আপনার সাহায্যে...
তৃতীয় ব্যক্তি
চার-পাঁচ জন বন্ধু একসঙ্গে ক্যাফেতে এসেছে। কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না! প্রত্যেকে নিজের-নিজের মোবাইলে ব্যস্ত।
স্বামী-স্ত্রী গাড়ি করে যাচ্ছেন, দু’জনেই দু’টো বিচ্ছিন্ন পৃথিবীর মতো মোবাইলে মগ্ন।
আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছেন স্বামী-স্ত্রী। আত্মীয়টি মাঝেমধ্যেই আতিথ্য ভুলে কানে ফোন নিয়ে পনেরো-কুড়ি মিনিটের জন্য বাড়ির ভিতরে উধাও হয়ে যাচ্ছেন!
বায়োলজিক্যাল ক্লক বদলে গিয়েছে বয়স নির্বিশেষে বহু মানুষের। রাত দু’টোর সময় কম্পিউটরের সামনে বসছেন, ভোর ছ’টায় উঠে ঘুমোতে যাচ্ছেন। বেলা সাড়ে দশটায় ঘুম থেকে উঠে সোজা স্নান করতে চলে যাচ্ছেন। বাড়ির বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে কথা বলার ফুরসত নেই। পড়াশুনোতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ছেলেমেয়েরা । লাগাতার বকুনি দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
স্কুলের উঁচু ক্লাসের বা কলেজ-পড়ুয়াটির অবসরের গোটাটাই দখল করে রয়েছে হয় মোবাইল, নয় ইন্টারনেট। টেক্সট বা মিসড কলের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে সম্পর্কের অদ্ভুততর মাধ্যম। বিজয়ার প্রণাম থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা, অসুস্থ আত্মীয়ের খোঁজ নেওয়া সবই সারা হচ্ছে মোবাইলে।
মডেল: পায়েল ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোনের তুমুল সাম্রাজ্য। আর পাশাপাশি বহতা সেই সাম্রাজ্য নিয়ে সমালোচনা-আশঙ্কার সমান্তরাল অনর্গল স্রোত। মোবাইলের হেডফোন কানে গুঁজে কিংবা ইন্টারনেটে চোখ দিয়ে ‘ভার্চুয়াল-রিয়্যালিটি’তে হারিয়ে যাওয়া কি অসামাজিকতা নয়? ক্রমশ স্বার্থপর হতে থাকা পৃথিবীতে অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতায় কি আরও একা, আরও বন্ধুহীন হয়ে যাচ্ছি না আমরা? ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং’ কি নেহাত প্রহসন? এ ভাবে সামাজিক পরিমণ্ডলে আদৌ নিজেদের ছড়িয়ে দিতে পারছি আমরা, নাকি আরও বেশি অসামাজিক, একাসেরে হচ্ছি? আদতে সম্পর্ক জমাট বাঁধছে, নাকি বাঁধুনি আরও ঢিলে হচ্ছে? আমরা কি ক্রমশ খেই হারিয়ে ফেলছি ফাঁপা-অগভীর-বুদবুদের মতো ভাসমান অসংখ্য সম্পর্কের খিচুড়িতে?
