মুর্শিদাবাদে যে তৃণমূলের অবস্থা ভাল নয়, কর্মীসভায় এ বার তা-ও কবুল করে নিলেন হুমায়ুন কবীর।
মাস চারেক আগে দলবদল করায় শাসক দল তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর ‘পুরস্কার’ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর কংগ্রেস-ত্যাগ রেজিনগরের বাসিন্দারা ভাল চোখে দেখেননি। সদ্য উপনির্বাচনে তাঁকে সাকুল্যে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে সে কথাই প্রমাণ রেখেছে রেজিনগর। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বদান্যতায় এখনও রাজ্যের মন্ত্রী তিনি।
হুমায়ুন অবশ্য শুক্রবার দলীয় কর্মীসভায় মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনৈতিক বাস্তবতা খোলাখুলিই স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী জানান, জেলায় দলের অবস্থা ভাল নয়। তিনি বলেন, “এ অবস্থায়, দলীয় কোন্দল ভুলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক হয়ে লড়তে হবে। মুর্শিদাবাদ জেলায় আমাদের শক্তি এখনও অনেক কম। এ জেলায় মূল শক্তি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিএম। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ জেলার ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটিও তৃণমূল দখল করেতে পারেনি। এ কথা মনে রাখবেন।” আর সেই না পারার জায়গা থেকে নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর নিদানও বাতলেছেন হুমায়ুন কবীর। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের মুখে অন্য দল ত্যাগ করে এসে তৃণমূলে যোগ দিলেই তাঁকে কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করা হবে না। ওই ব্যক্তি এলাকায় কতটা জনপ্রিয়, মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কতটা তা যাচাই করতে হবে। তাঁর পর তাঁকে প্রার্থী করা, না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” দলের গোষ্ঠী বিবাদের কথা স্বীকার করে নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “গোষ্ঠী বিবাদ ভুলে সব কর্মীকে এক হয়ে ভোটে লড়তে হবে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ভাল ফল করতে হবে।” পঞ্চয়েতের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে গোষ্ঠী বিবাদ মাথা চাড়া দেওয়ার সম্ভবনার আশঙ্কাও করছেন তিনি। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে কোনও নেতার পছন্দ করা ব্যক্তির এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। মনোনীত করা হবে অন্য কোনও নেতার পছন্দ করা ব্যক্তিকে, যদি এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা থাকে তবেই। তখন যেন নিজেদের মধ্যে আপনারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন। সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে।” বিধানসভার উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর হুমায়ুন কবীর জেলাপরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে দলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সেই জল্পনায় এ দিন জল ঢাললেন খোদ হুমায়ুনই। তিনি বলেন, “এ জেলার পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার জন্য ৫ জনকে নিয়ে দলের কোর কমিটি তৈরি হয়েছে। আমি সেই কমিটির এক জন সদস্য। ফলে আমি পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াচ্ছি না। কোর কমিটির সদস্য হিসাবে ভরতপুর, বেলডাঙা, নওদা ও রেজিনগর মিলে মোট ৪টি বিধানসভা এলাকয় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে আমার উপর। সেই দায়িত্বই পালন করব।” কিন্তু ওই দায়িত্ব পালনে তিনি কতটা সফল হবেন তা পঞ্চায়েতের ভোট গণনার শেষেই জানা যাবে। |