বিপজ্জনক পারাপার
দুর্ভোগের ঘাট
খানে জেটি মানে নৌকা। তাতেই বাঁধা রয়েছে লঞ্চ। কাদা পেরিয়ে নৌকায় উঠতে হয়। সঙ্গে মোটরসাইকেল আর মালপত্র থাকলে খুবই অসুবিধা হয়। না, কোনও গ্রাম নয়, এটি হাওড়ার নাজিরগঞ্জের পোদরা ঘাটের ছবি। এর উল্টো দিকেই কলকাতার বিচালি ঘাট।
এই ঘাট থেকে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির বড় লঞ্চ চলে। তা ছাড়া দেশি নৌকাও চলে। আগে ভুটভুটি চলত। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, গত তিরিশ বছর ধরেই এমন অবস্থা। কিন্তু হেলদোল নেই হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি বা রাজ্য সরকারের। পুরনো দেশি নৌকাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী জেটি। সেই জেটিতেই কোনও ভাবে নোঙর করে তিন গুণ বড় লঞ্চ। যাত্রীদের উঠতে-নামতে হয় বিপদের ঝুঁকি নিয়ে।
হুগলি নদী সমবায় সূত্রের খবর, প্রতি দিন গড়ে এক হাজার যাত্রী এই ঘাট ব্যবহার করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ঘাটে স্থায়ী জেটি এবং গ্যাংওয়ের পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের কোনও ব্যবস্থা নেই। নিত্যযাত্রী শেখ সানাউল্লা বলেন, “আজ পর্যন্ত ওই ঘাটে কোনও আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। রাতে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ওঠানাম করতে হয়।”
কেন ঘাটটির এই অবস্থা?
পোদরা ঘাটের কাছেই বাড়ি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দারের। তিনিও মনে করেন ঘাটটির অবিলম্বে উন্নতি প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি স্থায়ী জেটিরও। এ জন্য তিনি হুগলি নদী জলপথ সমবায়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, যে সব ঘাটে জেটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে সেখান থেকে জেটি খুলে এনে ওই ঘাটে লাগাতে। শীতলবাবু বলেন, “অবিলম্বে ওই ঘাটের সংস্কার দরকার। ওই ঘাট থেকে সমবায়ের আয়ও বেড়েছে। আমি বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
যদিও হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বলেন, “সমবায়ের আর্থিক দুরবস্থার জন্য সব কিছু করা যাচ্ছে না। তবে অন্য জায়গা থেকে পন্টুন ও গ্যাংওয়ে ওখানে লাগানোর চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, ওই ঘাটের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য আগে রাস্তা বানাতে হবে। এ জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে রাস্তা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে শীতলবাবুর কাছে আবেদন করা হয়েছে।
জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার আরও উন্নতির জন্য ২০০৭-এ পাঁচটি বড় ইস্পাতের লঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। এ জন্য লঞ্চ পিছু প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে ধরা হয়েছিল। লঞ্চ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতিকে। সমবায় আবার নাজিরগঞ্জের এক লঞ্চ তৈরির সংস্থাকে সেগুলি তৈরি করতে দেয়।
হুগলি নদী জলপথ সমবায় সূত্রের খবর, অর্থাভাবের জন্যই গত কয়েক বছর ধরে তিনটি লঞ্চ প্রায় তৈরি অবস্থায় নাজিরগঞ্জের একটি কারখানায় পড়ে রয়েছে। টাকা না থাকায় বাকি কাজ করা যাচ্ছে না। তাই রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমকে লঞ্চগুলি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এগুলি দিতে পারলে নিগমের থেকে এক কোটি টাকা পাওয়া যাবে।
এই লঞ্চ তৈরি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগে ওই সময় হুগলি নদী জলপথ সমবায়ের চেয়ারম্যানের পদ থেকে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক সিপিএমের লগ্নদেব সিংহকে সরিয়ে দিয়েছিলেন সিপিএম জেলা নেতৃত্ব। এমনকী ২০১১-এ বিধানসভা নির্বাচনেও দল তাঁকে প্রার্থী করতে অস্বীকার করে। যদিও এর মধ্যে পাঁচটি লঞ্চের মধ্যে ৪টি লঞ্চের কাজ শুরু হয়ে যায়। একটি লঞ্চ সম্প্রতি ভূতল পরিবহণ নিগমের কাছে সরবরাহ করা হয়ে গিয়েছে। বাকি তিনটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ।
প্রণববাবু বলেন, “বাকি লঞ্চগুলির কাজ শেষ হলে অর্থাভাব কিছুটা কাটবে। ওই লঞ্চ তৈরি করতে গিয়ে আমাদের এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ধারও হয়ে গিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। তা ছাড়া লঞ্চগুলিও দিনের পর দিন জলে পড়ে থাকলে খারাপ হয়ে যাবে।”
এ ব্যাপারে ভূতল পরিবহণের এক কর্তা বলেন, “ওই সমবায়ের দাবি লঞ্চগুলির তৈরির খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই লঞ্চ পিছু গড়ে ২০ লক্ষ টাকা খরচ বাড়াতে হবে। যদিও মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে এখনও সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.