প্রতিবাদীরা বলেন, এমন অবয়বহীন শখ বা ভাললাগা নিয়ে সমালোচনা, আশঙ্কা যুগযুগান্ত ধরে ছিল। আধুনিক প্রযুক্তিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির ধাক্কা সামাজিক জীবনে আগেও এসেছে। এক সময় কাঠগড়ায় উঠেছিল টেলিভিশন। ‘বোকা বাক্স’ বলে তাকে কটাক্ষ করা হয়েছে প্রচুর। তার পর সমালোচনার সামনে পড়েছে ভিডিয়ো, কেব্ল নেটওয়ার্ক। তা হলে আলাদা করে মোবাইল-ইন্টারনেটের দাপট স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির মতো মনে করার কারণ কী? তা ছাড়া, আজকাল কিছু নির্দিষ্ট পেশার ক্ষেত্রে তো এই দু’টির ব্যবহারই অপরিহার্য। সেখানে দোষারোপটা ঠিক চলে না।
সমাজতাত্ত্বিক আর মনোবিদেরা পাল্টা যুক্তি দেন ভয়ের জায়গাটা আসলে ‘টেকনোলজি অ্যাডিকশন’য়ের সামগ্রিক বাড়বাড়ন্তে। গণহারে ছড়াচ্ছে নেশাটা। দখল করে নিচ্ছে ১১ থেকে ৭১ সকলের জীবন। মুন্সী প্রেমচন্দের গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের কাহিনিচিত্র ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’। সেখানে দুই রইসজাদা মির্জা সাজ্জাদ আলি আর মির রোশন আলি-র দিন কাটে হরবখত বৈঠকখানায় বুঁদ হয়ে দাবা খেলে। খেলার নেশাটা এতটাই মাত্রাছাড়া যে তাঁদের সংসার ছারখার। ইংরেজ আগ্রাসনের মুখে রাজ্যপাটও ভেসে যাওয়ার মুখে।
আপত্তিটা এই লাগামরহিত নেশাতেই। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবিতে বিদেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া তিন বন্ধুর এক জন তাঁর অতি ব্যস্ত অন্য বন্ধুর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে ফেলে দেয়। আসলে সে বোঝাতে চায়, চারপাশে জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলোকে কিছুটা সময় দেওয়া কতটা জরুরি।
কিন্তু এই সত্যিটা বোঝে বা বুঝেও প্রয়োগ করতে পারে কত জন?
মনোবিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জনা সান্যাল একটা গল্প শোনাচ্ছিলেন। তাঁর চেম্বারে নামী স্কুলের ক্লাস টুয়েলভের এক পড়ুয়াকে নিয়ে এসেছেন বাবা-মা। ছেলেটির এক বান্ধবী রয়েছে। একই ক্লাসে পড়ে। দু’জনের মোবাইলে ২৪ ঘণ্টাই কল চালু থাকে! কেন? কারণ, কিছু ক্ষণের জন্য একে অন্যকে মোবাইলে যোগাযোগ করতে না-পারলে দু’জনেই নাকি অসম্ভব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে! তাই কল চালু রেখেই তারা প্রাত্যহিক কাজ করে। যেমন নিজের-নিজের ঘরে দুপুরে ও রাতের খাবার খায়। খেতে-খেতে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জানায় যে সে কী খাচ্ছে, কী দিয়ে ভাত মাখছে, এ বার গ্রাসটা তুলল, অন্যজনও সেটাই করে! অর্থাৎ, একটা সম্পর্ককে অস্বাভাবিক ভাবে মোবাইল মারফত ধরে রাখতে গিয়ে দু’জনেই মা-বাবা-আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গভীর, স্বাভাবিক সম্পর্ককে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলছে।
মনোবিদ মোহিত রণদীপের কাছে আবার পরামর্শ নিতে এসেছিলেন একাধিক মহিলা। দিবারাত্র তাঁদের স্বামীরা মোবাইলে বুঁদ হয়ে রয়েছেন। হয় ফিসফিস কথা, নয়তো অনবরত পিঁক-পিঁক এসএমএস। ওই মহিলারা নিশ্চিত, স্বামীরা পরকীয়া চালাচ্ছে। মুঠোফোনের বাড়তি সুবিধা হল, শুয়ে-বসে দিব্যি নিভৃতে কথা চালানো যায়। ফলে গোপন প্রেম জমে ভাল। আর একবার ‘ফোন-প্রেম’য়ে অভ্যাস হয়ে গেলে বাড়ির অন্যরা কী মনে করল, কোন মানসিক সঙ্কটে পড়ল, তাতে মোবাইলবাজদের কিছু যায়-আসে না।
তা ছাড়া, ইন্টারনেট বা মোবাইলের দুনিয়া থেকে কিছু ভয় ধরানো সমস্যা এসে সেঁধিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনে। প্রেমিকা প্রত্যাখ্যান করল, প্রতিশোধ নিতে তাঁর খোলামেলা ছবি, অন্তরঙ্গ কথোপকথন প্রেমিক উঠিয়ে দিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। অপমানে আত্মহত্যা করলেন প্রেমিকা। মোবাইলের নেশায় রাস্তা বা রেললাইন পার হতে গিয়েও খেয়াল থাকছে না। বাড়ির যে বড়রা ছোটদের এই সব ব্যবহার করতে বারণ করছেন, তাঁরা নিজেরাই তো এই নেশার মধ্যে ঢুকে রয়েছেন। তা হলে ছোটরা আর বার হবে কী করে?
