মর্গ্যান গালাগালি করতে করতে তেড়ে যাচ্ছেন বিপক্ষ কোচ সাতোরির দিকে!
পাল্টা সাতোরি ‘আয় দেখে নিচ্ছি’ স্টাইলে হাত গুটিয়ে ‘যুদ্ধে’-র হুঙ্কার দিচ্ছেন!
মাঠের মধ্যে চিডি, র্যান্টি, খাবরারা নেমেছেন বিশ্রী ফাউলের প্রতিযোগিতায়! মুড়ি-মুড়কির মতো কার্ড বেরোচ্ছে রেফারির পকেট থেকে!
চিডির গোলের পাল্টা র্যান্টির অসাধারণ গোল!
পেনাল্টি মারা নিয়ে ইসফাক-মননদীপের বাক-বিতণ্ডা।
দু’গোল হজম করা দলের পাল্টা দু’গোল। তা-ও আবার এ রকম ধুন্ধুমার ম্যাচে। যার ধাক্কায় লিগ শীর্ষে উঠতে পারল না ইস্টবেঙ্গল।
উত্তেজনার বারুদে ঠাসা কলকাতার ‘নতুন ডার্বি’-তে ঘটে যাওয়া এ রকম অসংখ্য চমকপ্রদ ঘটনাকে পিছনে ফেলে দিল কিন্তু লাল-হলুদ কিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
বিরতির পর ইস্টবেঙ্গল যখন ২-০ এগিয়ে তখনই ঘটনাটা ঘটল। প্রয়াগের কার্লোস হার্নান্ডেজের পঁয়ত্রিশ গজের নির্বিষ শট প্রথমে ধরে পর মুহূর্তেই দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে গোল খেলেন গুরপ্রীত। ম্যাচের পর যা নিয়ে উত্তাল কল্যাণী স্টেডিয়াম। |
ইস্টবেঙ্গলের শেষরক্ষা হল না চিডির গোলে। |
পঞ্জাবতনয়ের এই ‘ক্ষমাহীন অপরাধ’-ই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল মানছে দু’ই শিবিরই।
র্যান্টি মার্টিন্স: গুরপ্রীত ও ভাবে দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলটা না খেলে আমরা হয়তো ম্যাচে ফিরতেই পারতাম না।
ট্রেভর মর্গ্যান: গুরপ্রীতের ও ভাবে গোল খাওয়াটা আমার দলকে কয়েক মিনিট মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠার আগেই ম্যাচটা ২-২ হয়ে গেল।
প্রয়াগ ম্যাচ কি তা হলে ছয় ফুট উচ্চতার গুরপ্রীতের কাছে ক্রমশ অভিশপ্ত গহ্বর হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
গত বছর আই লিগ দ্বিতীয় পর্বে গোল করতে গিয়ে গোল খেয়েছিলেন গুরপ্রীত। প্রয়াগের কেন ভিনসেন্টের সেই গোল কার্যত চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে দিয়েছিল মর্গ্যান ব্রিগেডকে। এ বারও গুরপ্রীত খলনায়ক! এই দু’পয়েন্ট নষ্ট মেহতাব-উগাদের শেষ পর্যন্ত কতটা ক্ষতি করল তা সময় বলবে। তবে আপাতত যা নির্যাস--চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইতে থাকা চার্চিল ব্রাদার্স বা ডেম্পো পয়েন্ট নষ্ট করে যে সুযোগ দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে, সেটা কাজে লাগাতে পারল না মর্গ্যানের টিম।
অথচ নোটবই জানাচ্ছে, বল পজেশন, গোলের সুযোগ, জেতার উদগ্র ইচ্ছা সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল।
ন’দিন আগে শিল্ড ফাইনালে ডাচ কোচ সাতোরি পাসের জালে ফেলে রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ কোচ মর্গ্যানকে। বদলার ম্যাচে সেটা আটকানোর হোমওয়ার্ক করে এসেছিলেন লাল-হলুদ কোচ। পাস-পাস-পাস রোখার জন্য এ দিন লাল-হলুদ কোচের মহৌষধরাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবল। পাড়ার ভাষায় যাকে বলা যায়, গা-জোয়ারি ফুটবল। |
প্রয়াগকে পয়েন্ট এনে দিল র্যান্টির গোল। |
হাওয়া বইছে। রোদ কম। গরমের সেই হাঁসফাঁসও উধাও। এই অবস্থায় ভাবা গিয়েছিল কল্যাণীর পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ট্যাকটিক্সের নতুন অস্ত্রে ম্যাচটা জমিয়ে দেবেন দুই কোচ। কিন্তু হল উল্টো। মর্গ্যান-ফর্মুলায় চোরাগোপ্তা মার থেকে কড়া ট্যাকলে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পরিবেশ। র্যান্টির পিছনে জোড়া মার্কার। কার্লোসের ভয়ঙ্কর পাস আটকাতে কখনও মেহতাব, কখনও ইসফাকের তেড়ে যাওয়া। পাল্টা চিডিকে আটকাতে বেলোর বিশ্রী ফাউল। মেহতাব-তপন মাইতি ধাক্কাধাক্কি। আর এই মারকাটারি লড়াইতে উধাও হয়ে গেল, এলকোর মাঝমাঠের ‘ডায়মন্ড’। পাসের ফুলঝুরি। কোণঠাসা প্রয়াগ গোল খেল। গোল করে গেলেন চিডি। পেনাল্টি থেকেও গোল হল। তা সত্ত্বেও প্রয়াগ কোচের ঝুলি থেকে প্ল্যান ‘বি’ বেরোল না। মর্গ্যানের নতুন অঙ্কে সাতোরি যে দিশাহারা।
কিন্তু তখন কে জানত গোকুলে বেড়ে উঠছেন গুরপ্রীত!
কে জানত কোস্তারিকার বিশ্বকাপার কার্লোসের পনেরো মিনিটের চোখধাঁধানো স্পেল তখনও বাকি?
গুরপ্রীতের বিশ্রী গোল হজমের পর প্রয়াগের দ্বিতীয় গোল। কিন্তু কার্লোসের অসাধারণ পাসটার দাম কত? লাল-হলুদের চার ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে কার্লোসের বাড়ানো পাস ধরে ২-২ করলেন র্যান্টি। এবং বলে গেলেন, “টাকা দিয়ে কার্লোসের মহার্ঘ পাসের হিসাব হয় না।”
জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে হতাশা। এতটাই যে, মর্গ্যানের তুলনা শুরু হয়ে গেল ইভান লেন্ডলের সঙ্গে। টেনিস সার্কিটের সব বড় ট্রফি জিতলেও লেন্ডল কখনও উইম্বলডন জেতেননি। মর্গ্যান গত পৌনে তিন বছরে দেশের সব ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু অধরা থেকে গিয়েছে আসলটাআই লিগ।
লেন্ডল-ভূতের তাড়া খেতে শুরু করেছেন লাল-হলুদের সাহেব কোচ!
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা (সঞ্জু), উগা, গুরবিন্দর, সৌমিক, মেহতাব, পেন (বরিসিচ), খাবরা, ইসফাক, চিডি, মননদীপ (লালরিন্দিকা)
প্রয়াগ: সংগ্রাম, দীপক, বেলো, গৌরমাঙ্গি, ধনচন্দ্র, তপন (বিনীত), লালকমল, রফিক, জেমস (আসিফ), কার্লোস (কেন), র্যান্টি।
|
শুক্রবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |