বটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকতেই পচা গন্ধ পেয়েছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। কোথা থেকে গন্ধ আসছে খুঁজতে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, বাগানের ভিতরে কচুরিপানায় ভর্তি একটি ঝিলে মরা মাছ ভাসছে। দু’বছর আগেও এমন ভাবেই বটানিক্যাল গার্ডেনের দু’টি ঝিলে তিন-চার দিন ধরে মাছ মরে ভাসছিল। সেই মাছ এলাকার বাজারে বিক্রিও হয়েছিল।
এ বার মাছ বিক্রি না হলেও শুক্রবারের এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই দূষণ ছড়িয়ে ঝিলের সব মাছ মরে গিয়েছে। এ নিয়ে জানতে বটানিক্যালের যুগ্ম-অধিকর্তা হিমাদ্রিশেখর দেবনাথের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। |
ঝিলের জল থেকে তোলা মরা মাছ। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রাতর্ভ্রমণকারীরা জানান, বটানিক্যাল গার্ডেনের দ্বিতীয় প্রবেশপথের সামনে ‘সাধির’ নামে একটি বড় ঝিল রয়েছে। এ দিন সকালে দেখা যায়, কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভর্তি ওই ঝিলের জলে মাছ মরে ভাসছে। কিছু মাছ খাবি খাচ্ছে। মরা মাছ পচে গিয়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। বটানিক্যালে প্রাতর্ভ্রমণকারী সংগঠনের সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “গত বারের মতো এ বারও যাতে মরা মাছ বাজারে বিক্রি না হয়, তার জন্য প্রথমেই নিরাপত্তারক্ষীদের সাবধান করি। পাশাপাশি, গার্ডেন কর্তৃপক্ষকেও জানাই।” বিষয়টি জানার পরে কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ঝিলের কচুরিপানা সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়।
ঝিলে মাছ মরল কেন?
বটানিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগানে পুকুর ও ঝিল রয়েছে মোট ২৪টি। অতীতে একটি ঝিলের সঙ্গে অন্য ঝিল বা পুকুরের সংযোগ ছিল। গঙ্গায় জোয়ার এলে ওই সংযোগস্থলের স্লুইস গেট দিয়ে সেই জল ঢুকে পরিপুষ্ট রাখত ঝিল ও পুকুরগুলিকে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে স্লুইস গেটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন সেগুলি বন্ধ থাকায় গঙ্গার জল পুকুরে বা ঝিলে ঢুকতে পারে না। ফলে পদ্মপাতা, গুল্ম ও জলজ উদ্ভিদ মরে যেতে থাকে। তার উপরে দীর্ঘ দিন ঝিল ও পুকুর পরিষ্কার হয়নি বলেও গার্ডেন সূত্রের খবর। এ সব কারণেই ঝিলের জল দূষিত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে মাছ মারা গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ঝিল দূষণের কারণে একটা বিষয় উঠে এসেছিল বিভিন্ন কলকারখানার নোংরা জল ওই ঝিলে এসে পড়ার ফলেই সেই জল দূষিত হয়েছিল। কিন্তু ‘সাধির’ লেকের ক্ষেত্রে বাইরের নোংরা জল আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে সুভাষবাবুর অভিযোগ, ওই ঝিলের ধারে বটানিক্যালের কর্মীদের ঘর রয়েছে। সেখান থেকে বর্জ্য ও দর্শকদের ফেলা আবর্জনা ওই ঝিলের জলে এসে মিশত। তার জেরেই দীর্ঘ দিন সাফ না হওয়া ঝিলের জল দূষিত হয়ে উঠেছে। সুভাষবাবু বলেন, “শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যে অযোগ্য, ফের তার প্রমাণ মিলল। সোমবার আদালতে বিষয়টি জানাব।” |