নবনীতা দেবসেন বিষয়টাকে একটু অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেন। “যদি স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্কের কথাই বলেন, আমার তো মনে হয় অল্প একটু-আধটু ‘অধরা মাধুরী’র লীলাময় ব্রেক ভালই। নেশা না ছড়ালেই হল। আস্ত মানুষ সশরীরে জীবনে ঢুকে না পড়লেই হল।”
কিন্তু কথা হল, এই সীমাটা রাখতে পারে ক’জন? নবনীতার মন্তব্য, “চোখের সামনে উপস্থিত ব্যক্তির দিকে নজর না দিয়ে হাতের ফোনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ধ্যানস্থ, আর চালাক-চালাক কথার ভাবনাতেই শিবনেত্র হয়ে থাকা এতে কি রক্তমাংসের সম্পর্ক চিড় খাবে না? মনোযোগ না দিলে তো জগতে কোনও সম্পর্কই টেকে না। একটি গাছও মারা যায়।”
বীতশ্রদ্ধ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। বলেন, “বাচ্চারা খেলছে না। হয় কম্পিউটার নয়তো মোবাইলের চাবি টিপে যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে না। এত ব্যাকর-ব্যাকর কীসের? রেললাইনে কাটা পড়ছে মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে! এত মুগ্ধতা! সব কিছু ভুলে যাচ্ছে। সম্পর্কগুলোকে বুঝছে না, চিনছে না।”
লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার আবার ওঁর অফিসের সাম্প্রতিক একটা পিকনিকের কথা বললেন। সেখানে সহকর্মীদের অনেকের ছেলেমেয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে যারা টিনএজার তারা প্রায় প্রত্যেকেই গোটা দিন বাগানের এখানে-ওখানে ছিটকে গিয়ে মোবাইলে ডুবে রইল। কারও সঙ্গে কারও আলাপ-গল্পের বালাই নেই, আগ্রহও নেই। নিজেতেই মগ্ন।
তিলোত্তমা বলেন, “আজকাল বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে অনেক কিশোর-কিশোরী বিরক্ত হয়। মোবাইল হাতে অন্য ঘরে চলে যায় বা ইন্টারনেটে চ্যাটে বসে থাকে। পরিণত বয়স্কদের অনেকেও এই সিনড্রোমের শিকার।” খানিকটা থেমে তিলোত্তমার বক্তব্য, “আমার অনেক বন্ধু তো মোবাইল ছাড়া সামনাসামনি কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতে পারে আর সামনে এলেই চুপ। কথা খুঁজে পায় না। বুঝতে পারি না, ওরা কি দূরত্বে স্বতঃস্ফূর্ত, নাকি অদর্শনে স্বচ্ছন্দ?”
