপর্ণা বাগ বলেন, “শিশুটি জন্মানোর পর থেকেই অসুস্থ ছিল। আমাদের কর্মীরা যত্ন সহকারেই শিশুটিকে দেখভাল করেছে। তবে রাতে দু’বার দেখা হলেও সকালের দিকে ঘরে কেউ ছিল না। আমরা ওই মহিলার পরবর্তী শিশুর জন্ম পর্যন্ত সমস্ত খরচ বহনের মীমাংসায় সহমত হয়েছি।” |