সম্পাদকীয় ২...
কলহ স্বর্গ, কলহ ধর্ম
ই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন এক সময় কোনও না কোনও ভাবে সংঘটিত হইয়া যাইবে। কিন্তু বিষয়টি লইয়া পশ্চিমবঙ্গে যে প্রলম্বিত কুনাট্য রচিত হইয়াছে, তাহা ইতিহাস হইতে মুছিবে না। গণতন্ত্রের রূপায়ণ লইয়া মাসাধিক কাল ব্যাপী তীব্র জেদাজেদি ও সংঘর্ষ বলিয়া দিল, এ রাজ্যের শাসক-সমাজের মানসজগত্‌ এখনও গণতন্ত্রের রীতিপদ্ধতিগুলির যোগ্য হয় নাই, রাস্তার তন্ত্রেই আটকাইয়া রহিয়াছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আয়োজন লইয়া রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা বিশ্লেষণের পার্থক্য থাকিতেই পারে। গণতন্ত্রের অর্থ তো সকলের-এক-মত-তন্ত্র নহে! কিন্তু গণতন্ত্রের অর্থ: ভিন্ন মত, ভিন্ন দৃষ্টির মধ্যেও যাহাতে বিবিধ পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বমান্য সিদ্ধান্তে আসিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করা। সেই পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ ডাহা ফেল। ইতিপূর্বে অন্য রাজ্যেও এই সংকট দেখা দিয়াছে, কিছু ক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থও হইতে হইয়াছে। কিন্তু এমন ভয়ানক ধুন্ধুমার লড়াই কলহপ্রিয় ভারতেও বিরল।
সংবিধান-মতে, রাজ্য সরকারের কর্তব্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ‘আলোচনার ভিত্তিতে’ পঞ্চায়েত ভোটের নোটিস জারি করা। আলোচনা বলিতে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী বোঝায়, সেই বিষয়ে সংবিধানে কিছু অস্পষ্টতা আছে, যেমন অন্য নানা বিষয়েই আছে। সংবিধান বা আইন সব কিছুই স্পষ্ট করিয়া দেয় না, ষোলো আনা স্পষ্টতা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চালকরা সুষ্ঠু ভাবে কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যটি মাথায় রাখিয়া সেই অনুসারে আলোচনার পরিধি ও রীতি নির্ধারণ করিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। যে কোনও ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ আলোচনার একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত মানসিক গ্রহিষ্ণুতা। অপর পক্ষের কথা শুনিব না, মানিব না, ছাড়িব না: এই ভাবে আলোচনাও হয় না, গণতন্ত্রও হয় না। আলোচনার একটি আবশ্যিক পদ্ধতিও আছে: সামনাসামনি বসিয়া অপর পক্ষকে সম্মান দেখাইয়া, তাহার যথাযোগ্য স্থান দিয়া তবে সমস্যার সমাধান সন্ধান। পশ্চিমবঙ্গের লড়াই-খ্যাপা শাসকরা সমাধান লইয়া মাথা ঘামান বলিয়া মনে হয় না, তাঁহাদের মন্ত্র: ফলের প্রত্যাশা না করিয়া কলহ করিয়া যাও। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সহিত আলোচনায় না বসিবার প্রবণতা পূর্ববর্তী জমানাতেও দেখা গিয়াছে। কিন্তু বর্তমান শাসকরা সেই প্রবণতাকে চরমে লইয়া গিয়াছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন বিরোধী দল নহে, সরকারি দায়ভারপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন আয়োজন করিয়া রাজ্যের গণতন্ত্রকে সচল রাখাই তাহার কাজ। সুতরাং, নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের সহযোগী। অথচ রাজ্য সরকার এই সহযোগীকে প্রতিপক্ষে পরিণত করিয়া কুরুক্ষেত্র বাধাইয়া তুলিয়াছেন। সস্তা অহঙ্কার এবং অবান্তর জেদ ভিন্ন ইহার দ্বিতীয় কোনও কারণ থাকিতে পারে না। এই অনমনীয় অহমিকা আলোচনার সংস্কৃতির মূলে বিষসিঞ্চন করে, গণতন্ত্রের কাঠামোর উপর অহেতুক কুঠারাঘাত করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে সেই কুঠার প্রবল হইতে প্রবলতর হইতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.