একটা সময় বন্ধুদের বাড়ি ছিল আড্ডা মারার প্রধান জায়গা। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই মা-বাবারা বন্ধুদের মুখ চিনতেন, তারা কে কী খেতে ভালবাসে জানতেন, রেঁধে খাওয়াতেন, তাদের গল্পে শরিক হতেন। মুঠোফোনের দুনিয়া মা-বাবাকে সেই আলাপের বৃত্ত থেকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়েছে বলে মত দিলেন সমাজতাত্ত্বিকদের অনেকেই। এর সঙ্গে জুটেছে ইন্টারনেট! চ্যাট, পর্নসাইট, বেটিং, ফেসবুক, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি গেম-এর জমকালো ব্যাপার-স্যাপার মাউসে ক্লিক করলেই হাজির।

আপনি কি ‘প্রযুক্তি-নেশাড়ু’
• বাড়ির লোক যদি আপনার মোবাইল বা ইন্টারনেটের ‘নেশা’ নিয়ে অভিযোগ শুরু করে
• যদি দেখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন কানে বা ইন্টারনেটে বসে কাটিয়ে দিচ্ছেন
• যত ক্ষণ ইন্টারনেটে দেবেন বলে ঠিক করেছেন প্রতিদিন যদি তার থেকে বেশি দিয়ে ফেলেন
• মোবাইলে বেশি কথা বলে বা ইন্টারনেটে বেশি ক্ষণ বসার জন্য যদি অফিসের কাজ বা পড়াশোনার ক্ষতি হয়
• যত ক্ষণ মোবাইলে বা ইন্টারনেটে আছেন আপনার মন ভাল, ফোন-কম্পিউটার অফ মানে আপনিও অফ
• মোবাইল খারাপ হলে বা নেটওয়ার্ক না এলে বা ইন্টারনেট না চললে যদি দিশেহারা লাগে
• যদি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারা বা বাইরে বেড়াতে যাওয়ার থেকে ফোনে কথা বা নেট সার্ফিং ভাল লাগে

শীর্ষেন্দু তো বুঝেই উঠতে পারেন না, “কী করে মানুষ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজের ব্যক্তিগত জীবন বিজ্ঞাপিত করেন! ছেলেমানুষি মনে হয় আমার, বিরক্ত লাগে।”
সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্র জানাচ্ছিলেন, সামাজিক বোধের ক্ষয় শুরু হয়েছে অনেক দিনই। যত দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির অগ্রগতি সেই অধঃপতনকে আরও ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করছে। সমাজতাত্ত্বিক-মনোবিদদের অনেকের মতে, জীবনে উত্তেজনা দরকার, নতুনত্ব দরকার। তাই অনেকে সারা দিন অফিসের ঝক্কি, টাকাপয়সার টানাটানি, বাড়ি ফিরে বাড়ির লোকেদের ঘ্যানর-ঘ্যানর থেকে স্রেফ নিজেকে তুলে অন্য জগতে নিয়ে ফেলতে ইন্টারনেটে যাবতীয় সত্তা গুঁজে দেন। হয়তো এটা স্বার্থপরতা বা দায়ত্বহীনতা। কিন্তু এই ভাবেই পারিপার্শ্বিককে অস্বীকার করে স্বেচ্ছায় অসামাজিক হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
আসলে প্রচুর মানুষ এখন ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’তে খুশি। অসংখ্য ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি গেম বেরিয়েছে। সেখানে মানুষ ভিন্ন নাম, ভিন্ন পেশার এক নতুন চরিত্র তৈরি করতে পারে। সেটাকেই ‘আসল আমি’ মনে করতে পারে। খেলার মধ্যেই সম্পর্ক স্থাপন করে, এমনকী বিয়েও করতে পারে।
মজা হল, এই সব সম্পর্কের কোনও দায় নেই, কোনও চাপ নেই। গোটাটাই ফুর্তি, উত্তেজনা। ফোনে, চ্যাটে বা মোবাইল টেক্সটে ক্ষণিকের জন্য মিষ্টি করে যত্নের কথা বলে, আদর দেখালেই কাজ চলে।
নবনীতা কিন্তু ইন্টারনেটের ভাল-মন্দ দু’টো দিকই খুঁজে পান। বলেন, “অগুন্তি ফালতু ‘বন্ধুত্ব’ গজিয়ে উঠছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংগুলির মাধ্যমে, রাত্তির জেগে ঘুম নষ্ট, স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্ক টলোমলো। এগুলো কম সর্বনেশে নেশা নয়। তবে এর ভাল দিকও আছে। হারানো বন্ধুদের পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে খুঁজে পাওয়া। মিশর, টিউনিশিয়া, ইয়েমেন-এর বিপ্লবগুলো ঘটালো তো ফেসবুক। মায়া চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিদেশে মারা যাওয়া কন্যার একমাত্র সন্তানের খোঁজ পেলেন ইন্টারনেটের কল্যাণে, পঁচিশ বছর খোঁজার পরে।”
কবীর সুমন আবার ভেবেছেন একেবারে অন্য ভাবে। ঘোরতর মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট-পন্থী তিনি। সোজাসাপ্টা যুক্তি এই ‘স্টুপিড রাজনীতি’, রাজনৈতিক দলগুলির ঝগড়াঝাঁটি, পারিবারিক জীবনে এত মলিনতা, ব্যক্তিগত কেচ্ছা, কে কার সঙ্গে শুল, কে কার সঙ্গে প্রেম করলএই সব ভুলতে মানুষ যদি মোবাইল বা ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকেন, তা হলে ক্ষতি কী? যখন সোনি-র প্রথম ওয়াকম্যান বাজারে এল তখনও স্লোগান উঠেছিল ‘মি সোসাইটি’ অর্থাৎ আমিই সমাজ। কারণ, ওয়্যাকম্যানের তার কানে গুঁজে শুনতে হত। তাতে মনে হত, আশপাশের অন্য মানুষ সম্পর্কে তাঁরা চিন্তারহিত।
গায়ক-রাজনীতিক বলে চলেন, “প্রেম-বিয়ে এই সব নানা সম্পর্ককে রি-ডিফাইন করা দরকার। এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে মানুষের পরিচয় হচ্ছে। তার ফলে এক জনকে বেশি দিন ভাল লাগছে না। আগে অপশন ছিল না, এখন আছে। তাই সম্পর্কগুলো দাঁড়াচ্ছে না। এটা তো মানতে হবে যে, পারস্পরিক আকর্ষণ কমলেই তবেই মানুষ তৃতীয় কোনও বিষয়ে মন দেয়। সম্পর্কে ফাঁক না থাকলে তৃতীয় কোনও ভাললাগা ঢুকবে কী করে শুনি?”
অখ্যাত এক লেখকের লেখা একটা লাইন এখন প্রায় প্রবাদে পরিণত ‘বিশ্বাসহীন সম্পর্ক আর নেটওয়ার্কবিহীন মোবাইল ফোন একই রকম। দু’টো নিয়েই শুধু খেলা করা যায়।’ কিন্তু এর পরবর্তী সম্ভাব্য অবস্থাটা গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইলে নেটওয়ার্ক ফিরে এলে সেই মোবাইল দিয়ে আবার যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। কিন্তু কোনও বায়বীয় ভাললাগার জন্য কোনও রক্তমাংসের সম্পর্ক এক বার অবহেলিত হলে তা আবার ফিরে পাওয়া যায় কি? মোবাইল-ইন্টারনেটে মগ্ন দুনিয়ার কী মত?

মুক্তির উপায়
• মনোবিদ বা কাউন্সেলারের সাহায্য নেওয়া
• সেল্ফ কাউন্সেলিং, নিজেকে নিজে ক্রমাগত বলে যাওয়া ‘এই নেশা তোমাকে ছাড়তেই হবে। সংযত হতে হবে’
• বাড়ির লোকের সাহায্য। মনোবিদেরা অনেক সময় পারিবারিক কাউন্সেলিং করেন
• এটা ‘প্লেজার সিকিং বিহেভিয়ার’। মদের নেশা থেকে কম নয়। তাই পরের পর কাউন্সেলিং করে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নেশাসক্তকে সচেতন করতে হবে
• পরিবারের লোক, আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, প্রথম-প্রথম জোর করে তাঁদের বাড়ি যাওয়া, বাইরে বেড়াতে যাওয়া
• বেড়ানোর সময় বা পরিবারের সঙ্গে থাকার সময় মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার যতটুকু না করলে নয়, ততটুকু করা
• বেশি কম্পিউটার গেম খেললে অনেকের অ্যাটেনশন প্রবলেম হয়। কারণ মস্তিষ্কের তখন বাকি সব কিছুকে খুব ধীর, স্ট্যাটিক বলে মনে হয়। একঘেয়ে লাগে। এর থেকে বার হওয়ার জন্য টানা কাউন্সেলিং দরকার
পরামর্শ: মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল ও মোহিত রণদীপ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.